অন্তর্বর্তী সরকারের শপথগ্রহণ আজ বৃহস্পতিবার রাত ৮টায় অনুষ্ঠিত হতে পারে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান। বঙ্গভবনে শপথ অনুষ্ঠানের আয়োজনে সব প্রস্তুতি নিয়েছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। উপদেষ্টাদের বাসভবন প্রস্তুতে গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়কে চিঠি দেওয়া হয়েছে।
সরকারে সব শ্রেণির প্রতিনিধিপ্রয়োজনীয়সংখ্যক গাড়িও প্রস্তুত রাখতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে সরকারের যানবাহন অধিদপ্তরকে।
এই সরকারে ছাত্র, শিক্ষক, আলেম, সিভিল সোসাইটিসহ সব পেশার মানুষের প্রতিনিধি থাকবেন—এমনটি প্রত্যাশা করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
ড. ইউনূস গতকাল বুধবার রাতে প্যারিস থেকে ঢাকার উদ্দেশে রওনা হন। ফ্রান্সে সশস্ত্র নিরাপত্তারক্ষীরা কড়া পাহারায় তাঁকে ফ্লাইটে পৌঁছে দেন। ফ্রান্সে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত খন্দকার এম তালহা এ সময় বিমানবন্দরে উপস্থিত ছিলেন।
ড. ইউনূস প্যারিসে বিমানবন্দরে বার্তা সংস্থা এএফপিকে বলেন, সংকট থেকে বাংলাদেশকে বের হতে সহযোগিতার জন্য তিনি ফিরছেন।
এর আগে গতকাল বিকেলে সেনা সদর দপ্তরে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান বলেন, ‘কিছুক্ষণ আগে ড. ইউনূসের সঙ্গে কথা হয়েছে। উনার সঙ্গে কথা বলে খুব ভালো লাগল। আমার মনে হয়েছে উনি অত্যন্ত আগ্রহী এই কাজ করার জন্য।
আমি নিশ্চিত যে উনি আমাদের একটি সুন্দর গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় নিয়ে যেতে পারবেন।’
সেনাপ্রধান বলেন, ‘ড. ইউনূস আগামীকাল (বৃহস্পতিবার) দেশে আসবেন। আমি তাঁকে বিমানবন্দরে রিসিভ করব। আশা করি, রাত ৮টায় অন্তর্বর্তী সরকারের শপথ অনুষ্ঠিত হবে।’ এ সরকারে ১৫ জনের মতো সদস্য থাকতে পারেন বলে জানিয়েছেন তিনি।
দু-একজন বাড়তেও পারে। এ বিষয়ে বৃহস্পতিবার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলে জানান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান।
সেনাপ্রধান বলেন, ‘ড. ইউনূসকে সব ধরনের সহযোগিতা করবে সশস্ত্র বাহিনী। আশা করি, সবার চেষ্টায় আমরা সুন্দর ভবিষ্যতের দিকে এগিয়ে যেতে পারব।’
শিক্ষার্থীদের প্রশংসা করে তিনি বলেন, ‘আপনারা দেখেন, শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন সরকারি স্থাপনা পরিষ্কার করছেন। ট্রাফিক পুলিশ না থাকায় সড়কে তাঁরা ট্রাফিকের দায়িত্বও পালন করছেন। আমি তাঁদের সাধুবাদ জানাই। আশা করি, আগামী দিনেও তাঁরা এ দায়িত্ব পালন করবেন। আমাদের কাজে সহযোগিতা করবেন।’
পুলিশ পুনর্গঠনের বিষয়ে ওয়াকার-উজ-জামান বলেন, পুলিশ বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় বাহিনী। এরই মধ্যে এ বাহিনী পুনর্গঠনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। আশা করি, তারা মনোবল ফিরিয়ে এনে একটি পেশাদার বাহিনী হিসেবে নিজেদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব পালন করবে।
অন্তর্বর্তীকালীন এই সরকারে কারা থাকছেন—এমনটি নিশ্চিত করতে পারছে না কেউ। প্রতিটি অংশীজনের কাছ থেকে পৃথক তালিকা নেওয়া হচ্ছে।
মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ সূত্রে জানা যায়, আজ যেকোনো সময় এই তালিকা চূড়ান্ত করে শপথের জন্য আমন্ত্রণ জানানো হবে।
সরকারি যানবাহন অধিদপ্তরের পরিবহন কমিশনার (অতিরিক্ত সচিব) মোহাম্মদ আবুল হাছানাত হুমায়ুন কবীর কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘প্রধান উপদেষ্টা ও উপদেষ্টাদের জন্য গাড়ি প্রস্তুত রাখার জন্য মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। আমরা তাঁদের জন্য ১৫ থেকে ২০টি গাড়ি প্রস্তুত রেখেছি। বৃহস্পতিবার সকালে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগকে গাড়ি বুঝিয়ে দেওয়া হবে। এরপর মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের কর্মকর্তারা নতুন প্রধান উপদেষ্টা ও উপদেষ্টাদের তাঁদের বাড়ি থেকে শপথের জন্য বঙ্গভবনে নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করবেন।’
আবাসন পরিদপ্তরের পরিচালক মো. শহিদুল ইসলাম ভূঁইয়া বলেন, ‘অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টাদের জন্য আমাদের বাসভবন চাওয়া হয়েছে। সাবেক সরকারের অনেক দায়িত্বশীল ব্যক্তিদের নামে সেগুলো বরাদ্দ রয়েছে। তাঁদের তো আর পাওয়া যাচ্ছে না। তাঁদের একান্ত সচিব/সহকারী একান্ত সচিবকে বলেছি বাসভবনগুলো খালি করতে। তাঁরা শুক্রবারের মধ্যে খালি করে দেবেন বলে জানিয়েছেন।’
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, অন্তর্বর্তী এই সরকারে সব পেশাজীবীর অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা হবে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের দু-একজন সমন্বয়কের অংশগ্রহণ এই সরকারে থাকতে পারে। এ ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, আইনজীবী, সিভিল সোসাইটি, আলেম, অর্থনীতিবিদসহ সব পেশার মানুষের অংশগ্রহণ থাকবে এই সরকারে।
উপদেষ্টাদের থাকার জন্য প্রয়োজনীয়সংখ্যক বাসভবন প্রস্তুতে গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়কে চিঠি দিয়েছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকে কোটা সংস্কার আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় ছাত্র-জনতার ব্যাপক বিক্ষোভের মুখে গত সোমবার প্রধানমন্ত্রীর পদ ছেড়ে দেশত্যাগ করেন শেখ হাসিনা। এরপর দেশ পরিচালনার জন্য অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের প্রক্রিয়া শুরু হয়। বিষয়টি নিয়ে গত সোমবার বঙ্গভবনে তিন বাহিনীর প্রধানদের উপস্থিতিতে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা ও নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। এরপর গত মঙ্গলবার রাতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ১৩ জন সমন্বয়ক ও শিক্ষকদের সঙ্গে বৈঠক করেন তিনি। পরে শান্তিতে নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে প্রধান উপদেষ্টা করার বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়েছে।
এ জাতীয় আরো খবর..