মালয়েশিয়ার মানবসম্পদ মন্ত্রী দাতুক সেরি এম সারাভানান আগামী ১ জুন ঢাকায় আসছেন। প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মস্থান মন্ত্রণালয়ের আমন্ত্রণে সারাভানানের এ সফরে মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার উন্মুক্ত করতে ফলপ্রসূ আলোচনা হতে পারে। এ বিষয়ে ২ জুন দুই দেশের শীর্ষস্থানীয় নীতিনির্ধারকরা বৈঠকে বসবেন। মালয়েশিয়ার মন্ত্রীর এই সফর ও বৈঠক নিয়ে আগ্রহী অনেকেই।
এ খাতের সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা আশা করছেন, ২ জুনের বৈঠকে মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার বাংলাদেশিদের জন্য উন্মুক্ত করার সব প্রতিবন্ধকতা দূর হতে পারে।
জানা যায়, গত ২৬ মে তিনজন সংসদ সদস্য প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রীকে চিঠি দেন। চিঠির সঙ্গে গত ২৪ মে ‘বৈদেশিক কর্মসংস্থান বৃদ্ধি এবং বন্ধ শ্রমবাজার উন্মুক্তকরণ’ শীর্ষক একটি মতবিনিময়সভার পরামর্শ এবং ওই সভায় উপস্থিত বায়রার ৫২৯ জন সদস্যের স্বাক্ষরযুক্ত তালিকা পাঠানো হয়।
চিঠিতে বলা হয়, গত ১৯ ডিসেম্বর দুই দেশের মধ্যে একটি সমঝোতা স্মারক সইয়ের পর বাংলাদেশের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নিয়েছে মালয়েশিয়া। এর ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশি কর্মীদের নিয়োগের লক্ষ্যে বাংলাদেশি রিক্রুটিং এজেন্সির অনুকূলে বিপুলসংখ্যক চাহিদাপত্র পাওয়া গেছে। আরো চাহিদাপত্রের অনুমোদন প্রক্রিয়াধীন। কিন্তু দুঃখের বিষয়, মালয়েশিয়াস্থ বাংলাদেশ দূতাবাস নিয়োগকারী প্রতিষ্ঠানের অনুকূলে চাহিদাপত্র সত্যায়ন করছে না। এতে করে কর্মী নিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশি কর্মী নিয়োগে নিরুৎসাহিত হচ্ছে এবং তারা কর্মী নিয়োগের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের পরিবর্তে নেপাল, ইন্দোনেশিয়া, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কাসহ বারোটি সোর্স কান্ট্রির দিকে ঝুঁকে পড়ছে। এতে বিশাল সম্ভাবনাময় মালয়েশিয়ার শ্রমবাজারটি ক্রমান্বয়ে হাত ছাড়া হওয়ার উপক্রম হয়েছে।
চিঠিতে ২৪ মের মতবিনিময়সভা সম্পর্কে বলা হয়, ওই সভায় অভিবাসী কর্মীদের এবং দেশের বেকার জনশক্তির কর্মসংস্থান ও বর্তমান অর্থনৈতিক মন্দাবস্থা থেকে উত্তরণের লক্ষ্যে মালয়েশিয়ার শ্রমবাজারকে বাধাগ্রস্ত না করে দুই দেশের স্বার্থ রক্ষা করে উন্মুক্ত করার আহ্বান জানানো হয়। কর্মী গ্রহণকারী দেশের চাহিদা এবং বাংলাদেশ সরকার নির্দেশিত প্রক্রিয়া অনুসরণ করে স্বল্প অভিবাসন ব্যয়ে সব রিক্রুটিং এজেন্সি মালয়েশিয়ায় কর্মী পাঠাতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ বলে সভায় জানানো হয়।
এদিকে আন্তর্জাতিক শ্রমবাজারের সঙ্গে সম্পৃক্ত একটি সংগঠন গতকাল রবিবার জানায়, মালয়েশিয়ার মানবসম্পদ মন্ত্রী দাতুক সেরি এম সারাভানানের সফর উপলক্ষে একটি চক্র তৎপর হয়েছে। এরা চায় না মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার উন্মুক্ত হোক।
এদের দাবি, মালয়েশিয়ার মানবসম্পদ মন্ত্রীর ঢাকা সফরের ঠিক আগের দিন ৩১ মে বায়রার কিছুসংখ্যক সদস্য বা রিক্রুটিং এজেন্সি ঢাকায় প্যানপ্যাসিফিক সোনারগাঁও হোটেলে সভা ডেকেছে। এর আগেও তারা মিছিল, মানববন্ধন করে মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার উন্মুক্ত করতে দুই সরকারের প্রচেষ্টাকে জটিল করে তোলার চেষ্টা করেছে। আবারও এই ধরনের সভা-সমাবেশ মাধ্যমে মালয়েশিয়ার মন্ত্রী ও উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের অসন্তুষ্ট হওয়ার মতো কিছু ঘটার আশঙ্কা করা হচ্ছে। এতে যাওয়ার প্রক্রিয়া ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
বায়রার একজন সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, দেশ ও অভিবাসী কর্মীদের স্বার্থের কথা বিবেচনায় নিয়ে অযৌক্তিক এবং ষড়যন্ত্রমূলক কর্মকাণ্ড পরিহার করা উচিত। পাশাপাশি দেশের বেকার সমস্যা সমাধান, অভিবাসন কর্মীদের স্বার্থ এবং সর্বোপরি দেশের কল্যাণে মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার উন্মুক্ত করতে সবার সহযোগিতা দরকার। মালয়েশিয়ায় শ্রমবাজার উন্মুক্ত হলে দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের ওপর চাপ কমবে এবং রেমিট্যান্সপ্রবাহ বাড়বে।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানান, ২০১৭-২০১৮ সালের মতো এবারও মালয়েশিয়ার সরকার কর্মী নিয়োগের সামগ্রিক প্রক্রিয়াটি অনলাইনভিত্তিক করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সুতরাং কর্মী পাঠাতে কোনো ধরনের বিলম্ব হবে না। অত্যন্ত স্বচ্ছ ও সহজ পদ্ধতিতে এবং স্বল্প সময়ে কর্মী পাঠানো সম্ভব হবে। মালয়েশিয়ায় কর্মীদের বেতন মধ্যপ্রাচ্যসহ আরো অনেক দেশের তুলনায় বেশি।
এ জাতীয় আরো খবর..