×
  • প্রকাশিত : ২০২২-০৬-০১
  • ৮৩ বার পঠিত
হাতে বিষের বোতল আর গায়ে জড়ানো কাফনের কাপড়। সংখ্যায় প্রায় ৩৫ জন। তাঁরা সবাই আগামী ১৫ জুন অনুষ্ঠেয় নোয়াখালী জেলার হাতিয়া উপজেলার দুটি নবগঠিত ১ নম্বর হরণী ও ২ নম্বর চানন্দী ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচনে চেয়ারম্যান ও সদস্য প্রার্থী। গতকাল মঙ্গলবার সকাল ১১টার দিকে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনের সামনে ব্যানার টানিয়ে অবস্থান নেন তাঁরা।


তাঁদের অভিযোগ, নোয়াখালী-৬ আসনের সংসদ সদস্য আয়েশা ফেরদাউসের স্বামী মোহাম্মদ আলীর অত্যাচারে তাঁরা নির্বাচনী প্রচার চালাতে পারছেন না। স্থানীয় প্রশাসনকে বিষয়টি জানিয়েও কোনো প্রতিকার পাননি। পুলিশের উপস্থিতিতেই হামলার ঘটনা ঘটছে। এ অবস্থায় সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে নির্বাচন কমিশনের কাছে এসেছেন।

ওই ৩৫ জনের মধ্যে দুজন চেয়ারম্যান পদে স্বতন্ত্র প্রার্থী, ২৭ জন সাধারণ ওয়ার্ডের সদস্য প্রার্থী ও ছয়জন সংরক্ষিত ওয়ার্ডের সদস্য প্রার্থী। তাঁদের এই ব্যতিক্রমী অবস্থান কর্মসূচি অনেকেরই নজর কাড়ে এবং গণমাধ্যমকর্মীসহ উত্সুক জনতার ভিড় বাড়তে থাকে। এ অবস্থায় দুপুর দেড়টার দিকে পুলিশ তাঁদের নির্বাচন ভবনের সামনে থেকে সরিয়ে দেয়। পরে কয়েকজন প্রার্থীকে নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে কথা বলার সুযোগ দেওয়া হয়। কমিশনের কাছে তাঁরা সুষ্ঠু নির্বাচনের লক্ষ্যে ওই এলাকার থানার বর্তমান ওসি ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে প্রত্যাহারেরও দাবি জানান।   

ভুক্তভোগীদের অভিযোগ : অবস্থান কর্মসূচি পালনের সময় ১ নম্বর হরণী ইউপির  চেয়ারম্যান  পদে ঘোড়া প্রতীকে স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. মুসফিকুর রহমান সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার সময়ও হামলার শিকার হয়েছি। তখন অনেকেই মনোনয়নপত্র জমা দিতে পারেননি। ওই সময়  সিইসি ও সচিবকে জানানোর পর তিনি আমাদের পার্শ্ববর্তী উপজেলা সুবর্ণচরে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার ব্যবস্থা করে দেন। সেখানে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার পর নির্বাচনী প্রচারে নামলে আমাদের ওপর হামলা হচ্ছে। এখন নির্বাচন করব কি? আমাদের পালিয়ে বেড়াতে হচ্ছে। ’

তাঁর আরো অভিযোগ, ‘ভোটারদেরও ভয়ভীতি দেখানো হচ্ছে। প্রাণনাশের হুমকি দেওয়া হচ্ছে।     নির্বাচনী এলাকায় বহিরাগত সন্ত্রাসীদের আনাগোনা বেড়ে গেছে। সংসদ সদস্য আয়েশা ফেরদৌসের স্বামী তাঁর সন্ত্রাসী বাহিনী দিয়ে আমাদের ওপর হামলা চালিয়ে নির্বাচনী প্রচার বন্ধ করে দিয়েছেন। এর আগে হাতিয়া উপজেলার মূল ভূখণ্ডে সব ইউপি নির্বাচনে ব্যাপক অনিয়ম হওয়ার কারণে ভোটাররা আতঙ্কিত। আমাদের দাবি, ভোটগ্রহণের সময় প্রতিটি ভোটকেন্দ্রে ম্যাজিস্ট্রেট, বিজিবি ও র‌্যাব মোতায়েন রাখতে হবে। একই সঙ্গে আমরা যাতে নির্বিঘ্নে প্রচার চালাতে পারি তার ব্যবস্থা নিতে হবে। ’

আপনারা বিষের বোতল ও কাফনের কাপড় নিয়ে কেন অবস্থান নিয়েছেন—এ প্রশ্নে তিনি বলেন, যে ধরনের নির্বাচন হচ্ছে তা তামাশা মনে হচ্ছে। এই তামাশার নির্বাচনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতেই এই অবস্থান নিয়েছি।

২ নম্বর চানন্দী ইউপির চেয়ারম্যান পদে স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. আমিনুল ইসলামও সংসদ সদস্য আয়েশা ফেরদৌসের স্বামী মোহাম্মদ আলীর বিরুদ্ধে অভিযোগ করে বলেন, ‘তাঁর নির্দেশেই আমাদের নির্বাচনী প্রচারে বাধা দেওয়া হচ্ছে। আমাদের পোস্টার ছিঁড়ে ফেলা হচ্ছে। আমরা সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন চাই। ’

সংরক্ষিত নারী প্রার্থী জাকিয়ো বেগম লাকি বলেন, ‘আমরা যেকোনো কিছুর বিনিময়ে সুষ্ঠু নির্বাচন চাই। আমরা এলাকায় থাকতে পারছি না। ’

১ নম্বর হরণী ইউপির ৪ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য প্রার্থী সালাহউদ্দিন বলেন, ‘এমপির স্বামী সমর্থিত প্রার্থী ছাড়া কাউকে নির্বাচনে প্রচার চালাতে দেওয়া হচ্ছে না। তাঁরা ভোটারদের বলছেন ইভিএমে ভোট হলেও তোমরা শুধু ফিঙ্গার দেবা। আর আমাদের লোকেরা ভোট দিয়ে দেবে। তোমরা ভোট দিতে পারবা না। আমরা সুষ্ঠু নির্বাচন চাই। ভোটাররা যাতে ভোট দিতে পারে কমিশনের কাছে সেই দাবি জানাই। ’

সংসদ সদস্য যা বললেন : গতকাল প্রার্থীদের এসব অভিযোগ সম্পর্কে জানতে চাইলে সংসদ সদস্য আয়েশা ফেরদৌস মোবাইল ফোনে কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘ওদের তো নির্বাচনী মাঠে থাকার কথা। প্রতীক পেয়ে গেছে। এখন ভোটারদের কাছে ভোট চাইবে। কিন্তু তা না করে ওরা ঢাকায় নির্বাচন ভবনে কেন? ওদের ওপর যদি কেউ অত্যাচার করে থাকে তাহলে এলাকায় আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর লোক আছেন, তাঁদের বলবে। ঢাকায় কেন যাবে ওরা। আমার আর এ বিষয়ে কিছু বলার নেই। ওরা যেসব অভিযোগ করছে তা মিথ্যা।

আয়েশা ফেরদৌস আরো বলেন, ‘যারা এসব অভিযোগ করছে তারা কেউ নির্বাচনী এলাকায় থাকে না। ১ নম্বর হরণী ও ২ নম্বর চানন্দী ইউপিতে নির্বাচন হচ্ছে ৩০ বছর পর। ওরা এসব কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে এ নির্বাচনকে বিতর্কিত করতে চাইছে। ’

নির্বাচন কমিশনের বক্তব্য : এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশনার মো. আলমগীর সাংবাদিকদের বলেন, ‘কেউ পেশিশক্তি ব্যবহার করে নির্বাচনে জয়লাভ করার চেষ্টা করলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। পাশাপাশি কোনো প্রার্থী যদি অন্য প্রার্থীকে নির্বাচনী প্রচারে বাধা দেয়, তাহলে তার বিরুদ্ধেও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। 

নিউজটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর..
ফেসবুকে আমরা...
ক্যালেন্ডার...

Sun
Mon
Tue
Wed
Thu
Fri
Sat