×
  • প্রকাশিত : ২০২৪-০৫-১২
  • ২৫৩ বার পঠিত
যশোরের কেশবপুরে চার সন্তানকে ডাক্তার বানিয়েছেন শাহানারা বেগম। ডাক্তার হওয়া সন্তানরা জানালেন তাঁদের মা-ই তাঁদের কাছে সেরা মা। শাহানারা বেগম কেশবপুর পৌরসভার মধ্যকুল এলাকার ডাক্তার হাবিবুর রহমানের স্ত্রী। তাঁর বড় মেয়ে ফারহানা রহমান স্বাস্থ্য অধিদপ্তর মহাখালীতে রোগতত্ত্ব গবেষক, মেজো মেয়ে সানজানা রহমান ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল, একমাত্র ছেলে হাদিউর রহমান সিয়াম খুলনা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল এবং ছোট মেয়ে ফাহরিয়া রহমান বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে কর্মরত।

শাহানারা বেগম ও তাঁর স্বামী ডাক্তার হাবিবুর রহমান সন্তানদের চিকিৎসক বানানোর জন্য অক্লান্ত পরিশ্রম করেছেন। কখনো নিজেদের নিয়ে ভাবেননি। তাঁদের একটাই ভাবনা ছিল, কিভাবে ছেলেমেয়েদের ডাক্তার হিসেবে গড়ে তুলতে পারবেন। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর মহাখালীতে রোগতত্ত্ব গবেষক হিসেবে কর্মরত ফারহানা রহমান কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘মা দিবসে মায়ের কাছে থাকতে না পারলেও মনটা পড়ে রয়েছে তাঁর কাছেই।

আম্মু অনেক কষ্ট করেছেন আমাদের চার ভাই-বোনের জন্য। সন্তানদের ডাক্তার বানাতে গিয়ে কখনো মা নিজের জন্য ভালো কাপড়চোপড় বা শখের কিছু কেনার কথা ভাবেননি। আমাদের চার ভাই-বোনের কাছে আমাদের মা-ই সেরা মা।’
চার সন্তানকে চিকিৎসক বানানোর সাফল্যের স্বীকৃতি হিসেবে গত বছর বেগম রোকেয়া দিবস উপলক্ষে শাহানারা বেগম ‘জয়িতা অন্বেষণ বাংলাদেশ’ কার্যক্রমে সফল জননী নারী বিভাগে শ্রেষ্ঠ জয়িতা মনোনীত হন।

মধ্যকুল এলাকার সাবেক পৌর কাউন্সিলর আয়ূব খান বলেন, ‘শাহানারা বেগম ও তাঁর চার সন্তানকে এলাকার মানুষ নিজেদের সন্তানদের সামনে উদাহরণ হিসেবে তুলে ধরেন। পরিবারটি আমাদের এলাকার গর্ব।’
এ ব্যাপারে কেশবপুর উপজেলা নাগরিক সমাজের আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট আবু বক্কর সিদ্দিকী বলেন, ‘শাহানারা বেগম আমাদের এলাকার রত্নগর্ভা মা। আমরা তাঁকে নিয়ে গর্ববোধ করি।’

যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলার কৃষ্ণনগর গ্রামে বিয়ে হয়েছিল বন্দনা রায়ের (৫২)।

তাঁর বাবার বাড়ি সাতক্ষীরা জেলার ঝাউডাঙ্গা গ্রামে। অভাবের সংসারে তাঁর বাবা পড়াশোনারত অবস্থায় মেয়েকে বিয়ে দিয়ে দেন। স্বামী নিশিকান্তের অভাবের সংসারে এসে ঘর বাঁধেন বন্দনা। নিশিকান্ত ছিলেন এক দরিদ্র মিষ্টি বিক্রেতা। ‘নিশির হোটেল’ নামে ছোট মিষ্টির দোকানের মালিক ছিলেন তিনি। অভাবের সংসারে সহায়তা করতে স্বামীর সঙ্গে বন্দনা রায় মিষ্টি তৈরি করতেন। এভাবে চলতে থাকে তাঁদের দারিদ্র্যের সঙ্গে জীবনযুদ্ধ। সংসারে একে একে জন্ম নেয় তিন কন্যাসন্তান লিপিকা রায়, সাগরিকা রায় ও ইতিকা রায়। একসময় বড় মেয়ের বিয়ে দেন নিশিকান্ত ও বন্দনা দম্কতি। এর এক বছরের মাথায় নিশিকান্ত অসুস্থ হয়ে মারা যান। বন্দনার মাথায় যেন আকাশ ভেঙে পড়ে।

এরই মধ্যে মেয়ে সাগরিকার মেডিক্যাল কলেজে ভর্তির টাকা জোগাড় করতে হবে। আবার রয়েছে স্বামীর শ্রাদ্ধের কাজের খরচের চিন্তা। গচ্ছিত নেই কোনো অর্থ। ধারদেনা করে স্বামীর শ্রাদ্ধের কাজ ও মেয়ের মেডিক্যাল কলেজে ভর্তির ব্যবস্থা দুটোই করলেন। স্বামী মারা যাওয়ার পর বন্দনাকে শ্বশুরবাড়ি থেকে বের করে দেওয়ার চেষ্টা চলে। সব বাধা মোকাবেলা করেই তিনি সন্তানদের লেখাপড়া করিয়ে বিয়ে দিয়েছেন। বন্দনার বড় মেয়ে মাস্টার্স পাস করে একজন সফল উদ্যোক্তা, দ্বিতীয় মেয়ে চিকিৎসক সাগরিকা রায় পিরোজপুর জেলা সদর হাসপাতালের মেডিক্যাল অফিসার এবং ছোট মেয়ে ইতিকা রায় একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ফার্মাসিস্ট হিসেবে পড়াশোনা শেষ করেছেন।

এখন বন্দনা রায় স্বামীর হোটেলটি নিজে পরিচালনা করেন। পাশাপাশি কয়েকজন কর্মচারী নিয়োগ দিয়েছেন। সংসারে এখন আর নেই অভাব। মেয়েদের বড় করে লেখাপড়া শিখিয়ে বিয়ে দিয়ে আপাতত দায়িত্ব শেষ করেছেন বন্দনা রায়। একজন গর্বিত মা হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে পেরে তৃপ্ত তিনি।

(নুরুল ইসলাম খান কালের কণ্ঠ’র কেশবপুর প্রতিনিধি ও মো. ইলিয়াসউদ্দীন ঝিকরগাছা প্রতিনিধি)

নিউজটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর..
ফেসবুকে আমরা...
ক্যালেন্ডার...

Sun
Mon
Tue
Wed
Thu
Fri
Sat