সেনাবাহিনী তাদের ঘূর্ণিঝড় আম্ফানে খুলনা এবং সাতক্ষীরা জেলার ক্ষতিগ্রস্ত বাঁধ সংস্কার/পুনর্নির্মাণ প্রকল্প সম্পন্ন করার পর স্থানীয় প্রশাসনের কাছে হস্তান্তর করেছে। আজ সোমবার খুলনা জেলার কয়রা উপজেলা ডাক বাংলোতে অনুষ্ঠানিকভাবে এ হস্তান্তর সম্পন্ন হয়। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ৫৫ পদাতিক ডিভিশনের ৩ ইঞ্জিনিয়ার ব্যাটালিয়ন এ প্রকল্পের দায়িত্ব ছিল।
আইএসপিআর জানায়, প্রকল্প হস্তান্তর অনুষ্ঠানে ৫৫ পদাতিক ডিভিশনের জেনারেল অফিসার কমান্ডিং ও যশোরের এরিয়ার এরিয়া কমান্ডার মেজর জেনারেল মো. নূরুল আনোয়ার-এর প্রতিনিধি হিসেবে ১০৫ পদাতিক ব্রিগেডের কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোল্লা মোহাম্মদ কামরুজ্জামান, প্রকল্প পরিচালক ৩ ইঞ্জিনিয়ার ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্নেল গাজী মাসুদ মো. মাহেনুর উপস্থিত ছিলেন।
তাঁরা বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলের প্রধান প্রকৌশলী এ কে এম তাহমিদুল ইসলামের কাছে এ প্রকল্প আনুষ্ঠানিকভাবে হস্তান্তর করেন। এ অনুষ্ঠানে স্থানীয় প্রশাসন, সেনাবাহিনী, পুলিশ, বিজিবি ও র্যাবের বিভিন্ন পদবীর কর্মকর্তারা এবং স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ ও গণমাধ্যম প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।
এই প্রকল্প শেষে খুলনা ও সাতক্ষীরা জেলার তিনটি উপজেলার প্রায় দুই লাখ মানুষ পানি মুক্ত হয়েছে। এছাড়াও তাদের ঘরবাড়ি, আবাদী জমি ও মাছের ঘের ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা পেয়েছে এবং ওই অঞ্চলের মানুষের জনজীবন স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে এসেছে।
উল্লেখ্য, গত ২০ মে বাংলাদেশের দক্ষিণ উপকূলে আঘাত হানে সাইক্লোন আম্ফান। সাইক্লোন সিডরের পর এটাই ছিল দেশের সবচেয়ে শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড়। ১০ নম্বর মহাবিপদ সংকেত ও ঘণ্টায় ১৫০ কিলোমিটার গতিসম্পন্ন এই সাইক্লোন দেশের ২৬টি জেলায় তাণ্ডব চালায়। প্রায় ২৬ লক্ষ লোক বাস্তুহারা হয়, দুই লাখের বেশি বাড়িঘর ধ্বংস হয়। এই সাইক্লোনে ২৬ জন প্রাণ হারান। সাইক্লোন আম্ফানের আঘাতের পরপরই সরকারি উদ্ধারকাজ ও পুনর্নির্মাণ কাজে সহায়তার জন্য সেনাবাহিনী প্রধানের নির্দেশে সেনাবাহিনীর ৫৫ পদাতিক ডিভিশন তাদের কার্যক্রম শুরু করে। সেনা সদস্যদের আপ্রাণ চেষ্টা ও অক্লান্ত পরিশ্রমে বিধ্বস্ত এই জনপদে এলাকাবাসীর পুনর্বাসন কার্যক্রম সফলভাবে সম্পন্ন হয়। সরকারি দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থার পাশাপাশি সেনাবাহিনীও ক্ষতিগ্রস্ত বাঁধ মেরামতে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করে।
পুনর্বাসন কার্যক্রম চালু থাকা অবস্থাতেই ২০২১ সালের আগস্ট মাসে ভারী মৌসুমী বৃষ্টিপাতের ফলে আম্ফানে ক্ষতিগ্রস্ত খুলনা জেলার কয়রা উপজেলা ও সাতক্ষীরা জেলার শ্যামনগর ও আশাশুনি উপজেলার ১১টি জায়গায় প্রায় ১০ দশমিক ৫৩ কিলোমিটার বাঁধ ভেঙে প্রায় ৫০ হাজার পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এই অবস্থায় বারবার বাঁধের ভাঙন রোধে সরকার দ্রুত বাঁধ মেরামত ও সংস্কার এবং টেকসই বাঁধ নির্মাণের জন্য সেনাবাহিনীকে দায়িত্ব দেয়। করোনা মহামারির মধ্যেও সেনাবাহিনী নির্ধারিত সময়ের আগেই প্রকল্পের কাজ শেষ করে।
এ জাতীয় আরো খবর..