×
  • প্রকাশিত : ২০২২-০৬-২২
  • ৭৮ বার পঠিত
‘ঘরের ভেতর এক গলা পানি। থাকন যায় না। মানসের নৌকা আছে, হেরা নৌকার উপরা থাহে। আমগো কুনো উপায় নাই।

পোলাপান নিয়া আমরা চালের উপরা থাহি’—ব্রহ্মপুত্রের চরপোড়ার চরের গৃহবধূ মর্জিনা বেগম নিজের দুর্দশার কথা এভাবেই জানান। দুই সন্তান ফাতেমা ও লাকিকে নিয়ে একটি প্রায় ডুবে যাওয়া ঘরের চালের ওপর বসে আছেন তিনি। তাঁর স্বামী মনছুর আলী স্থানীয় মসজিদের মুয়াজ্জিনের কাজ করেন। মসজিদ ডুবে আছে, তাই আয়ও বন্ধ। যাত্রাপুর গেছেন রিলিফের খোঁজে।
কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার যাত্রাপুর ইউনিয়নের পোড়ার চরের পশ্চিম প্রান্তের প্রায় এক শ পরিবারের বাস। এদের মধ্যে প্রায় ৬০টি পরিবার ৮-১০ দিন ধরে নৌকার ওপর বাস করছে। এসব পরিবারের ঘর ভেসে গেছে বন্যার পানির তোড়ে। গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে এই চরে ঢুকেই দেখা গেল, তীব্র স্রোতে ঘরের খুঁটিগুলো দুলছে। মনছের নামের এক বাসিন্দা গলাপানিতে নেমে ঘর ভাঙার চেষ্টা করছেন। জানান, এখানে টেকা যাচ্ছে না। ঘর ভেসে যাবে। অন্য কোথাও চলে যাবেন।

খোলা নৌকায় স্ত্রী-সন্তান নিয়ে পানির ওপর ভাসছে কয়েকজন। এদের কেউ দিনমজুর, কেউ মৎস্যজীবী। প্রায় ১৫ দিন ধরে তাঁদের সবার আয় বন্ধ। কখনো তীব্র রোদ, কখনো বৃষ্টি মাথার ওপর দিয়ে যায়। ত্রাণ বলতে চিড়া-মুড়ি ও একবার ১০ কেজি করে চাল পেয়েছেন। কিন্তু রান্নার সমস্যার কারণে একবেলার বেশি খেতে পারছে না বেশির ভাগ বন্যার্ত মানুষ।

কোলের বাচ্চাটিকে নিয়ে নৌকায় বসে আছেন ময়না বেগম। জানান, আগে পূর্ব পোড়ার চরে বাড়ি ছিল। ব্রহ্মপুত্রের স্রোতে ভেসে গেছে ভিটা। তিনি বলেন, ‘যামু কোনে, যাবার কুনো জাগা নাই। রাইতে শাহজামালের খোলা ঘরে নাও চাপাইয়া কোনো মতে থাহি। রান্ধনের উপায় নাই। একবেলা খাইলে দুই বেলা উপাস থাহি। ’

এদিকে খাদ্যসংকটের চেয়ে বড় হয়েছে ঘরে ঘরে খাবার পানির সংকট। কেউ কেউ পানি ফুটিয়ে খায়। খড়ি না থাকায় অনেকে তাও পারে না। তাই নদীর পানিই পান করে। মলমূত্র মেশা পানি পান করে অনেকেই আক্রান্ত হচ্ছে ডায়রিয়ায়। ১৬ মাস বয়সের ছেলে আব্দুল্লাহকে নিয়ে বিপদে পড়েছেন হাছিনা বেগম। ছেলে কাঁদছে সমানে। দমও নেয় না। কারণ জিজ্ঞাসা করলে বলেন, ‘চুলা ভাইস্যা গেছে। কাইল রাইতে ভাত রান্ধতে পারি নাই। সকালে চিড়া খাইছি। ঠিক মতন খাইতে পারি না, বাচ্ছা দুধ পায় না। খালি কান্দে। ’

যাত্রাপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আব্দুল গফুর জানান, সব পরিবারকে ১০ কেজি করে চাল ও শুকনা খাবার দেওয়া হয়েছে। তবে ভাসমান টয়লেট ও বিশুদ্ধ পানির ব্যবস্থা না করলে মানুষের কষ্ট নিরসন করা যাবে না।

নিউজটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর..
ফেসবুকে আমরা...
ক্যালেন্ডার...

Sun
Mon
Tue
Wed
Thu
Fri
Sat