×
সদ্য প্রাপ্ত:
মেট্রোরেলের নতুন সূচিতে ট্রিপ বাড়ল ৭টি জামায়াতের পিআর আন্দোলন রাজনৈতিক প্রতারণা ছাড়া কিছুই নয়: নাহিদ দেশব্যাপী বৃহত্তর আন্দোলনের ডাক জামায়াতসহ ৮ দলের, কাল সমাবেশ দেশের গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় নিরাপত্তা জোরদার ফের দ্বিধা বাড়ালেন ট্রাম্প, যুক্তরাষ্ট্র না রাশিয়া কাকে বেছে নেবে ভারত? ইসির রিমোট আগারগাঁওয়ে নেই: হাসনাত জুলাই যোদ্ধাদের নিয়ে বক্তব্য এনসিপি আংশিক কাট করেছে: সালাহউদ্দিন প্রজ্ঞাপন প্রত্যাখ্যান শিক্ষকদের, আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা চিনি ও খাদ্য শিল্প কর্পোরেশনের অবসরপ্রাপ্ত শ্রমিক, কর্মচারী ও কর্মকর্তাদের পাওনা পরিশোধের দাবিতে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশ ব্যাংক খাতের মাফিয়া পুবালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মাদ আলী
  • প্রকাশিত : ২০২২-০৮-২২
  • ২৮ বার পঠিত
রাজধানীর হাতিরঝিল থানা হেফাজতে সুমন শেখ নামের আসামির মৃত্যুর পর তাঁর স্বজনদের পুলিশ যে সিসিটিভি ফুটেজ দেখিয়েছে, এতে আত্মহত্যার বিষয়টি স্পষ্ট নয়। ফুটেজে সুমনকে ঝুলে থাকতে বা তাঁর ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করতে দেখা যায়নি। মৃত্যুর পর পুলিশ আট ঘণ্টা স্বজনদের খবর জানায়নি। স্বজনদের না দেখিয়ে পুলিশ তাঁর সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি করে, যে প্রতিবেদনে শরীরে আঘাতের কোনো চিহ্নের কথা বলা হয়নি।

গতকাল রবিবার সুমনের স্বজনরা এসব অভিযোগ করেছে। তারা বলছে, শনিবার শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজ মর্গে ময়নাতদন্ত শেষে বিক্ষোভ এড়াতে পুলিশ লাশ রামপুরায় না নিয়ে নবাবগঞ্জের গ্রামের বাড়িতে নিয়ে দাফন করার শর্ত দেয়। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে স্বজনরা গতকাল রাত পর্যন্ত সুমনের লাশ গ্রহণ না করেই পুলিশের বিরুদ্ধে মামলা করার প্রস্তুতি নিয়েছে। বিকেলে সুমনের স্ত্রী জান্নাত আক্তার ঢাকা মহানগর হাকিম আদালত এলাকায় গিয়ে আইনজীবীদের সঙ্গে পরামর্শ করে ফিরে এসেছেন। তাঁদের অভিযোগ, পাঁচ লাখ টাকা ঘুষ না পেয়ে নির্যাতনে সুমনকে হত্যা করে আংশিক সিসিটিভি ফুটেজ দেখিয়ে পুলিশ আত্মহত্যা বলে প্রমাণের চেষ্টা করছে। পরিবার যেন বিচার চাইতে না পারে এ কারণে ইচ্ছামতো সুরতহাল করে লাশ নিয়ে স্বজনদের চলে যাওয়ার শর্ত দিয়েছে।

এদিকে গতকাল সন্ধ্যায় আবারও হাতিরঝিল থানার সামনে বিক্ষোভ করেছে সুমনের স্বজন ও এলাকাবাসী। এরপর রাত ৯টার দিকে তারা রামপুরা এলাকায় সড়কে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ প্রদর্শন করতে গেলে পুলিশ তাদের সরিয়ে দেয়। এ সময় পুলিশের সঙ্গে স্থানীয় কিছু যুবক তাদের সরিয়ে দিতে সেখানে ছিল বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
 
পুলিশ কর্মকর্তারা বলছেন, শর্ত দেওয়া ও নির্যাতনের অভিযোগ ভিত্তিহীন। আত্মহত্যার সিসিটিভি ফুটেজ থাকার পরও পুলিশ অবহেলার বিষয়ে তদন্ত করতে কমিটি করেছে। কারো ইন্ধনে সুমনের স্বজনরা লাশ গ্রহণ করতে মর্গে যাচ্ছে না।

সুমনের স্ত্রী জান্নাত আক্তার বলেন, ‘শনিবার রাতে আমাদের গোপনে গ্রামের বাড়িতে লাশ নিয়ে যাওয়ার শর্ত দেওয়া হয়। আমরা লাশ বুঝে পেতে মর্গে গিয়েছিলাম। হাতিরঝিল থানার পুলিশের এক এসআই আমাদের বলেছেন, গ্রামের বাড়ি নবাবগঞ্জে নেওয়া হলে লাশ দেওয়া হবে। আর যদি বর্তমান বসবাসের স্থান ঢাকার রামপুরায় নেওয়া হয় তাহলে লাশ দেওয়া হবে না। ’ গতকাল রাত পৌনে ৯টার দিকে জানতে চাইলে তিনি মোবাইল ফোনে বলেন, ‘আমি আদালতে গিয়ে উকিলদের সঙ্গে পরামর্শ করেছি। আমরা মামলা করব; কিন্তু বিভিন্ন কারণে এখনো করতে পারিনি। এখন হাতিরঝিলে আছি। সবাই রাস্তায় বসে পড়ছি, শুয়ে পড়ছি। বিচার না নিয়ে আমি যাব না। ’

সুমনের স্ত্রীর বড় ভাই মোশাররফ হোসেন এবং সুমনের বেয়াই সোহেল আহমেদ বলেন, শনিবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে স্বজনরা থানায় গিয়ে সুমনের জন্য নাশতা দিয়ে আসে। জাফর উদ্দিন আলম নামের একজন কনস্টেবলের হাতে নাশতা দেওয়া হয় এবং নাশতা পৌঁছে দেওয়ার জন্য ১০০ টাকাও দেওয়া হয়। কনস্টেবল তখন মোশারফকে জানান, আসামিকে থানা থেকে দুপুর সাড়ে ১২টার সময় আদালতে পাঠানো হবে। এ কথা শুনে স্বজনরা থানা থেকে আদালতে যায়। আদালতে গিয়ে তারা জানতে পারে, থানার ভেতরে সুমন আত্মহত্যা করেছেন।  

মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘আত্মহত্যা করেছে রাত সাড়ে ৩টার সময় (শুক্রবার); কিন্তু পুলিশ সকালে আমাদের কাছ থেকে নাশতা নিল, টাকা নিল এবং বলল সুমন বেঁচে আছে, তাকে আদালতে পাঠানো হবে। থানায় নাটক সাজানো হয়। ’ সিসিটিভি ফুটেজ দেখেছেন কি না—জানতে চাইলে মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘ফুটেজে দেখা গেছে পরনে থাকা ট্রাউজার প্যান্ট খুলে ফেলছে (সুমন)। শুধু আন্ডারওয়্যার পরা ছিল। এরপর সে দেয়াল ধরে ওপরে ওঠে। আবার নিজেই নিচে নেমে আসে। সে যদি ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যাই করে তাহলে ঝুলে থাকার কথা। সিসিটিভি ফুটেজে ঝুলে থাকার দৃশ্য থাকার কথা; কিন্তু ফুটেজে তার ঝুলে থাকার কোনো দৃশ্য দেখা যায়নি। এমনকি ঝুলে থাকলে কোন পুলিশ তাকে নিচে নামাল সেই দৃশ্যও দেখাতে পারেনি তারা। পুরো ভিডিও দেখতে চাইলে ভিডিও বন্ধ করে দিয়ে পুলিশ আমাদের বাইরে যেতে বলে। ’

সোহেল আহমেদ বলেন, ‘সুরতহাল প্রতিবেদনে নাকি অস্বাভাবিক কিছু নেই। ওই প্রতিবেদন কখন কিভাবে পুলিশ করল? আমার ভিকটিমের স্বজন, আমরা তো লাশই দেখিনি। মৃত্যুর খবরও তখন জানি না। আমরা মনে করছি, নির্যাতনে মেরে ধামাচাপা দিতে চাইছে। এ কারণে আমরা আজ লাশ নিইনি। ’ 

সুমনের স্ত্রী জান্নাত বলেন, ‘দেশে বিচার আছে। তিনি চুরি করলে তাঁর বিচার হবে। থানা হেফাজতে তাঁকে হত্যা করা হলো কেন? ইউনিলিভারের পিউরইট ও পুলিশ আমার স্বামীকে হত্যা করেছে। তাঁর কাছে পুলিশ পাঁচ লাখ টাকা দাবি করে থানা থেকে। পুলিশকে টাকা না দেওয়ায় আমার স্বামীকে হত্যা করা হয়েছে। ’

লাশ হস্তান্তরে শর্তের ব্যাপারে পুলিশের তেজগাঁও বিভাগের উপকমিশনার এইচ এম আজিমুল হক বলেন, ‘এসব কথার ভিত্তি নেই। একজন অতিরিক্ত উপকমিশনার মরদেহ নিয়ে সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যালের মর্গে অপেক্ষা করছেন; কিন্তু পরিবারের কেউ মরদেহ নিতে আসেনি। ’ গতকাল সন্ধ্যায় নিজ কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ‘কারো ইন্ধনে স্বজনরা সুমনের লাশ নিচ্ছে না। ’ নির্যাতন ও হয়রানির অভিযোগ অস্বীকার করে তিনি বলেন, ঘটনায় তদন্ত হচ্ছে। দায়িত্বে অবহেলার জন্য শুক্রবার রাতে দায়িত্বে থাকা ডিউটি অফিসার হেমায়েত হোসেন ও সেন্ট্রি মো. জাকারিয়াকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।

পুলিশ জানিয়েছে, ইউনিলিভার লিমিটেডের পিউরইটে চাকরি করতেন সুমন শেখ। পিউরইটের অফিসে ৫৩ লাখ টাকা চুরির ঘটনায় গত ১৫ আগস্ট একটি মামলা করা হয়। এ ঘটনায় আল আমিন, সোহেল রানা ও অনিক হোসেন নামের তিনজনকে আগে গ্রেপ্তার করা হয়। তাঁদের দেওয়া তথ্য ও অফিসের সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ করে এ চুরির সঙ্গে সুমন শেখের সংশ্লিষ্টতা পাওয়া যায়। তাঁকে শুক্রবার বিকেলে গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তারের পর সুমন শেখকে নিয়ে রাতে তাঁর বাসায় অভিযান চালিয়ে তিন লাখ ১৩ হাজার ৭০০ টাকা জব্দ করা হয়।  

স্বজনরা জানিয়েছে, সুমন রামপুরায় পিউরইটের বিপণন অফিসে ছয় বছর ধরে কাজ করতেন। মাসে ১২ হাজার টাকা বেতন পেতেন। গত শুক্রবার পুলিশ তাঁকে মারতে মারতে থানায় নিয়ে যায়। সুমন পশ্চিম রামপুরার ঝিলকানন এলাকায় পরিবার নিয়ে ভাড়া বাসায় থাকতেন। তাঁর গ্রামের বাড়ি ঢাকার নবাবগঞ্জের দাড়িকান্দি এলাকায়। বাবার নাম পেয়ার আলী।

মানবাধিকার সংস্থার উদ্বেগ
পুলিশ হেফাজতে সুমনের মৃত্যুর ঘটনায় ক্ষোভ ও উদ্বেগ প্রকাশ করে দায়ী ব্যক্তিদের শাস্তি দাবি করেছে সংস্কৃতি ফাউন্ডেশন (এমএসএফ)। গতকাল সংস্থাটির প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি অ্যাডভোকেট সুলতানা কামাল এক বিবৃতিতে বলেন, ‘ঘটনাটির নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু তদন্ত নিশ্চিত করে অবহেলা বা নির্যাতনমূলক আচরণের উপাদান থেকে থাকলে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার জোর দাবি জানাচ্ছি। ’ একই বিবৃতিতে গত ১৬ আগস্ট গোয়েন্দা বিভাগের (ডিবি) হেফাজতে থাকা সিদ্দিক আহাম্মেদের (৬২) মৃত্যুর ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করে তদন্ত দাবি করা হয়।  

নিউজটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর..
ফেসবুকে আমরা...
ক্যালেন্ডার...

Sun
Mon
Tue
Wed
Thu
Fri
Sat