দেশের অর্থনীতির স্বার্থে পুঁজিবাজারকে শক্তিশালী করা প্রয়োজন। সেজন্য বাজারে বিভিন্ন অনিয়ম দূর করতে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) ক্ষমতায়ন দরকার। পাশাপাশি পুঁজিবাজারের তালিকাভুক্ত কোম্পানির করপোরেট কর হার হ্রাস করার আহ্বান জানিয়েছেন ডিএসইর চেয়ারম্যান হাফিজ মুহম্মদ হাসান বাবু।
মঙ্গলবার (২৮ মে) ঢাকা ক্লাবে আয়োজিত আসন্ন বাজেট উপলক্ষে ডিএসইর বাজেট প্রস্তাবনায় এসব কথা বলেন তিনি।
ডিএসই চেয়ারম্যান বলেন, পুঁজিবাজারকে দেশের অর্থনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত করতে হবে। তাই পুঁজিবাজারের অনুকূলে যাতে আসন্ন ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেট হয়, সেজন্য জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে (এনবিআর) এরইমধ্যে বেশকিছু প্রস্তাবনা দেয়া হয়েছে। বর্তমান পুঁজিবাজারের পরিস্থিতি বিবেচনায় ক্যাপিটাল গেইন আরোপ করা থেকে বিরত থাকার পাশাপাশি বিভিন্ন অনিয়ম দূর করতে ডিএসইর ক্ষমতায়ন দরকার বলে জানান তিনি।
ডিএসই চেয়ারম্যান আরও বলেন, তালিকাভুক্ত কোম্পানির করপোরেট কর হার হ্রাস করতে হবে। তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর সঙ্গে অ-তালিকাভুক্ত কোম্পানির করপোরেট কর হারে ৭.৫% ব্যবধান রয়েছে। তালিকাভুক্ত এবং অ-তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর মধ্যে করপোরেট কর হারের পার্থক্য ১০% থেকে ১২.৫% করা প্রয়োজন। পাবলিকলি ট্রেডেড কোম্পানির করের হার বর্তমানে রয়েছে ২০% যা ১৭ দশমিক ৫% করার প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। নন-পাবলিকলি ট্রেডেড কোম্পানির কর হার বর্তমানে ২৭ দশমিক ৫% রয়েছে, যা প্রস্তাব করা হয়েছে ৩৭ দশমিক ৫% থেকে ৪০% পর্যন্ত।
তিনি বলেন, তালিকাভুক্ত এবং অ-তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর মধ্যে করপোরেট করের হারের পার্থক্য ৭ দশমিক ৫% এর পরিবর্তে ১০% বা ১২ দশমিক ৫% এ উন্নীত করা উচিত হবে। এজন্য তালিকাভুক্ত পাবলিকলি ট্রেডেড কোম্পানির কর হার হ্রাসের পাশাপাশি নন- পাবলিকলি ট্রেডেড কোম্পানির কর হার বৃদ্ধি করা যেতে পারে। ফলশ্রুতিতে, আরও বহুজাতিক এবং আর্থিকভাবে স্বচ্ছল স্থানীয় কোম্পানিগুলো এক্সচেঞ্জে তালিকাভুক্ত হতে উৎসাহিত হবে। দেশের কর সংস্কৃতির প্রেক্ষাপটে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর অবদান প্রশংসনীয়। সংখ্যায় তুলনামূলকভাবে কম হওয়া সত্ত্বেও, আইনের যথাযথ আনুগত্য এবং প্রয়োগের কারণে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর প্রত্যক্ষ আয়কর বা রাজস্বের ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখে। তালিকাভুক্ত বন্ড থেকে অর্জিত আয় বা সুদের উপর কর অব্যাহতি প্রয়োজন বলেও জানান ডিএসই চেয়ারম্যান।
এ সময় বাজেটে ডিএসইর পক্ষ থেকে ৫টি প্রস্তাবনা তুলে ধরেন ডিএসই চেয়ারম্যান। স্টক এক্সচেঞ্জের সদস্যদের (ব্রোকারেজ হাউজ) নিকট থেকে উৎসে কর হার হ্রাস করার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, স্টক এক্সচেঞ্জের সদস্যদের মাধ্যমে পরিচালিত সিকিউরিটিজ লেনদেনের মূল্য পরিশোধ কালে শূন্য দশমিক ৫% হারে কর সংগ্রহ করে। এ করের হার প্রতিবেশী দেশগুলোর তুলনায় উল্লেখযোগ্যভাবে বেশি।
করোনা মহামারি ও পরবর্তী ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের বৈশ্বিক প্রভাবে বাংলাদেশের পুঁজিবাজারকে নাজুক পরিস্থিতিতে ফেলে দিয়েছে বলে জানান তিনি। ফলে পুঁজিবাজার মারাত্মক তারল্য সংকটে ভুগছে। তাছাড়া কর পরবর্তী মুনাফা থেকে কোম্পানিগুলো লভ্যাংশ দিচ্ছে বলেও উল্লেখ করেন হাসান বাবু।
বর্তমানে করপোরেট বন্ড বাজারের আকার খুব ছোট হওয়ায় এটি পুঁজিবাজারের পাশাপাশি অর্থ বাজারে বিভিন্ন সীমাবদ্ধতা তৈরি করে। একটি প্রাণবন্ত বন্ড বাজার, অর্থনীতিকে বিভিন্ন উপায়ে সাহায্য করতে পারে। যদি সব ধরনের বন্ডে কর অব্যাহতি দেয়া হয়, তাহলে এটি একটি প্রাণবন্ত বন্ড বাজার প্রতিষ্ঠা করতে উৎসাহিত করবে, যা শিল্প স্থাপনে ব্যাংকের উপর নির্ভরতা হ্রাস করে অর্থ-সংস্থান কার্যক্রম সহজতর করবে বলে উল্লেখ করেন ডিএসই চেয়ারম্যান। পাশাপাশি স্টক এক্সচেঞ্জে তালিকাভুক্ত সিকিউরিটিজ লেনদেন হতে মুনাফার উপর নতুন করে কর আরোপ না করার আহ্বানও জানান তিনি।
এ জাতীয় আরো খবর..