×
  • প্রকাশিত : ২০২৪-০৭-১৫
  • ৫২ বার পঠিত
চলমান অর্থনৈতিক সংকটের মধ্যে কাশিয়ানিতে এক হাজার ৭৫৯ কোটি টাকার গবেষণাকেন্দ্র তৈরির প্রস্তাব দিয়েছে বাংলাদেশ বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণা পরিষদ (বিসিএসআইআর)। পরিকল্পনা কমিশনের কর্মকর্তারা বলছেন, কিছু অপ্রয়োজনীয় ভবন নির্মাণেই চলে যাবে প্রকল্পের বড় অর্থ। এ ছাড়া কিছু খাতে অস্বাভাবিক ব্যয় ধরা হয়েছে। এ নিয়ে প্রকল্পের মূল্যায়ন কমিটির সভায় প্রশ্ন তুলেছে কমিশন।

পরিকল্পনা কমিশনের কর্মকর্তারা বলছেন, প্রকল্পটির প্রস্তাবে প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রয়োজনীয় ব্যয় বেশি ধরা হয়েছে। প্রকল্পের সমীক্ষায় প্রস্তাবিত ব্যয়ের দ্বিগুণ ধরা হয়েছিল। দুই ধাপে ব্যয় অর্ধেক কমানোর পরও যেসব কাজ ধরা হয়েছে, এত কিছুর দরকার নেই। তাঁরা বলছেন, একটি গবেষণাকেন্দ্রের জন্য ৫০ একর ফসলি জমি নষ্ট করাও উচিত নয়।


বিসিএসআইআরের অন্যান্য গবেষণাকেন্দ্র যেখানে মাত্র ১০০ কোটি টাকার মধ্যেই বাস্তবায়ন করা হচ্ছে, সেখানে কাশিয়ানির প্রকল্পটিতে এক হাজার ৭৫৯ কোটি টাকা ব্যয় ধরা হয়েছে। অনেক খাতের অস্বাভাবিক ব্যয় কমাতে বলা হয়েছে। কমিশনের কর্মকর্তারা বলছেন, সংকটের মুহূর্তে এই বিলাসী প্রকল্পের প্রয়োজন নেই।

প্রকল্পটির বিলাসী প্রস্তাবের বিষয়ে বিসিএসআইআরের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. আফতাব আলী শেখ কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘যে প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল তা হয়তো এখন দেবেই না।

অনেক ক্ষেত্রেই পরিকল্পনা কমিশন কাজ ও খরচ কমাতে বলেছে। এত ভবন হবে না। কাজ অনেক কমে আসবে।’
প্রস্তাব অনুযায়ী গবেষণাকেন্দ্র পুরোপুরি চালু হলে এক হাজার ১৪৭ জন জনবল লাগবে। এ বিষয়ে বিসিএসআইআরের চেয়ারম্যান বলেন, ‘এত জনবল চাইলেই তো পাব না।

৫০ জন জনবল চাইলে জনপ্রশাসন পাঁচজন দেয়। এক হাজার চাইলে হয়তো ৫০ জন দেবে।’
প্রকল্প প্রস্তাবে দেখা যায়, ৫০ একর জমি অধিগ্রহণে ১৫০ কোটি টাকা চাওয়া হয়েছে। অথচ জেলা প্রশাসন মৌজা রেট অনুযায়ী সেই জমি অধিগ্রহণে ৩২ কোটি টাকা লাগবে বলে জানিয়েছে। এখন প্রকল্পের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, হিসাবে ভুল হয়েছে। জেলা প্রশাসন যে ব্যয় নির্ধারণ করে দিয়েছে, সেটাই হবে।

এদিকে যে জায়গায় গবেষণাকেন্দ্রটি করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে, সেটি ফসলি জমি। এত জায়গা নিয়ে গবেষণাকেন্দ্র নির্মাণে প্রভাব পড়বে ফসল উৎপাদনে। কিন্তু সেখানে গবেষণাকেন্দ্র করতে ছাড়পত্র দিয়েছে জেলা প্রশাসন। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, অন্যান্য গবেষণাকেন্দ্রের চেয়ে এখানে বেশি জায়গা চাওয়া হচ্ছে।

জানা গেছে, সমীক্ষায় প্রকল্পটির মোট খরচ ধরা হয়েছিল তিন হাজার ২৭৯ কোটি টাকা। পরে দুই ধাপে প্রকল্পের ব্যয় কমিয়ে এক হাজার ৭৫৯ কোটি টাকা প্রস্তাব করা হয় পরিকল্পনা কমিশনে।

প্রকল্পের প্রস্তাবে বিদেশে প্রশিক্ষণ ও ভ্রমণে প্রায় ১০ কোটি টাকা খরচ ধরা হয়েছে। পরিকল্পনা কমিশন বিদেশভ্রমণে কারা যাবে বা আদৌ তার প্রয়োজন আছে কি না, তা জানতে চেয়েছে। পাশাপাশি ব্যয় যৌক্তিক পর্যায়ে আনতে বলেছে।

এসব বিষয়ে পরিকল্পনা কমিশনের আর্থ-সামাজিক অবকাঠামো বিভাগের প্রধান মো. আব্দুর রউফ কালের কণ্ঠকে বলেন, প্রকল্পের অপ্রয়োজনীয় ব্যয় কমাতে বলা হয়েছে। যেসব খাতে বেশি ব্যয় ধরা হয়েছিল সেগুলো যৌক্তিক পর্যায়ে আনতে বলা হয়েছে। অপ্রয়োজনীয় ভবন বাদ দিতে বলা হয়েছে। জমি অধিগ্রহণে জেলা প্রশাসনের প্রাক্কলিত ব্যয় ধরে ডিপিপি সংশোধন করতে বলা হয়েছে। প্রকল্প সংশোধন করে পাঠালে খরচ অনেক কমে যাবে। 

প্রকল্প প্রস্তাবে দেখা যায়, প্রকল্পটিতে চারটি ১০ তলা গবেষণাগার নির্মাণ করা হবে। আন্তর্জাতিক বৈজ্ঞানিক কনফারেন্স, সিম্পোজিয়াম, সেমিনার আয়োজনের জন্য ৫০০ আসনের একটি অডিটরিয়াম, বঙ্গবন্ধু গবেষণা কেন্দ্র, ইনোভেশন গ্যালারি, ই-লাইব্রেরি, সভাকক্ষ, সম্মেলনকক্ষ এবং দেশি-বিদেশি অতিথিদের অবস্থানের জন্য ১২টি সাধারণ স্যুইট, চারটি ভিআইপি স্যুইট ও একটি ভিভিআইপি স্যুইট সংবলিত ১০ তলার একটি বহুমুখী ভবন এবং ভবনের ছাদে হেলিপ্যাড নির্মাণ করা হবে।

এ ছাড়া ১০ তলার প্রশাসনিক ভবনে পরিচালকের দপ্তর, সভাকক্ষ ও কনফারেন্স রুম, লাইব্রেরি ও আইটি সাপোর্ট, প্রশিক্ষণকেন্দ্র, প্রশাসন শাখা, অর্থ ও হিসাব শাখা এবং প্রকৌশল বিভাগ থাকবে। গোপালগঞ্জ গবেষণাগারের পরিচালকের থাকার জন্য একটি দোতলা বাংলো নির্মাণ করা হবে। তা ছাড়া বিজ্ঞানী ও কর্মকর্তাদের জন্য তিনটি ১০ তলা আবাসিক ভবন এবং ছয়তলা ডরমিটরি ও গেস্ট হাউস ভবন নির্মাণ করা হবে। একটি ছয়তলা ইলেকট্রিক সাবস্টেশন, একটি তিনতলা স্কুল, একটি আনসার ও গার্ড শেড, ওয়াকওয়ে ঘেরা খেলার মাঠ, পুকুরসহ অন্যান্য স্থাপনা নির্মাণ করা হবে।

প্রতিটি গবেষণাগারের সঙ্গে পরীক্ষা-নিরীক্ষার কাজের জন্য মাঠ ও পুকুর থাকবে। প্রস্তাবে বলা হয়েছে, পুকুর থেকে অগ্নিনির্বাপণের পানি সরবরাহ করা যাবে এবং এলাকা তুলনামূলকভাবে শীতল থাকবে।

প্রস্তাবে আরো বলা হয়, প্রকল্পটির মাধ্যমে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সঙ্গে যৌথ গবেষণা পরিচালনা, স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ে এবং উচ্চতর বৈজ্ঞানিক গবেষণায় শিক্ষার্থীদের সহায়তা প্রদানসহ অন্যান্য কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে তরুণ প্রজন্মকে বিজ্ঞান গবেষণায় আগ্রহী করা সম্ভব হবে। মোংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরের মাধ্যমে পণ্য আমদানি ও রপ্তানির ক্ষেত্রে পণ্যের মান বিশ্লেষণের জন্য আইএসও স্বীকৃত পরীক্ষা-নিরীক্ষার ব্যবস্থা স্থাপন করা হবে। এটি মানসম্মত পণ্য আমদানি এবং রপ্তানি সহজীকরণের মাধ্যমে দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জনে সহায়তা করবে।

নিউজটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর..
ফেসবুকে আমরা...
ক্যালেন্ডার...

Sun
Mon
Tue
Wed
Thu
Fri
Sat