×
  • প্রকাশিত : ২০২৪-০৮-০৮
  • ৫৭ বার পঠিত
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে গত ২০ দিনে ১৮৫ জন নিহত হওয়ার তথ্য পাওয়া গেছে। ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগ ও মর্গের নিবন্ধন সূত্রে এ তথ্য জানা যায়। এর মধ্যে ৪৬ জনের মরদেহ রাস্তায় পড়ে থাকতে দেখে হাসপাতালে নিয়ে আসে পথচারীরা। এসব মরদেহ গুলিবিদ্ধ অবস্থায় ছিল।

গত মঙ্গলবার রাত ৮টা পর্যন্ত হাসপাতালের জরুরি বিভাগে ২১ জনের মরদেহ আসে। এর মধ্যে সাতজনের পরিচয় মেলেনি। উত্তরা থেকে তিনজন, যাত্রাবাড়ী থেকে দুজন, মিরপুর ও হাতিরঝিল এলাকা থেকে একজনের মরদেহ আনা হয়। হাতিরঝিলের মধুবাগ ব্রিজের ওপর পড়ে থাকা একজনের মরদেহ নিয়ে আসেন ওই এলাকার বাসিন্দা ইব্রাহিম।

কালের কণ্ঠকে তিনি বলেন, ‘গতকাল থেকে তিনটি মরদেহের মধ্যে দুটি ব্রিজের ওপর এবং একটি ব্রিজের নিচে পড়ে ছিল। সকালে দুজনের মরদেহ স্বজনরা এসে নিয়ে যান। অন্যজনের মরদেহ হাসপাতালে নিয়ে যাই।’

মিরপুর-১০ নম্বর থেকে একজন মরদেহ নিয়ে আসা তপু সরকার কালের কণ্ঠকে বলেন, এলাকায় গুলিবিদ্ধ একজনের মরদেহ রাস্তায় পড়ে থাকতে দেখে পথচারীরা ড. আজমল হাসপাতালে নিয়ে আসে।

হাসপাতালে তিন দিন রাখার পরও কোনো পরিচয় জানা যায়নি। অবশেষে ওই হাসপাতাল থেকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়।
ঢাকা মেডিক্যালের মর্গের নিবন্ধন খাতায় এসব মরদেহের নাম-ঠিকানার জায়গায় লেখা রয়েছে ‘অজানা’। মর্গ সূত্র জানায়, মর্গে অনেক মরদেহ তিন-চার দিন থাকার পর স্বজনরা এসে শনাক্ত করেছেন। তাদের পরিচয় পরে লিখে রাখছে তারা।

১০ দিন অপেক্ষা করেও যেসব মরদেহের পরিচয় পাওয়া যায়নি, তাদের ডিএনএ পরীক্ষা শেষে আঞ্জুমান মুফিদুল ইসলামকে দেওয়া হয়েছে। মর্গে এখনো পরিচয়হীন অন্তত ১০ জনের মরদেহ রয়েছে। আটজনের মরদেহ দেওয়া হয়েছে আঞ্জুমান মুফিদুল ইসলামকে।
গত মঙ্গলবার হাসপাতালটির জরুরি বিভাগ, পর্যবেক্ষণ কক্ষ, এক্স-রে কক্ষ, জরুরি অপারেশন কক্ষের চিকিৎসক, নার্সসহ অন্তত ১০ জন স্বাস্থ্যকর্মীর সঙ্গে কথা হয় কালের কণ্ঠ’র। ঠিক কত মরদেহ ময়নাতদন্ত ছাড়াই নিয়ে যাওয়া হয়েছে—এ বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কোনো পরিসংখ্যান তাঁদের কাছে পাওয়া যায়নি। তবে তাঁদের বেশির ভাগই একটি কথা বলেছেন, হাসপাতাল মর্গের যে হিসাব, তার প্রায় দ্বিগুণ মানুষ এসেছে মৃত অবস্থায়। তাঁদের বেশির ভাগই গুলিতে নিহত। অনেকে জরুরি বিভাগে এসে যখন জেনেছেন যে আহত ব্যক্তি মারা গেছেন, সঙ্গে সঙ্গে মরদেহ নিয়ে চলে গেছেন। তাঁদের কারো হিসাব রাখা হয়নি।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক হাসপাতাল মর্গের একাধিক কর্মচারী কালের কণ্ঠকে বলেন, সংঘাত-সহিংসতাসহ যেকোনো অস্বাভাবিক মৃত্যুর ঘটনায় বাংলাদেশের প্রচলিত আইনে ময়নাতদন্ত করার বিধান রয়েছে। সম্প্রতি কোটা আন্দোলন ঘিরে হাসপাতালে মৃত অবস্থায় যাঁরা এসেছেন কিংবা চিকিৎসাধীন অবস্থায় যারা মারা গেছেন, তাঁদের একটি বড় অংশের ময়নাতদন্ত হয়নি। অনেকে মৃতের সনদ ছাড়াই চলে গেছেন।

ফরেনসিক বিশেষজ্ঞ ও শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজের ভাইস প্রিন্সিপাল ডা. সোহেল মাহমুদ কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘সুরতহাল রিপোর্ট প্রস্তুত করে পুলিশ আমাদের কাছে ময়নাতদন্তের জন্য মৃতদেহ পাঠায়। তারা কিছু তথ্য জানতে চায়, যেমন মৃত্যুর কারণ, কত ঘণ্টা আগে মারা গেছে, হত্যায় কী অস্ত্র ব্যবহার করা হয়েছে—এসব। এরপর রিপোর্টের ভিত্তিতে পুলিশ তাদের তদন্ত করে। কোর্টে এই রিপোর্ট এভিডেন্স হিসেবে ব্যবহৃত হয়।’

ডা. সোহেল মাহমুদ বলেন, ‘ময়নাতদন্ত করে আমরা প্রথমত মৃতের পরিচয় জানতে পারি, মৃত্যুর ধরন জানতে পারি। যেমন কিভাবে মারা গেছে, কোন ধরনের অস্ত্র ব্যবহার করা হয়েছে। এ ছাড়া হত্যাকারীর সম্পর্কে তথ্য পাওয়া যায়। যেমন হত্যাকারী পেশাদার কি না।’

ফরেনসিক বিশেষজ্ঞ আরো জানান, লাশ শনাক্তের কাজ করে পুলিশ। প্রথমে প্রচলিত ম্যানুয়াল নিয়মে। চেহারা স্পষ্ট চেনা না গেলে, অজ্ঞাতপরিচয় লাশের আলামত হিসেবে মোবাইল ফোন, হাতের আংটি, জন্মদাগ, গায়ের তিল, শরীরের বিশেষ কোনো দাগ বা চিহ্ন এসব দেখে আত্মীয়-স্বজন লাশ শনাক্ত করে। পোশাক-পরিচ্ছদ দেখেও লাশ শনাক্ত করা হয়। দেহের গঠনও অনেক সময় লাশ শনাক্তে কাজে লাগে। কিন্তু চেনাই যাচ্ছে না, কোনোভাবেই শনাক্ত হচ্ছে না—এমন ক্ষেত্রে ফরেনসিক পরীক্ষা লাগে।

লাশ শনাক্তে পিবিআই ফিঙ্গার প্রিন্ট আইডেন্টিফিকেশন অ্যান্ড ভেরিফিকেশন সিস্টেম (এফআইভিইএস) ব্যবহার করে। তারা দুটি ভার্সনে কাজ করে থাকে। একটি ল্যাপটপ ও অন্যটি স্মার্ট ফোন দিয়ে। ফিঙ্গার প্রিন্ট স্ক্যানার দিয়ে আঙুলের ছাপ সংগ্রহ করা হয়। পরবর্তী সময়ে ঘটনাস্থল থেকে তথ্য পাঠানো হয় পিবিআইয়ের সাইবার ক্রাইম অ্যান্ড ডিজিটাল ফরেনসিক ল্যাবে। সেখান থেকে নির্বাচন কমিশনের সহায়তায় এনআইডি তথ্য ভাণ্ডার থেকে পরিচয় শনাক্ত করা হয়। পুরো প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে সময় লাগে ১০ থেকে ১৫ মিনিট।

নিউজটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর..
ফেসবুকে আমরা...
ক্যালেন্ডার...

Sun
Mon
Tue
Wed
Thu
Fri
Sat