×
  • প্রকাশিত : ২০২৪-০৮-১৩
  • ৩৮ বার পঠিত
২০০৮ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত ১৫ বছরে ২৪টি বড় ব্যাংক কেলেঙ্কারিতে প্রায় ৯২ হাজার ২৬১ কোটি টাকা আত্মসাৎ হয়েছে বলে জানিয়েছে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)। সিপিডি বলছে, আত্মসাৎ করা অর্থের পরিমাণ ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জাতীয় বাজেটের ১২ শতাংশ বা জিডিপির ২ শতাংশের সমান।

গতকাল সোমবার ‘ব্যাংকিং খাতে সুশাসন ফিরিয়ে আনতে করণীয়’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য তুলে ধরেন সংস্থাটির নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন।

তিনি বলেন, বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে শক্তিশালী করতে হবে, বাংলাদেশ ব্যাংকের স্বাধীনতা সমুন্নত রাখতে হবে এবং সময়মতো তথ্যের সত্যতা ও সহজলভ্যতা নিশ্চিত করতে হবে।

সে জন্য সংস্থাটি ব্যাংক খাতের স্বচ্ছতা আনতে একটি সুনির্দিষ্ট, সময় উপযোগী, স্বচ্ছ, নিরপেক্ষ, অন্তর্ভুক্তিমূলক ও স্বাধীন ব্যাংকিং কমিশন গঠনের সুপারিশ করেছে।
ফাহমিদা খাতুন বলেন, আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে রাজনৈতিকভাবে লাইসেন্স পাওয়া তৃতীয় ও চতুর্থ প্রজন্মের কিছু ব্যাংক মৃতপ্রায়। এদের চলনশক্তি নেই। এদের জনগণের করের টাকা দিয়ে বাঁচিয়ে রাখা হয়েছে।

এরা মরে যাক। এতে শুধু অর্থের অপচয় হচ্ছে। বন্ধ হয়ে যাক এসব ব্যাংক। এ ছাড়া কিছু ব্যাংকের পারফরম্যান্স খারাপ, আরেকটু ধাক্কা লাগলেই মরে যাবে।

এগুলোর পর্ষদ ও ব্যবস্থাপনা পরিবর্তন করে পরিচালনার চেষ্টা করে দেখা যেতে পারে।
অন্যদের মধ্যে সংস্থাটির সম্মাননীয় ফেলো মোস্তাফিজুর রহমান এবং গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বক্তব্য দেন। সংবাদ সম্মেলনের শুরুতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে হতাহত ব্যক্তিদের প্রতি শ্রদ্ধা এবং তাদের পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানানো হয়।

ব্যাংক খাতের সমস্যা চিহ্নিত ও সমাধান করতে ব্যাংক কমিশন গঠন করার সুপারিশ করে সিপিডি। সংস্থাটি বলেছে, ব্যাংক খাতে দ্বৈত প্রশাসন চলছে।

বন্ধ করে দেওয়া উচিত অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ। এ ছাড়া কোনো ধরনের বিবেচনা ছাড়া লাইসেন্স দেওয়ার সংস্কৃতিও বন্ধ করতে হবে।
সিপিডি বলেছে, চট্টগ্রামের একটি গ্রুপের হাতেই সাতটি ব্যাংক। গ্রুপটি একাই ইসলামী ব্যাংক থেকে ৩০ হাজার কোটি টাকা নিয়েছে। একসময় ইসলামী ব্যাংক ভালো অবস্থানে ছিল। দখলের পর তা-ও মুমূর্ষু হয়ে গেছে। এ ছাড়া একক গ্রাহকের জন্য ঋণসীমা নীতি লঙ্ঘন করে জনতা ব্যাংক এননট্যাক্স গ্রুপকে দিয়েছে ১০ হাজার কোটি টাকা। এভাবে একক গোষ্ঠী যদি এত বেশি পায়, অন্য গ্রাহকরা  কী পাবে?

বাংলাদেশ ব্যাংকের স্বাধীনতা নিয়ে ফাহমিদা খাতুন বলেন, এমন না যে তাদের স্বাধীনতা নেই; তারা এটা ব্যবহার করছে না। বাংলাদেশ ব্যাংক বরং বিশেষ গোষ্ঠীর স্বার্থের কথা চিন্তা করে নীতিমালা করেছে। দুই বছর ধরে দেশের মানুষ উচ্চ মূল্যস্ফীতির কবলে। দরকার ছিল সুদহার বাড়িয়ে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের পদক্ষেপ নেওয়া। কিন্তু বিশেষ ব্যাবসায়িক গোষ্ঠীর যাতে সুবিধা হয়, সে জন্য সুদহার বাড়ায়নি বাংলাদেশ ব্যাংক।

আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ বন্ধ হয়ে গেলে বিভাগটির আওতায় থাকা ব্যাংক ও অন্য প্রতিষ্ঠানগুলোর পর্ষদ নিয়োগ দেওয়াসহ অন্যান্য কাজ তাহলে কে করবে—এমন প্রশ্নের জবাবে ফাহমিদা খাতুন বলেন, অর্থ বিভাগ করবে।

সিপিডি জানায়, গভর্নর ও ডেপুটি গভর্নর নিয়োগ প্রক্রিয়ায় সমস্যা আছে। এসব চেয়ারে মূলত দলীয় লোককেই নিয়োগ দেওয়া হয়। তাই সরকার পরিবর্তন হলে গভর্নরকে লুকিয়ে থাকতে হয়ে। গভর্নরের সৎসাহস থাকলে সরকার পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে তাঁকে লুকিয়ে থাকতে হতো না। রাজনৈতিক বা গোষ্ঠী শক্তির চাপ থাকলে এত দিন কেন কিছু বলেননি? তাদের স্বার্থ পূরণ করার জন্যই এখন ব্যাংক খাতের খেলাপি ঋণের পরিমাণ এক লাখ ৮২ হাজার ২৯৫ কোটি টাকা। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের দুর্বলতার কারণেই ২০১৬ সালের রিজার্ভ থেকে অর্থ চুরির তদন্ত রিপোর্ট প্রকাশের তারিখ ৭৯ বার পেছানো হয়েছে। এখন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ও ডেপুটি গভর্নর যেভাবে নিয়োগ দেওয়া হয়, তা ২০০৩ সালের ব্যাংক কম্পানি আইনের সঙ্গে সাংঘর্ষিক।

গবেষণা সংস্থাটির দাবি, বড় গ্রাহক এবং ইচ্ছাকৃত খেলাপির তালিকা নিয়মিত প্রকাশ করতে হবে।

নিউজটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর..
ফেসবুকে আমরা...
ক্যালেন্ডার...

Sun
Mon
Tue
Wed
Thu
Fri
Sat