রেলের অগ্রিম টিকিট বিক্রি শুরু হবে সকাল ৮টায়। তবে আগের দিন সন্ধ্যা ৭টায় লাইনে দাঁড়িয়েছেন জুবায়ের আলম। ১৩ ঘণ্টা ২০ মিনিট লাইনে দাঁড়িয়ে থেকে খুশি তিনি। বহু কাঙ্ক্ষিত টিকিটটি যে পেয়েছেন! তবে তিনিই এই সারির প্রথম ব্যক্তি নন, তাঁর আগেও ১০ থেকে ১২ জন লাইনে ছিলেন।
শুক্রবার ঈদ যাত্রার অগ্রিম টিকিট বিক্রির প্রথম দিন হাজারো মানুষের অবস্থা ছিল জুবায়েরের মতোই। এদিন ৫ জুলাইয়ের টিকিট বিক্রি করা হয়েছে। তবে সবার ভাগ্য ভালো ছিল না। রাত ১২টায় এসেও অনেকে টিকিট পাননি। আর যাঁরা ভোরে কমলাপুর স্টেশনে এসেছেন, বলা চলে তাঁদের একজনও টিকিট নিয়ে ঘরে ফিরতে পারেননি।
ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে যাঁরা টিকিট নিতে পারেননি, তাঁদেরই একজন মো. হারুন-উর-রশিদ। তিনি কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘কখন এলে যে টিকিট পাব সেটাই বুঝতে পারছি না। মধ্যরাতে এসেও টিকিট পেলাম না। সন্ধ্যা থেকে লাইনে দাঁড়িয়েছে লোকজন। আমি পেছনে পড়ে গেছি। ’
আগামী ১০ জুলাই রবিবার উদযাপিত হবে পবিত্র ঈদুল আজহা। তার আগে শুক্রবার ও শনিবার দুই দিন সাপ্তাহিক ছুটি। ফলে এবারের ঈদ যাত্রায় বৃহস্পতিবারের টিকিটের চাহিদা থাকবে সবচেয়ে বেশি। ওই দিনের টিকিট পাওয়া যাবে আগামীকাল রবিবার। সে ক্ষেত্রে রবিবার কাউন্টারে টিকিটপ্রত্যাশীদের সবচেয়ে বেশি ভিড় হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
আর শনিবার বিক্রি হবে ৬ জুলাইয়ের টিকিট, ৪ জুলাই বিক্রি হবে ৮ জুলাইয়ের টিকিট, ৫ জুলাই বিক্রি হবে ৯ জুলাইয়ের টিকিট। ঈদ শেষে ট্রেনের ফিরতি যাত্রা শুরু হবে ১১ জুলাই থেকে। ১১ জুলাইয়ের যাত্রার টিকিট মিলবে ৭ জুলাই, ১২ জুলাইয়ের যাত্রার টিকিট মিলবে ৮ জুলাই, ১৩ জুলাইয়ের যাত্রার টিকিট মিলবে ৯ জুলাই, ১৪ ও ১৫ জুলাইয়ের যাত্রার টিকিট মিলবে ১১ জুলাই।
ঢাকা (কমলাপুর) রেলস্টেশনের ব্যবস্থাপক মাসুদ সারোয়ার বলেন, ‘আমরা ২৬ হাজার ৭৩৯টি টিকিট বিক্রি করব। এর অর্ধেক অনলাইনে, আর অর্ধেক কাউন্টার থেকে। এখানে যে দীর্ঘ লাইন হয়েছে, তাতে সবার টিকিট পাওয়ার নিশ্চয়তা দেওয়া যায় না। বিকেল ৪টা পর্যন্ত কাউন্টার খোলা রাখার কথা থাকলেও দুপুর ১২টার মধ্যে প্রায় সব টিকিট শেষ হয়ে গেছে। ’
প্রায় ২৭ হাজার টিকিট ঢাকার ৯টি স্টেশন থেকে দেওয়া হচ্ছে। কমলাপুর থেকে শুধু উত্তরবঙ্গের সাতটি ট্রেনের টিকিট দেওয়া হয়েছে। আর কমলাপুর শহরতলি প্ল্যাটফরম থেকে রাজশাহী ও খুলনাগামী ট্রেনের টিকিট দেওয়া হচ্ছে। ঢাকা বিমানবন্দর স্টেশন থেকে পাওয়া যাচ্ছে চট্টগ্রাম ও নোয়াখালীগামী সব আন্ত নগর ট্রেনের টিকিট।
তেজগাঁও স্টেশনে পাওয়া যাচ্ছে ময়মনসিংহ, জামালপুর, দেওয়ানগঞ্জগামী ঈদের বিশেষ ট্রেনের টিকিট। ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট স্টেশনে বিক্রি হচ্ছে নেত্রকোনাগামী মোহনগঞ্জ ও হাওর এক্সপ্রেস ট্রেনের টিকিট, ফুলবাড়িয়া স্টেশন থেকে বিক্রি হচ্ছে সিলেট ও কিশোরগঞ্জগামী ট্রেনের টিকিট। এ ছাড়া গাজীপুরের জয়দেবপুর রেলওয়ে স্টেশন থেকে পঞ্চগড়ের বীর মুক্তিযোদ্ধা সিরাজুল ইসলাম ঈদ স্পেশাল ট্রেনের টিকিট বিক্রি হচ্ছে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, টিকিটের জন্য কমলাপুরে উপচে পড়া ভিড়। অনেকে দাঁড়িয়ে থেকে ক্লান্ত হয়ে বসে রয়েছেন। যাঁরা রাতে এসেছেন, তাঁরা স্টেশনেই ঘুমিয়েছেন। যাঁরা টিকিট পাননি, তাঁদের অনেকে গতকালই আবার লাইন দিয়ে গিয়েছেন। সন্ধ্যায় এসে সেই লাইনে দাঁড়াবেন।
নারী ও প্রতিবন্ধীদের জন্য একটি করে কাউন্টারের ব্যবস্থা রয়েছে। তবে এই একটি কাউন্টার যেন নারীদের আরো বেশি বিপদে ফেলেছে। গতকাল কমলাপুরে ১০টি কাউন্টার থেকে টিকিট বিক্রি করা হয়। বাকি ৯টি লাইনে পুরুষদের একটি করে সারি থাকলেও নারীদের জন্য নির্ধারিত কাউন্টারে পাঁচটি লাইন দেখা যায়।
টিকিটের অপেক্ষায় লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা সুলতানা বলেন, ‘এখন সকাল সাড়ে ১০টা বাজে। আমার সামনে আরো কয়েক শ মানুষ আছে। টিকিট পাব কি না সেটা বুঝতে পারছি না। তিন ঘণ্টা হলো লাইনে দাঁড়িয়ে আছি। আরো কতক্ষণ থাকতে হবে আল্লাহই জানেন। আমাদের জন্য মাত্র একটা কাউন্টার রাখা ঠিক হয়নি। ’
জানতে চাইলে স্টেশনের ব্যবস্থাপক মাসুদ সারোয়ার জানান, অন্য সব কাউন্টারে বিভিন্ন ট্রেনের টিকিট ভাগ করে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু এই কাউন্টারে সব ট্রেনের টিকিট পাওয়া যাচ্ছে। কাউন্টার বাড়ালে ট্রেনও ভাগ করে দিতে হবে।
এ জাতীয় আরো খবর..