‘সৌম্য এখন কোথায় খেলছে?’
মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামের একাডেমি ভবনের সামনে গলফারদের মতো পোশাক পরা সৌম্য সরকারকে দেখে কৌতূহলী এক সাংবাদিকের প্রশ্ন।
সৌম্যর বেশভূষা দেখেই পাশ থেকে আরেকজন মজা করে বললেন, ‘ক্রিকেট ছেড়ে গলফার হয়ে গেল নাকি!’ একে একে এখন জাতীয় দলের কোনো সংস্করণের দলেই নেই সৌম্য। তাঁকে নিয়ে আলোচনাটা তাই এখন এই পর্যায়ে এসে ঠেকেছে।
সময়টা তাঁর এতই বাজে যাচ্ছে যে সর্বশেষ ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে মোহামেডানের একাদশ থেকেও বাদ পড়তে হয়েছে সৌম্যকে।
সৌম্য এখন আছেন বাংলাদেশ টাইগার্সের ক্যাম্পে। দুই দিন আগে টাইগার্সের ক্রিকেটাররা গলফ খেলতে গিয়েছিলেন কুর্মিটোলায়। সেখান থেকে মাঠে ফেরার পরই সৌম্যকে ওই বেশে দেখা। মাঝে আন্তবিশ্ববিদ্যালয় ইনডোর ক্রিকেটে খেলেছেন নিজের বিশ্ববিদ্যালয় দলের হয়ে।
তিন সংস্করণ মিলিয়ে এই মুহূর্তে বাংলাদেশ দল ও তার আশপাশে থাকা ৩০ ক্রিকেটারের মধ্যেও নেই সৌম্য। জাতীয় দলের হয়ে তাঁর সর্বশেষ ম্যাচ গত বছরের অক্টোবরে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে। সর্বশেষ টেস্ট ও ওয়ানডে কবে খেলেছেন, সেটি খুঁজতে যেতে হবে গত বছরের ফেব্রুয়ারি-মার্চে।
সৌম্য যে মানের ক্রিকেটার, জাতীয় দলে জায়গা না হলেও ঘরোয়া ক্রিকেটে অন্তত তাঁর দাপুটে বিচরণই থাকার কথা। অথচ সর্বশেষ ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে মোহামেডানের হয়ে ৮ ম্যাচ খেলে করেছেন মাত্র ১০২ রান।
সব মিলিয়ে সৌম্য যেন এখন ক্যারিয়ারের সবচেয়ে খারাপ সময়টাই পার করছেন। দুঃসময় কাটিয়ে নিজেকে ফিরে পেতে অবশ্য চেষ্টার কমতি নেই সৌম্যর। টাইগার্সের ক্যাম্পে তো আছেনই, হারানো ছন্দ খুঁজে পেতে ব্যক্তিগতভাবে কাজ করছেন বিকেএসপির ক্রিকেট উপদেষ্টা ও কোচ নাজমূল আবেদীনের সঙ্গেও
এই কদিনে নাজমূল আবেদীনের পর্যবেক্ষণ, স্বকীয়তাই হারিয়ে ফেলেছিলেন সৌম্য। প্রথম আলোকে তিনি বলছিলেন, ‘একটা ছেলে জাতীয় দলে যখন যায়, তখন কিন্তু খুব ভালো কিছু নিয়েই যায়। এমনি এমনি তো আর কেউ জাতীয় দলে আসে না।
এমনও নয় যে সৌম্য পারফর্ম করেনি। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে দাপট দেখিয়েছে। কিন্তু আমাদের অনেক ক্রিকেটারকেই দেখেছি, একটা সময় পর ওরা সেই শক্তির জায়গা থেকে সরে যায়। অনেক ক্ষেত্রে এতটাই যে আর পারফর্ম করাই সম্ভব হয় না। সৌম্যর ক্ষেত্রেও তা–ই হয়েছিল।’
আশার কথা, সৌম্যর সমস্যার নাকি সমাধানও হয়ে গেছে। এখন অপেক্ষা ম্যাচে ফেরার। নাজমূল আবেদীন বেশ আত্মবিশ্বাস নিয়েই বললেন, সেই চেনা সৌম্যকে দেখা যাবে দ্রুতই, ‘আগের চেয়ে অনেক ভালো অবস্থায় আছে ও এখন।
পাওয়ার হিটিং, ডিফেন্সিভ টেকনিক, স্পিন-পেস বোলিং খেলা—সবকিছুতেই ভালো মনে হচ্ছে। সে নিজেই খুব উপভোগ করছে। যখনই খেলায় ফিরবে, সেটা আন্তর্জাতিক কিংবা ঘরোয়া—যেকোনো পর্যায়েই হোক, সে খুবই ভালো করবে। এটা নিশ্চিত করেই বলতে পারি।’
ক্রিকেটারদের ক্যারিয়ারে খারাপ সময় আসেই। কে কত দ্রুত সময়টা পার করে দিতে পারেন, সেটাই আসলে চ্যালেঞ্জ। সে জন্য ব্যাট-বলে ছন্দ ফেরানোর মতোই গুরুত্বপূর্ণ শারীরিক ও মানসিক ফিটনেস ধরে রাখাটা।
সৌম্যর নিজেকে ফিরে পাওয়ার লড়াইয়েও সঙ্গী হয়েছেন ফিটনেস ট্রেনার দেবাশীষ ঘোষ ও মাইন্ড ট্রেনার সাবিত রায়হান। সম্প্রতি যাঁরাই দুঃসময় কাটিয়ে ফিরেছেন, তাঁদের সঙ্গী হয়েছেন এই দুজন। প্রত্যাবর্তনের লড়াইয়ে সবাইকেই পাশে পাওয়া সৌম্যর এখন শুধু অপেক্ষা নিজেকে ফিরে পাওয়ার।
এ জাতীয় আরো খবর..