×
  • প্রকাশিত : ২০২২-০৫-১৪
  • ৪১ বার পঠিত
কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে কোমর বেঁধে নামার ইঙ্গিত দিচ্ছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। সাধারণত ভোটের কয়েক দিন আগে নির্বাচনী এলাকায় বাড়তি আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনী মোতায়েন করা হয়। এবার এক মাস আগে আগামীকাল রবিবার থেকে মোতায়েন করা হচ্ছে বিজিবি। গত বৃহস্পতিবার মাঠে নামানো হয়েছে তিনজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটকে।


ভোট দেওয়ার গোপন কক্ষ বাদে প্রতিটি ভোটকেন্দ্রে ও কক্ষে সিসি ক্যামেরাও স্থাপন করতে যাচ্ছে কমিশন।
দায়িত্ব নেওয়ার পর কুমিল্লা সিটি করপোরেশন (কুসিক) নির্বাচন হতে যাচ্ছে নতুন ইসির প্রথম পরীক্ষা। প্রস্তুতি দেখে মনে হচ্ছে, কমিশন এই পরীক্ষায় ভালোভাবে উত্তীর্ণ হতে চায়। রিটার্নিং কর্মকর্তাদের কাছে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার সময় যাতে কোনো শোডাউন না হয় এবং নির্বাচনী আচরণবিধি kalerkanthoকঠোরভাবে মানা হয়, তা নিশ্চিত করতেও স্থানীয় পর্যায়ে নির্দেশনা দিয়েছে কমিশন।

রিটার্নিং কর্মকর্তা জানিয়েছেন, নির্বাচনী তফসিল ঘোষণার পর ২৬ এপ্রিল থেকে ১০ মে পর্যন্ত আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী কুমিল্লা সিটি করপোরেশন এলাকায় ২৩৭টি মোটরসাইকেল আটক করেছে। মামলা দিয়ে ছয় লাখ ৩০ হাজার টাকা জরিমানা আদায়ও করেছে। নির্বাচন সামনে রেখেই এই অভিযান চলছে।   

তবে ক্ষমতাসীন দলের বাইরে প্রার্থীদের অভিযোগ, বিশেষ অভিযানের নামে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী তাঁদের নেতাকর্মীদের নানাভাবে হয়রানি করছে। কুসিক নির্বাচনে ভোট গ্রহণ করা হবে আগামী ১৫ জুন।

নির্বাচন কমিশনার মো. আলমগীর গতকাল শুক্রবার কালের কণ্ঠকে বলেন, কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচন অবাধ,  সুষ্ঠু  ও নিরপেক্ষ করতে নির্বাচনী আইন অনুসারে সব ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সেই সঙ্গে অতিরিক্ত কিছু ব্যবস্থা নেওয়ারও পরিকল্পনা আছে। আচরণবিধির ব্যাপারে কোনো রকম শিথিলতা বরদাশত করা হবে না। প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র দাখিলের সময় কেউ যাতে শোডাউন করতে না পারে, তার জন্য আগে থেকে বিজিবিসহ অন্যান্য আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী মোতায়েন রাখা হচ্ছে। এরই মধ্যে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটও নিয়োগ দেওয়া হয়েছে এবং তাঁরা কাজ শুরু করেছেন। প্রার্থিতা চূড়ান্ত হওয়ার পর প্রধান নির্বাচন কমিশনার কুমিল্লায় যাবেন এবং সেখানে সব প্রার্থীর সঙ্গে বৈঠক করবেন।   

কমিশনার মো. আলমগীর বলেন, প্রতিটি ভোটকক্ষে ও ভোটকেন্দ্রে সিসি ক্যামেরা স্থাপন করতে কমিশন নীতিগতভাবে সিদ্ধান্ত নিয়েছে। একজন পোলিং কর্মকর্তা তাঁর চেয়ারে বসে যেভাবে সব কিছু পর্যবেক্ষণ করেন, সিসি ক্যামেরার মাধ্যমেও সেভাবেই পর্যবেক্ষণ করা হবে এবং সব ভিডিও ফুটেজ সংরক্ষণ ও পর্যালোচনা করা হবে। কোনো কেন্দ্র সম্পর্কে অভিযোগ পাওয়া গেলে সিসি ক্যামেরার ভিডিও ফুটেজ দেখে অভিযোগের সত্যতা যাচাই করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ঢাকায় নির্বাচন ভবনে ওই সব সিসি ক্যামেরার সংযোগ রাখা যায় কি না, তার সম্ভাব্যতাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। নির্বাচন কমিশনের আইডিয়া প্রকল্পের পরিচালককে প্রধান করে এ বিষয়ে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটি এ নিয়ে কাজ করছে।

সরকারি দলের বাইরের প্রার্থীদের অভিযোগ, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী বিশেষ অভিযানের নামে তাঁদের কর্মীদের হয়রানি করছে। এ বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে মো. আলমগীর বলেন, ‘নির্বাচন কমিশনে কেউ এ ধরনের অভিযোগ করলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ’

প্রতিটি ভোটকক্ষে ও ভোটকেন্দ্রে সিসি ক্যামেরা স্থাপনের বিষয়ে জানতে চাইলে আইডিয়া প্রকল্পের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আবুল কাশেম মো. ফজলুল কাদের গতকাল কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘এটি সম্ভব। আমরা এ বিষয়ে দু-এক দিনের মধ্যে নির্বাচন কমিশনে একটি প্রেজেন্টেশন দিতে যাচ্ছি। ’ তিনি আরো বলেন, ‘আমাদের হিসাবে কুমিল্লায় মোট ৮৫০টি সিসি ক্যামেরার প্রয়োজন কবে। কমিশন এসব সিসি ক্যামেরা কেনার বদলে আউটসোর্সিং করে সংগ্রহ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। কারণ এগুলো ব্যবহার করে পরে সংরক্ষণে রাখার বিষয়টিও জটিল। আমরা এ বিষয়ে সরবরাহকারী বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে আলোচনা করছি। ’ 

ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আবুল কাশেম মো. ফজলুল কাদের বলেন, কুমিল্লা সিটির ভোটকক্ষ ও ভোটকেন্দ্রগুলোতে স্থাপন করা সিসি ক্যামেরার সংযোগ নির্বাচন ভবনে সব নির্বাচন কমিশনারের কক্ষেও রাখা হবে। কমিশনাররা ঢাকায় বসেই ভোটের পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করতে পারবেন। পরিকল্পনা রয়েছে, ভোটকেন্দ্র ও ভোটকক্ষগুলোতে মোট চার দিন সিসি ক্যামেরা রাখার।

কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. শাহেদুন্নবী চৌধুরী বলেন, ‘কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মোট ভোটকেন্দ্র ১০৫টি আর ভোটকক্ষ ৬৪০টি। সে ক্ষেত্রে ৭৪৫টি সিসি ক্যামেরার প্রয়োজন হবে। এর সঙ্গে কেন্দ্রে বিশেষ অতিরিক্ত সিসি ক্যামেরা রাখা হতে পারে বলে শুনেছি। ’

নির্বাচনী এলাকার পরিস্থিতি : গত ২৫ এপ্রিল কুসিক নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা পর থেকেই আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে বিশেষ অভিযান পরিচালনা শুরু করে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী। নাশকতা ঠেকাতে নগরীর গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে পুলিশের তল্লাশি অভিযান জোরদার করা হয়েছে। বিশেষ করে লাইসেন্সবিহীন মোটরসাইকেলের বিরুদ্ধে পুলিশকে বেশি তৎপর হতে দেখা গেছে। অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্রসহ বেশ কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ ও র‌্যাব।

মেয়র পদে গতকাল দলীয় মনোনয়ন চূড়ান্ত করেছে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ। বিএনপি দলীয়ভাবে এই নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে না। তবে এরই মধ্যে বর্তমান সিটি মেয়রসহ দুজন বিএনপিপন্থী সম্ভাব্য মেয়র প্রার্থী মাঠে নেমেছেন। তাঁরা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে রিটার্নিং কর্মকর্তার দপ্তর থেকে মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন। গত ৮ মে বর্তমান মেয়র ও কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক মো. মনিরুল হক সাক্কুর পক্ষে মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেন তাঁর পরিবারের সদস্য ও দলীয় নেতাকর্মীরা। একই দিন কুমিল্লা মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি নিজাম উদ্দিন কায়সারের পক্ষে মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেন দলের নেতাকর্মীরা।

মেয়র পদে এ দুজন ছাড়া ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মো. রাশেদুল ইসলাম, জাতীয় পার্টির মামুনুর রশীদ ও সম্ভাব্য স্বতন্ত্র প্রার্থী কামরুল আহসান বাবুল মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন।

নিজাম উদ্দিন কায়সার নির্বাচনে সুষ্ঠু পরিবেশ নিয়ে অভিযোগ তুলেছেন। কায়সারের দাবি, প্রতিদিন রাতেই তাঁর নেতাকর্মীদের বাড়িতে পুলিশ হয়রানি করছে। কোনো অপরাধ ছাড়াই তাঁর দলের একজন নেতাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

তবে নির্বাচনের পরিবেশ নিয়ে এখনো কোনো সমস্যা দেখছেন না বিএনপি নেতা ও মেয়র মনিরুল হক সাক্কু। তিনি আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর সদস্যদের বিশেষ অভিযানকে স্বাগত জানিয়েছেন।

হয়রানির অভিযোগ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. শাহেদুন্নবী চৌধুরী বলেন, ‘এখন পর্যন্ত আমি কোনো প্রার্থীর কাছ থেকে এমন অভিযোগ পাইনি। লিখিত অভিযোগ পেলে অবশ্যই সেটি তদন্ত করে দেখা হবে। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর সদস্যরা তৎপর সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ বজায় রাখার জন্য, কাউকে হয়রানির জন্য নয়। আমরা এসব বিষয়ে সতর্ক আছি। ’

শাহেদুন্নবী চৌধুরী বলেন, সম্ভাব্য কমিশনার প্রার্থীদের কারো কারো অভিযোগ, প্রার্থিতা চূড়ান্ত হওয়ার আগেই কেউ কেউ নির্বাচনী প্রচার শুরু করে দিয়েছেন। এসব অভিযোগে পাঁচজন সম্ভাব্য প্রার্থীকে কারণ জানাতে বলা হয়েছে। তাঁরা এর জবাবও দিয়েছেন।

জানতে চাইলে কুমিল্লার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) এম তানভীর আহমেদ বলেন, ‘শান্তিপূর্ণ পরিবেশে নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য আমরা তৎপর। নগরীতে শতভাগ সুষ্ঠু ভোটের পরিবেশ রয়েছে। পুলিশ অন্যায়ভাবে কাউকে হয়রানি করছে না। ’      

গত ২৫ এপ্রিল কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হয়। তফসিল অনুযায়ী রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ দিন ১৭ মে। মনোনয়নপত্র বাছাই ১৯ মে এবং প্রত্যাহারের শেষ সময় ২৬ মে। প্রতীক বরাদ্দ ২৭ মে এবং ভোটগ্রহণ ১৫ জুন। সর্বশেষ ২০১৭ সালে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে বিএনপি নেতা মনিরুল হক সাক্কু দ্বিতীয়বারের মতো কুসিকের মেয়র নির্বাচিত হয়েছিলেন।

নিউজটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর..
ফেসবুকে আমরা...
ক্যালেন্ডার...

Sun
Mon
Tue
Wed
Thu
Fri
Sat