হামাস নেতা ইসমাইল হানিয়া হত্যায় ইসরায়েলের ওপর প্রতিশোধ নেওয়ার হুমকি তুলে নিতে পশ্চিমা দেশগুলোর আহবান প্রত্যাখ্যান করেছে ইরান। পশ্চিমা দেশগুলোর অনুরোধকে রাজনৈতিক যুক্তির অভাব, আন্তর্জাতিক আইনের নীতির সঙ্গে সাংঘর্ষিক এবং ইসরায়েলের প্রতি প্রকাশ্য ও বাস্তব সমর্থন বলে আখ্যা দিয়েছে ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
ইসরায়েলকে রক্ষা করতে পশ্চিমা দেশগুলোর সংযমের আহ্বানের কঠোর সমালোচনা করেছেন ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র নাসের কানানি। গতকাল মঙ্গলবার তিনি বলেছেন, ফ্রান্স, জার্মানি ও যুক্তরাজ্য ইসরায়েলের আন্তর্জাতিক অপরাধের ব্যাপারে কোনো আপত্তি তোলেনি।
তারাই এখন নির্লজ্জভাবে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে কোনো প্রতিবন্ধকতামূলক পদক্ষেপ না নিতে ইরানকে আহবান জানাচ্ছে। অথচ ইসরায়েল ইরানের সার্বভৌমত্ব ও আঞ্চলিক অখণ্ডতা লঙ্ঘন করেছে। গত ৩১ জুলাই ইরানের রাজধানী তেহরানে অতিথিশালায় নিহত হন হামাস নেতা ইসমাইল হানিয়া। ইরান এই হত্যাকাণ্ডে ইসরায়েলকে দায়ী করে কঠিন বদলা নেওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছে।
এদিকে হানিয়া হত্যার কয়েক ঘণ্টা আগে লেবাননে ইরান সমর্থিত হিজবুল্লাহ গোষ্ঠীর কমান্ডার ফুয়াদ শোকরকে হত্যা করে ইসরায়েল। ১১ মাস ধরে গাজায় ইসরায়েলের নির্বিচার হামলা ঘিরে এমনিতেই মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনা বিরাজ করছে। সেখানে হানিয়া ও ফুয়াদ হত্যায় মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনার পারদ আরো চড়েছে। যুক্তরাষ্ট্র ও তার ইউরোপীয় মিত্ররা গত সোমবার ইরানকে ‘মাথা ঠাণ্ডা’ করতে অনুরোধ জানায়।
ইরান ও তার মিত্ররা চলতি সপ্তাহেই আক্রমণ চালাতে পারে বলে সাবধান করেছে হোয়াইট হাউস। ইসরায়েলও একই মূল্যায়ন করেছে বলে জানায় হোয়াইট হাউস। ইরানের আক্রমণ থেকে মিত্র দেশ ইসরায়েলকে রক্ষায় মধ্যপ্রাচ্যে গাইডেড ক্ষেপণাস্ত্রবাহী ডুবোজাহাজ পাঠিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।
যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার, ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাখোঁ, জার্মান চ্যান্সেলর ওলাফ শোলজ গত সোমবার এক যৌথ বিবৃতিতে মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনা প্রশমনে ইরান ও তার মিত্রদের ইসরায়েলের বিরুদ্ধে আক্রমণ চালানো থেকে বিরত থাকার আহবান জানান। এ ব্যাপারে ইরানের প্রেসিডেন্ট পেজেশকিয়ানকে ফোন করে অনুরোধও করেন স্টারমার ও শোলজ।
তবে পেজেশকিয়ান তাঁদের সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, আগ্রাসনকারীকে জবাব দেওয়ার অধিকার ইরানের আছে।
মস্কোয় পুতিন-আব্বাস সাক্ষাৎ
মস্কোয় গতকাল রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস। পুতিন বলেছেন, গাজায় সাধারণ মানুষ নিহতের ঘটনায় মস্কো উদ্বিগ্ন। ফিলিস্তিন ও ফিলিস্তিনি জনগণকে সহায়তায় মস্কো সব কিছুই করছে বলে মন্তব্য করেন পুতিন। তিনি বলেন, ইসরায়েল-ফিলিস্তনি অঞ্চলে টেকসই ও নির্ভরযোগ্য স্থিতিশীল শান্তি আনার একমাত্র উপায় হলো জাতিসংঘের প্রস্তাবের বাস্তবায়ন এবং পূর্ণাঙ্গ ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র গঠন। পুতিনের সঙ্গে সাক্ষাৎকারে আব্বাস রাশিয়াকে ফিলিস্তিনের অন্যতম প্রিয় বন্ধু বলে তুলে ধরেন।
শুধু বেঁচে গেছে শিশুটি
ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলের নির্বিচার হামলাযজ্ঞ চলছেই। গতকাল এক চিকিৎসক জানান, গত সোমবার দিবাগত রাতে দক্ষিণ গাজার খান ইউনিসে একটি বাড়িতে ইসরায়েলি বাহিনীর হামলায় এক পরিবারের ১০ জন নিহত হয়েছে। এই হামলায় শুধু পরিবারের তিন মাস বয়সী এক মেয়েশিশুই কেবল প্রাণে রক্ষা পেয়েছে। ইবরাহিম বারবাখ নামের স্থানীয় এক বাসিন্দা জানান, রিম নামের ওই শিশুকে ধ্বংসস্তূপ থেকে উদ্ধার করা হয়েছে। সে তার মা-বাবা আর পরিবারের আট সদস্যকে হারিয়ে এতিম হয়ে গেছে। তাকে এখন কে দেখবে বলে উদ্বেগ প্রকাশ করেন ইবরাহিম। গতকাল বুরেজ শরণার্থীশিবির, দেইর আল-বালাহসহ মধ্য গাজায় ব্যাপক হামলা চালিয়েছে ইসরায়েলি বাহিনী।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় গতকাল স্থানীয় সময় দুপুরে জানায়, সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় অন্তত ৩২ ফিলিস্তিনি নিহত এবং ৮৮ জন আহত হয়েছে। এ নিয়ে গত অক্টোবর থেকে গাজায় নিহতের সংখ্যা বেড়ে ৩৯ হাজার ৯২৯ জনে দাঁড়িয়েছে। আহত হয়েছে ৯২ হাজার ২৪০ জন।
সূত্র : এএফপি, আলজাজিরা
এ জাতীয় আরো খবর..