দেশের শীর্ষ ব্যবসায়ী সংগঠন বাংলাদেশ শিল্প ও বণিক সমিতি ফেডারেশনের (এফবিসিসিআই) সভাপতি মাহবুবুল আলম বলেছেন, বাংলাদেশ এবং তুরস্কের মধ্যে ব্যবসা-বাণিজ্যের বিপুল সম্ভাবনা বিরাজ করছে। বাংলাদেশ ও তুরস্ক উভয়ই এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে ইউরোপ এবং দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার মধ্যে ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রবেশদ্বার হিসেবে কাজ করতে পারে।
সোমবার (১৩ মে) বাংলাদেশে সফররত তুরস্কের ফরেন ইকোনমিক রিলেশনস বোর্ড অব তুর্কিয়ে (ডিইআইকে) এবং তুরস্ক-বাংলাদেশ বিজনেস কাউন্সিলের ব্যবসায়ী প্রতিনিধি দলের সাথে আয়োজিত এক সভায় এসব কথা বলেন এফবিসিসিআই সভাপতি।
তিনি বলেন, ভৌগোলিকভাবে এশিয়া ও ইউরোপের মধ্যবর্তী অবস্থান হওয়ায় এই দুই মহাদেশে বাণিজ্যের ক্ষেত্রে তুরস্ক যেমন গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে, ঠিক তেমনিভাবে হিমালয়ের পাদদেশে অবস্থিত বাংলাদেশকেও আসিয়ান এবং সার্কভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে বাণিজ্যের প্রবেশদ্বার হিসেবে ধরা হয়ে থাকে।
মাহবুবুল আলম বলেন, দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশ ও তুরস্কের মধ্যে গভীর বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বিরাজ করছে। ধর্মীয় মূল্যবোধ ও সংস্কৃতির বাইরেও দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য এবং বিনিয়োগ অংশীদারিত্ব দিন দিন জোরদার হচ্ছে।
এফবিসিসিআই সভাপতি বলেন, ২০২২-২০২৩ অর্থবছরে বাংলাদেশ তুরস্কে রফতানি করেছে ৪৯৫ দশমিক ৮১ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের পণ্য। দেশটি থেকে আমদানি করেছে ৩৮০ দশমিক ৩ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের পণ্য ও কাঁচামাল। বাংলাদেশে বর্তমানে তৈরি পোশাক ও বস্ত্র, রাসায়নিক শিল্প, প্রকৌশল, নির্মাণ ও জ্বালানি খাতে তুরস্কের ১৫ থেকে ২০ টি কোম্পানি কাজ করছে। ১০০ টিরও বেশি তুর্কি কোম্পানি বাংলাদেশে তাদের সেবা প্রদান করছে।
এই কোম্পানিগুলো উৎপাদন, নির্মাণ ও প্রকৌশলে নিজেদের দক্ষতা বিনিময়ের পাশাপাশি কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও বাণিজ্য বহুমুখীকরণে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখছে বলে জানান তিনি।
মাহবুবুল আলম বলেন, দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জনে বর্তমান সরকার নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। সরকার ২০৩০ সালের মধ্যে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জন, ২০৪১ সালের মধ্যে একটি আধুনিক, সুখী-সমৃদ্ধ স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণ এবং ডেল্টা প্ল্যান ২১০০ বাস্তবায়নে অত্যন্ত বিচক্ষণতার সাথে কাজ করে যাচ্ছে। বিদেশি বিনিয়োগকারীদের আকৃষ্ট করতে ও বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ তৈরিতে সরকার কর অব্যাহতি, শুল্ক প্রত্যাহারসহ নানা উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। তুরস্কের বিনিয়োগকারীরা বাংলাদেশে বিনিয়োগের এই সুযোগ কাজে লাগাতে পারে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
দুই দেশের মধ্যে ভবিষ্যতে সহযোগিতা আরও জোরদার হবে বলে আশাবাদ প্রকাশ করে এফবিসিসিআই সভাপতি বলেন, ওষুধ, পর্যটন, পাট, জ্বালানি এবং প্রযুক্তির মতো খাতগুলোতে বিনিয়োগ করে লাভবান হতে পারে তুরস্ক।
ব্যবসায়ী প্রতিনিধি দলের নেতৃত্বে ছিলেন তুর্কি-বাংলাদেশ বিজনেস কাউন্সিলের চেয়ারপার্সন হিদায়েত ওনুর ওজদেন। তিনি বলেন, 'বাংলাদেশ আমার কাছে সেকেন্ড হোম কান্ট্রির মতো। আমরা দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশে ব্যবসা পরিচালনা করে আসছি। দুই দেশের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য জোরদার করার অনেক সুযোগ রয়েছে। বাংলাদেশ ও তুরস্কের মধ্যে বাণিজ্য ও ব্যবসায়িক সম্পর্ক দিন দিন জোরদার হচ্ছে।’
বাংলাদেশে নিযুক্ত তুরস্কের রাষ্ট্রদূত রামিস সেন বাংলাদেশের সাম্প্রতিক অবকাঠামোগত উন্নয়নের ভূয়সী প্রশংসা করেন। তিনি বাংলাদেশের ব্যবসায়ী নেতাদের আগামীতে তুরস্ক সফরের আমন্ত্রণ জানান।
এ জাতীয় আরো খবর..