×
  • প্রকাশিত : ২০২৪-০৭-১৩
  • ২৭৯ বার পঠিত
রাজধানীতে শুক্রবার ভোর থেকে মুষলধারায় বৃষ্টি। কয়েক ঘণ্টায় ডুবল বিভিন্ন সড়ক, অলিগলি থেকে শুরু করে বাজার-ঘাট, পাড়া-মহল্লা। এতে মহানগরজুড়ে স্থবিরতা তৈরি হয়। ছুটির দিন থাকায় শিক্ষার্থীসহ বেশিরভাগ চাকরিজীবী নাগরিকের ঘর ছাড়ার প্রয়োজনীয়তা ছিল না। তবে জীবিকা ও অন্যান্য জরুরি প্রয়োজনে অনেকেই পথে নেমেছেন। তারা পড়েছেন প্রচণ্ড দুর্ভোগে। অনেকে কোমরপানি ডিঙ্গিয়ে গন্তব্যে গেছেন। নগরীর অধিকাংশ এলাকা জলমগ্ন হওয়ায় কোনো কোনো সড়কে যানবাহন চলাচলও প্রায় বন্ধ হয়ে যায়। মাঝ রাস্তায় পানিতে বিকল হয়ে পড়ে অনেক গাড়ি। যানবাহন না পেয়ে রোগীদের নিয়ে বিপাকে পড়েন স্বজনরা। এদিকে, রাজধানীর ভাসানটেক এলাকার একটি বাসায় জমে থাকা বৃষ্টির পানিতে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে আব্দুর নূর নামে এক রাজমিস্ত্রির মৃত্যু হয়েছে।

এদিন সকাল ৬টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত ঢাকায় ৬ ঘণ্টায় বৃষ্টি হয়েছে ১৩০ মিলিমিটার। আবহাওয়া বিভাগ জানিয়েছে, এটা চলতি বর্ষা মৌসুমের স্বাভাবিক অবস্থায় রাজধানীতে একদিনে সর্বোচ্চ বৃষ্টি। 
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ এক বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, রাজধানীর ফকিরেরপুল, নয়াপল্টন, বায়তুল মোকাররম, তোপখানা রোড, মৎস্য ভবন, কাওরান বাজার, শান্তিনগর, মালিবাগ মোড়, আরামবাগ, প্রগতি সরণি, নিউমার্কেট, ধানমন্ডির রাফা প্লাজা, মিরপুরের রোকেয়া সরণি, পুরান ঢাকার দয়াগঞ্জ মোড়, বংশাল, নিমতলীর টয়েনবি সার্কুলার রোড জলমগ্ন হয়ে পড়েছে। 

সরেজমিন দেখা গেছে, কোথাও কোথাও কোমর সমান বা তার বেশি পানি উঠেছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, শাহবাগ, পরিরবাগ, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, জাতীয় প্রেস ক্লাব, চানখাঁরপুলসহ আশপাশের সড়কগুলো পানিতে তলিয়ে গেছে। অ্যাম্বুলেন্সও আটকে পড়ে পানিতে। যানবাহন না পেয়ে এক রোগীকে ভ্যানে শুইয়ে হাসপাতালে নিতে দেখা যায়। এ নিয়ে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন নগরবাসী। শান্তিনগরের বাসিন্দা আমিনুল ইসলাম বলেন, বাসার নিচ তলায় পানি থইথই করছে। হাঁটুপানি ভেঙে ওষুধ কিনতে এসে দেখি দোকান বন্ধ। দোকানের সামনেও প্রায় ১ ফুট পানি। তিনি বলেন, এখানে জলাবদ্ধতার সমস্যা বছরের পর বছর ধরে চলছে। বারবার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হলেও কেউ সমাধানের উদ্যোগ নিচ্ছে না। 

রাজারবাগ পুলিশ লাইনের ভেতরেও হাঁটুপানি ওঠে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন পুলিশ সদস্য বলেন, রাজধানীতে এত উন্নয়ন কিন্তু পানি নিষ্কাশনের স্থায়ী সমাধান হচ্ছে না। রাজধানীর মতিঝিল, পল্টন, নয়াপল্টন, সেগুনবাগিচা, কাকরাইল, বেইলি রোড, মালিবাগ, রাজারবাগ, শাহজাহানপুর, কমলাপুর, পুরান ঢাকার নাজিরাবাজার ও কাজী আলাউদ্দিন রোডেও হাঁটুপানি দেখা গেছে। বংশাল রোড, লক্ষ্মীবাজার, তাঁতীবাজার নবাবপুর রোডের কোথাও কোথাও কোমরপানি ছিল। 

তুলনামূলকভাবে একটু উঁচু ইত্তেফাক মোড় ও টিকাটুলি রোডও তলিয়ে যায়। এসব সড়কে যানজটও সৃষ্টি হয়েছে। কারণ, বৃষ্টির পানিতে অনেক যানবাহন বিকল হয়ে পড়ে। এ ছাড়া নবাবপুর, বংশাল, ইসলামপুর, সায়েদাবাদ, যাত্রাবাড়ী, ধূপখোলা এলাকার রাস্তাগুলোতে পানি থইথই করছিল। নিমতলী, চানখাঁরপুল এলাকা জলমগ্ন হওয়ায় মেয়র হানিফ উড়াল সড়কের ওঠানামার মুখে লম্বা যানজট সৃষ্টি হয়। 

লালবাগ থেকে হাজারীবাগ মোড়, হাজারীবাগ থেকে ট্যানারি মোড়ের দিকের সড়ক পানিতে ডুবে ছিল। হাজারীবাগ কাঁচাবাজার মোড় থেকে উত্তর দিকে সিঙ্গারের রাস্তা পুরোটাই তলিয়ে যায়। ইস্কাটন, গ্রিনরোড, ডিএমপির সড়কগুলোতেও পানি ছিল। কমফোর্ট হাসপাতাল থেকে গ্রিন লাইফ হাসপাতাল পর্যন্ত সড়ক, সেন্ট্রাল রোড ও কলাবাগান এলাকার সড়কগুলোতেও ছিল পানি। সায়েন্সল্যাব থেকে নীলক্ষেত, নিউমার্কেট, আজিমপুর সড়কেও পানি ওঠে। আজিমপুর কবরস্থানে পানি থাকায় দাফন কাজে সমস্যা দেখা যায়। যেসব কবর খোঁড়া ছিল, সেগুলোও ডুবে যায়। 

মানিক মিয়া অ্যাভিনিউর রাস্তাটি যেন ছোট নদীর মতো দেখাচ্ছিল। পানিতে পুরো সড়ক, ফুটপাত একাকার। পানিতে তলিয়ে যায় দয়াগঞ্জ মোড়, সায়েদাবাদ বাস টার্মিনাল, নিমতলী, কমলাপুরের কাছে টয়েনবি সার্কুলার রোড, যাত্রাবাড়ী, কাজলা, শনির আখাড়া, রায়েরবাগ, গোলাপবাগের নিচু এলাকাগুলো। কাকরাইল, মোহাম্মদপুর, শেওড়াপাড়া, কাজীপাড়াসহ মিরপুরের বিভিন্ন এলাকা এবং মিরপুর মাজার রোড, এলিফ্যান্ট রোড, মৎস্য ভবন, সেন্ট্রাল রোড, ধানমন্ডি ২৭ নম্বর, কাওরান বাজার, ফার্মগেট, তেজগাঁও, বিজয় সরণি, পশ্চিম তেজতুরী বাজার, তেজকুনি পাড়া, দক্ষিণ মনিপুরের মোল্লাপাড়া, মহাখালীর বিভিন্ন রাস্তায় পানি জমে।

আবহাওয়া বিভাগের আবহাওয়াবিদ মো. তরিফুল নেওয়াজ কবির বলেন, নিয়ম অনুসারে প্রতি ৩ ঘণ্টা পরপর বৃষ্টি পরিমাপ করা হয়। সকাল ৬টা থেকে ৯টা পর্যন্ত বৃষ্টি হয়েছে ৬০ মিলিমিটার। পরের ৩ ঘণ্টায় পরিমাণ আরও বেড়েছে। ৯টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত বৃষ্টি হয়েছে ৭০ মিলিমিটার। সবমিলে ৬ ঘণ্টায় বৃষ্টির পরিমাণ রেকর্ড করা হয় ১৩০ মিলিমিটার। 

তিনি জানান, এদিন প্রায় সারা দেশেই বৃষ্টি হয়েছে। ২৪ ঘণ্টায় সবচেয়ে বেশি বৃষ্টি হয়েছে কক্সবাজারে ৩০৯ মিলিমিটার। এ ছাড়া সন্দ্বীপে ২১৯ মিলিমিটার ও সীতাকুণ্ডে ১০২ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। বঙ্গোপসাগরে মৌসুমি বায়ু অতিমাত্রায় সক্রিয় থাকায় উপকূলীয় এলাকায় অতি ভারি বৃষ্টি হয়েছে। 

ডিএনসিসির জনসংযোগ কর্মকর্তা মকবুল হোসাইন জানিয়েছেন, ঢাকার ১০টি অঞ্চলে ১০টি কুইক রেসপন্স টিম কাজ করেছে। কিন্তু, অসুবিধা হচ্ছে যেসব পয়েন্ট থেকে আমরা ড্রেনেজ সিস্টেম পরিষ্কার করি, সেই পয়েন্টগুলোতে মানুষ বিভিন্ন ধরনের আবর্জনা ফেলায় এলাকাভিত্তিক জলাবদ্ধতা নিরসনে সময় লাগে। 

দক্ষিণের জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. আবু নাছের বলেন, পানি দ্রুত নিষ্কাশনের জন্য ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ১০০টি টিম সকাল থেকে কাজ করে। এছাড়া দোলাইরপাড় ও কমলাপুরে পাম্প চালু ছিল। 
এদিকে, অচেতন অবস্থায় আব্দুর নূরকে উদ্ধার করে কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে নিলে দায়িত্বরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। তিনি সুনামগঞ্জের জামালপুর থানার ফাজিলপুর গ্রামের মৃত আব্দুল আজিজের ছেলে। ভাসানটেক এলাকায় ভাড়া থাকতেন। 

বিষয়টি নিশ্চিত করেন ভাসানটেক থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) প্রণয় কৃষ্ণ মন্ডল। রাজমিস্ত্রি আব্দুর নূর যাওয়ার পথে বিদ্যুৎস্পর্শে অচেতন হয়ে পড়েন। পরে দ্রুত তাকে কুর্মিটোলা হাসপাতালে নিয়ে গেলে দায়িত্বরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। আইনি প্রক্রিয়া শেষে সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরির পর লাশ রাতে ময়নাতদন্তের জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজের (ঢামেক) মর্গে পাঠানো হয়েছে। 

জলাবদ্ধতায় নাকাল নগরবাসী-বিপাকে চাকরিপ্রার্থীরা : ভোর থেকে টানা কয়েক ঘণ্টা ভারি বৃষ্টিতে সৃষ্ট জলাবদ্ধতায় বিপাকে পড়েন ১৮তম শিক্ষক নিবন্ধনের লিখিত পরীক্ষা ও অন্য চাকরির নিয়োগ পরীক্ষায় অংশ নেওয়া প্রার্থীরা। অনেক প্রার্থী যথাসময়ে কেন্দ্রে পৌঁছাতে পারেননি। সাপ্তাহিক ছুটির দিন হওয়ায় রাজধানীর অধিকাংশ সড়কেই সকালে যানবাহন ছিল খুব কম। ফলে যানবাহন সংকটে গন্তব্যে যেতে বিড়ম্বনায় পড়তে হয় অনেককে। 

১৮তম শিক্ষক নিবন্ধনের লিখিত পরীক্ষায় অংশ নেওয়া চাকরিপ্রার্থী সাদ্দাম হোসেন বলেন, সকাল ৯টায় পরীক্ষা শুরু হওয়ার কথা থাকলেও বৃষ্টি ও জলাবদ্ধতার কারণে যথাসময়ে বাসা থেকে বের হতে পারিনি। অন্যদিকে বাস চলাচল ছিল খুবই অল্প। অনেক কষ্টে কেন্দ্রে পৌঁছাতে হয়।

নিউজটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর..
ফেসবুকে আমরা...
ক্যালেন্ডার...

Sun
Mon
Tue
Wed
Thu
Fri
Sat