×
  • প্রকাশিত : ২০২৪-০৫-১৮
  • ১৪২ বার পঠিত
বঙ্গোপসাগরে ইলিশসহ সামুদ্রিক মাছ আহরণের ওপর টানা ৬৫ দিনের সরকারি নিষেধাজ্ঞা শুরু হচ্ছে ২০ মে। শেষ মুহূর্তে কক্সবাজারে ট্রলারগুলোতে জেলেদের জালে ধরা পড়ছে বিপুল পরিমাণ ইলিশ। বিক্রিও হচ্ছে চড়া দামে। তবে ভারত ও বাংলাদেশের নিষেধাজ্ঞার মেয়াদ ভিন্ন হওয়া নিয়ে অসন্তোষ কাজ করছে মৎস্যজীবীদের মধ্যে। নিষেধাজ্ঞার সুফল নিয়েও সন্দিহান জেলেরা।

আজ শনিবার সকালে ৬৩০টি ইলিশ নিয়ে ফিশারিঘাটে ভিড়েছে এফবি কাউসার নামের একটি ট্রলার। ট্রলারের মাঝি (সেরাং) আবদুল গফুর (৫৫) বলেন, কক্সবাজার উপকূল থেকে পশ্চিম দিকে বঙ্গোপসাগরের ৫০ থেকে ৬০ কিলোমিটার গভীরে জাল ফেলে তাঁরা ইলিশসহ কয়েক মণ সামুদ্রিক মাছ ধরতে পেরেছেন। কিন্তু নিষেধাজ্ঞা চলে আসায় আর সাগরে নামতে পারছেন না। একবার ট্রলার নিয়ে সাগরে গেলে ৬ থেকে ৭ দিন সময় লেগে যায়। তাঁর ট্রলারে জেলে আছেন ১৯ জন। ইলিশ বিক্রি করে তাঁরা ৫ লাখ ১৪ হাজার টাকা পেয়েছেন।

জেলে ও ট্রলারমালিকেরা বলেন, কক্সবাজার উপকূলে তাপপ্রবাহ পরিস্থিতির কারণে গত এপ্রিলজুড়ে জালে ইলিশ ধরা পড়েনি। চলতি মে মাসের প্রথম দুই সপ্তাহেও ইলিশ পাওয়া যায়নি। ১৫ মে থেকে কিছু ট্রলারে ইলিশ ধরা পড়তে শুরু হয়। কয়েক দিন ধরে গভীর সাগর থেকে ঝাঁক বেঁধে ইলিশ উপকূলের কাছাকাছি আসতে শুরু করেছে। তবে ২০ মে দিবাগত রাত ১২টা থেকে আগামী ২৩ জুলাই পর্যন্ত সরকারি নিষেধজ্ঞা নিয়ে চিন্তিত সবাই। ভারতের জেলেরা নিষেধাজ্ঞা শেষ করে অন্তত ৩৭ দিন আগে সাগরে নামবে। দুই দেশের নিষেধাজ্ঞা একই সঙ্গে শুরু এবং শেষ হলে বাংলাদেশের জেলেরা নিষেধাজ্ঞার সুফল ভোগ করতে পারত বলে জানান জেলেরা।

এফবি সাব্বির নামের আরেক ট্রলারের মাঝি কামরুল ইসলাম (৫৮) বলেন, কিছুদিনের মধ্যে বৃষ্টি শুরু হলে উপকূলে ইলিশের বিচরণ বাড়বে। তখন এই ইলিশ বিদেশি ট্রলারের জালে আটকা পড়বে। গভীর সাগরে ভারত ও মিয়ানমারের ট্রলারের বিচরণ রয়েছে। ৬৫ দিনের নিষেধজ্ঞায় বাংলাদেশি জেলেরা ইলিশ ধরতে না পারলেও ভারত ও মিয়ানমারের জেলেরা ইলিশগুলো ধরে নিয়ে যান। এখন জালে যে ইলিশ ধরা পড়ছে, অধিকাংশের ওজন ৫০০ থেকে ৭০০ গ্রাম এবং পেটে ডিম নেই। ইলিশের ডিমপাড়ার মৌসুম আরও পরে হতে পারে।


ভারতে ৬১ দিনের নিষেধাজ্ঞা শুরু হয় ১৫ এপ্রিল, শেষ হয় ১৪ জুন। বাংলাদেশে ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞা শুরু হয় ২০ মে, শেষ হয় ২৩ জুলাই। বাংলাদেশের নিষেধাজ্ঞা চলাকালে ৩৮ দিন ভারতের জেলেরা বাংলাদেশ জলসীমানাতে ঢুকে ইলিশসহ অন্য মাছ ধরার সুযোগ পান বলে জানান ট্রলারমালিক ও জেলেরা। মিয়ানমারের জেলেরাও মাছ ধরে নিয়ে যান এ সময়। বঙ্গোপসাগরে মাছ ধরার ওপর বাংলাদেশ ও ভারতের পৃথক নিষেধাজ্ঞাতে বাংলাদেশি জেলেরা বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। মৎস্যসম্পদ রক্ষার স্বার্থে ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের নিষেধাজ্ঞার সময় এক হওয়া জরুরি বলে মনে করেন সংশ্লিষ্ট সবাই।

নিষেধাজ্ঞার সময় ভারতে নৌযান যেন বঙ্গোপসাগরে বাংলাদেশের জলসীমানাতে ঢুকে মাছ ধরতে না পারে, সে বিষয়ে সতর্ক করতে ১২ মে ঢাকায় ভারতীয় হাইকমিশনারের সঙ্গে বৈঠক করেন মৎস্য অধিদপ্তরের শীর্ষ কর্মকর্তারা। মিয়ানমারের সঙ্গেও সমস্যা নেই জানিয়ে জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. বদরুজ্জামান বলেন, নিষেধাজ্ঞার সময় মৎস্য বিভাগ, নৌ পুলিশের পাশাপাশি সাগরে বাংলাদেশ নৌবাহিনী ও কোস্টগার্ড তৎপর থাকবে। কক্সবাজার জেলায় ৫ হাজার ১১৩টি ট্রলারে জেলের সংখ্যা ৬৪ হাজার ৬৫০। নিষেধাজ্ঞার সময় জেলার নিবন্ধিত ৬৩ হাজার ১৯৩ জন জেলেকে দুই দফায় ৮৬ কেজি করে চাল বিতরণ করা হবে।

চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে ইলিশ
আজ সকাল সাড়ে আটটায় কক্সবাজার শহরের বাঁকখালী নদীর নুনিয়াছটা ফিশারিঘাটের মৎস্য অবতরণকেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায়, গভীর সাগর থেকে ইলিশ ধরে ঘাটে ফিরেছে ১৫টি ট্রলার। কমবেশি সব ট্রলারে ইলিশের পাশাপাশি রুপচাঁদা, গুইজ্যা, মাইট্যা, চাপা, পোপা মাছ রয়েছে। সেখানে ৫০০ থেকে ৬০০ গ্রাম ওজনের প্রতি কেজি ইলিশ বেচাবিক্রি হচ্ছে ৯০০ থেকে ১ হাজার টাকায়। ৭০০ থেকে ৮০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ ১ হাজার ৩০০ থেকে ১ হাজার ৪০০ টাকা এবং ৯০০ থেকে ১ হাজার ২০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ ১ হাজার ৭০০ থেকে ১ হাজার ৮০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

ইলিশ ব্যবসায়ী মিজানুর রহমান বলেন, গতকাল তিনিসহ ১৫ জন ব্যবসায়ী তিন মেট্রিক টন ইলিশ ঢাকার বাজারে সরবরাহ করেছেন। আজ আরও পাঁচ মেট্রিক টন ইলিশ সরবরাহ করবেন। তবে কিছু ব্যবসায়ী ও রেস্তোরাঁর মালিকেরা নিষেধাজ্ঞার সময় অতিরিক্ত দামে বেচার জন্য ইলিশ কিনে মজুত করছেন। কক্সবাজার থেকে ট্রাকে প্রতি কেজি ইলিশ ঢাকার বাজারে পৌঁছাতে পরিবহন ও প্যাকেজিং খরচ পড়ে ৫০ থেকে ৬০ টাকা। ঢাকার বাজারে বর্তমানে ১ কেজি পর্যন্ত ওজনের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ৯০০ থেকে ২ হাজার ২০০ টাকায়।

গতকাল থেকে কমবেশি সব ট্রলার ৫০০ থেকে ২ হাজার করে ইলিশ নিয়ে ঘাটে ফিরছে বলে জানা যায়। বিক্রির জন্য আনা অধিকাংশ ইলিশের ওজন প্রায় ৬০০ গ্রাম। মৎস্য অবতরণকেন্দ্রগুলো থেকে ব্যবসায়ীরা ইলিশ কিনে ট্রাক বোঝাই করে সরবরাহ করছেন ঢাকা, চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে। টেকনাফ, সেন্ট মার্টিন দ্বীপ, মহেশখালী, কুতুবদিয়াতেও বিপুল পরিমাণ ইলিশ ধরা পড়ার খবর পাওয়া গেছে।

ফিশারিঘাট মৎস্য ব্যবসায়ী সমবায় সমিতির উপদেষ্টা জয়নাল আবেদীন বলেন, তাপপ্রবাহ ও বৃষ্টি না হওয়ায় গত দুই মাস কক্সবাজার উপকূলে ইলিশের নাগাল পাননি জেলেরা। দেশের অন্যান্য এলাকাতেও ইলিশ ধরা পড়েনি। নিষেধাজ্ঞা শুরুর আগমুহূর্তে কক্সবাজারে ইলিশ ধরা পড়া শুরু হয়েছে। তাতে ইলিশ বেচাবিক্রি হচ্ছে চড়া দামে।

কক্সবাজার ফিশিং বোট মালিক সমিতির সভাপতি মুজিবুর রহমান বলেন, নিষেধাজ্ঞা শুরুর আগমুহূর্তে ট্রলারের জালে ইলিশ ধরা পড়ায় জেলেরা খুশি হলেও জেলেপল্লিতে আনন্দ নেই। কারণ, গত দুই মাস ইলিশের নাগাল না পাওয়ায় জেলেরা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। ছোট-বড় সাড়ে পাঁচ হাজার ট্রলারে ইলিশ ধরতে এখনো সাগরে অবস্থান করছে জেলার অন্তত ১ লাখ জেলে।

নিউজটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর..
ফেসবুকে আমরা...
ক্যালেন্ডার...

Sun
Mon
Tue
Wed
Thu
Fri
Sat