×
  • প্রকাশিত : ২০২৪-০৬-২৪
  • ৬৬ বার পঠিত
ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে পানি বণ্টন চুক্তি নিয়ে আলোচনায় আপত্তি জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে চিঠি দিয়েছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। চিঠিতে কলকাতা ও ঢাকার মধ্যে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে দাবি করে তিনি বলেছেন, ‘রাজ্য সরকারের সঙ্গে আলোচনা ও মতামত ছাড়াই এই ধরনের একতরফা আলোচনা গ্রহণযোগ্য ও কাম্য নয়। খবর এনডিটিভির।

প্রতিবেদন মতে, সম্প্রতি বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারতের নবনির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির শপথ অনুষ্ঠানে যোগ দিতে দিল্লি সফর করেন। সেই সময় উভয় দেশের মধ্যে গঙ্গা ও তিস্তার পানি বণ্টন নিয়ে আলোচনা হয়। পশ্চিমবঙ্গ সরকারকে ওই বৈঠকে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি।

এরপর গত শনিবার নয়াদিল্লি সফরে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে বৈঠক করেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ সময় ১৯৯৬ সালের গঙ্গার পানি বণ্টন চুক্তিটি নবায়নের আলোচনা শুরুর জন্য একটি ‘যৌথ কারিগরি কমিটি’ গঠনের ব্যাপারে সম্মত হন দুই দেশের সরকারপ্রধান।
 
ফারাক্কা চুক্তি আলোচনা থেকে বাদ পড়ায় ক্ষুব্ধ হয়েছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা। এ সংক্রান্ত চুক্তি নবায়নের সিদ্ধান্তকে ‘পশ্চিমবঙ্গ বিক্রি করার পরিকল্পনা’ হিসেবে বর্ণনা করেছে রাজ্যের শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেস। এই চুক্তি বাস্তবায়ন সহজ হবে না বলেও হুঁশিয়ারি দেয়া হয়েছে।
  
এরপর এ বিষয়ে আপত্তি জানিয়ে মোদিকে চিঠিও লিখলেন মমতা। তিনি বলেছেন, ‘আমি বুঝতে পারছি যে ভারত-বাংলাদেশ ফারাক্কা চুক্তি নবায়নের বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে যার মেয়াদ ২০২৬ সালে শেষ হবে।
 
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আরও লিখেছেন, 
বাংলাদেশ ও ভারতের পাশাপাশি পশ্চিমবঙ্গের জনগণের ওপর এর বিশাল প্রভাব রয়েছে। বাংলার জনগণ এই ধরনের চুক্তিতে ‘সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত’ হবে। পানি খুবই মূল্যবান এবং মানুষের জীবনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। আমরা এমন একটি সংবেদনশীল ইস্যুতে আপস করতে পারি না; যা জনগণের ওপর মারাত্মক ও বিরূপ প্রভাব ফেলবে।
 
এর আগে সংশ্লিষ্ট সূত্রের বরাত দিয়ে আলাদা এক প্রতিবেদনে এনডিটিভি জানিয়েছে, বাংলাদেশ-ভারত দ্বিপক্ষীয় আলোচনায় এমন অনেক বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে, যা পশ্চিমবঙ্গকে গভীরভাবে প্রভাবিত করবে। এসব বিষয়ে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের মতামত নেয়া হয়নি বলে ‘বিরক্ত’ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
 
বলা হচ্ছে, মমতার ক্ষুব্ধ হওয়ার অন্যতম কারণ ফারাক্কা চুক্তি- যা নিয়ে যৌথ বিবৃতি দেয়া হয়েছে। ২০২৬ সালে চুক্তিটির মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা রয়েছে এবং শেখ হাসিনার সফরে উভয় দেশই ফারাক্কা চুক্তি নবায়নের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
  
পশ্চিমবঙ্গের অবকাঠামোর একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ ফারাক্কা বাঁধ; যা দিয়ে গঙ্গার পানি বাংলাদেশে প্রবাহিত হয় এবং হুগলি নদীতে পানি সরানো নিশ্চিত করতে সহায়ক ভূমিকা পালন করে। গঙ্গার পানি কলকাতা বন্দরের কার্যকারিতার জন্য গুরুত্বপূর্ণ এবং কলকাতাসহ হুগলি-ভাগীরথী নদীর তীরে শহুরে বসতিগুলোর পানির চাহিদা পূরণ করে।
 
ভারতের এই গঙ্গা চাঁপাইনবাবগঞ্জ দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করে নাম হয়েছে পদ্মা। এরপর এটি রাজশাহী, কুষ্টিয়া, ফরিদপুর, চাঁদপুর হয়ে বঙ্গোপসাগরে মিশেছে। বাংলাদেশের উত্তর ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের বিস্তীর্ণ এলাকার প্রাণ-প্রকৃতির জন্য এই নদীর পানি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
 
একইভাবে ভারতের জলপাইগুড়ি এলাকা দিয়ে লালমনিরহাট হয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করা তিস্তা নদী রংপুর অঞ্চলের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। 
 
ভারতীয় সংবাদমাধ্যমের খবর অনুযায়ী, তিস্তার পানি ইস্যুতে চুক্তি এবং তিস্তা নদীর পানি বণ্টন নিয়ে আলোচনার জন্য বাংলাদেশে একটি কারিগরি দল পাঠানোর সিদ্ধান্তও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে ক্ষুব্ধ করেছে। তিস্তার পানি বণ্টন নিয়ে পশ্চিমবঙ্গের মমতা সরকার আগে থেকেই উদ্বেগ জানিয়ে আসছে।
 
১৯৯৬ সালে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ সরকার গঠিত হলে ভারতের সঙ্গে বৈদেশিক সম্পর্কে উল্লেখযোগ্য উন্নতি হয়। সে বছর ১২ ডিসেম্বর উভয় দেশের নেতারা নয়াদিল্লিতে ৩০ বছরের একটি চুক্তি সাক্ষর করেন।
  
এই চুক্তি অনুযায়ী, ১ জানুয়ারি থেকে ৩১ মে পর্যন্ত ফারাক্কা থেকে দুই দেশের মধ্যে পানি বণ্টন হচ্ছে। আগের ৪০ বছরের গড় মাত্রা অনুযায়ী ভারত গঙ্গার পানির ভাগ পাচ্ছে। একই সঙ্গে যে কোনও সংকটের সময় বাংলাদেশকে ৩৫,০০০ কিউসেক পানি সরবরাহের গ্যারান্টিও দেয়া হয় এই চুক্তিতে।
 
এদিকে ২০১১ সালে তৎকালীন ভারতের প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের বাংলাদেশ সফরে তিস্তা চুক্তি সই হওয়ার কথা থাকলেও, শেষ মুহূর্তে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আপত্তির কারণে হয়নি। তবে ভারতের প্রধানমন্ত্রী সে সময় বলেছিলেন, তারা এমন কোনও পদক্ষেপ নেবে না, যার বিরূপ প্রভাব পড়ে।
 
অথচ ২০১১ সালের পর থেকে তিস্তার পানি একতরফা প্রত্যাহার করছে ভারত। এমনকি নিয়ম না মেনে পানি সরাতে গত বছর উজানে আরও দুটি খাল খননের উদ্যোগ নেয় পশ্চিমবঙ্গ সরকার।
  
এবার কেন্দ্রীয় সরকারের সঙ্গে বিরোধ এবং পশ্চিমবঙ্গের স্থানীয় রাজনীতির নানান বিষয় সামনে রেখে গঙ্গার পানি বণ্টন চুক্তি নবায়নের ক্ষেত্রেও মমতা ঝামেলা বাধাতে পারেন বলে ইঙ্গিত মিলছে ভারতীয় সংবাদমাধ্যমের খবরে।

নিউজটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর..
ফেসবুকে আমরা...
ক্যালেন্ডার...

Sun
Mon
Tue
Wed
Thu
Fri
Sat