মেট্রো রেলের ভাড়া বাড়ানোর সিদ্ধান্ত এখন পর্যন্ত হয়নি। তবে গত ১ জুলাই থেকে মেট্রোর ওপর ভ্যাট আরোপ হয়েছে। চলতি মাস থেকেই ভ্যাটের টাকা পরিশোধ করা শুরু করতে হবে। কিন্তু ভ্যাটের টাকা যাত্রীর ভাড়ার সঙ্গে সমন্বয় করা হবে কিনা সেই সিদ্ধান্ত হয়নি।
এটি নির্ধারণ করতে একটি কমিটি গঠন করা হচ্ছে। আগামী ২১ জুলাইয়ের মধ্যে এনবিআরের নতুন সিদ্ধান্ত না হলে যাত্রীর ভাড়ায় ভ্যাট অন্তভুক্ত হতে পারে।
মেট্রো রেলের সেবার ওপর মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট) আরোপ করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। এই ভ্যাটের টাকা পরিশোধ করতে হবে মেট্রো পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠান ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কম্পানি লিমিটেডকে (ডিএমটিসিএল)।
তবে ভ্যাটের টাকা কীভাবে পরিশোধ করা হবে- সেই সিদ্ধান্ত কম্পানিটি এখনও নিতে পারেনি।
আজ বৃহস্পতিবার সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের সভা কক্ষে এনবিআর, মন্ত্রণালয় কর্তৃপক্ষ ও ডিএমটিসিএলের প্রতিনিধিদের মধ্যে একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে ভ্যাট সংক্রান্ত নানা বিষয় নিয়ে আলচনা হয়েছে।
বৈঠক ডিএমটিসিএল ভ্যাট রোহিত করার বিষয়ে কথা বলেছে।
মেট্রো কর্তৃপক্ষ নতুন কম্পানি এবং গণপরিবহন হিসেবে ভ্যাট ছাড় চেয়েছে। যদি একেবারে ছাড় দেওয়া সম্ভব না হয় সে ক্ষেত্রে ১৫ শতাংশ থেকে ৫ শতাংশে ভ্যাট নামিয়ে নামার অনুরোধ করা হয়েছে।
কিন্তু এনবিআর বলছে, ভ্যাট রোহিত করার ক্ষমতা তাদের নেই। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় বা অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে কোনো নির্দেশ আসলে সেটি এনবিআর বাস্তবায়ন করবে। আর ভ্যাটের টাকা তারা প্রতি মাসে কম্পানির কাছ থেকে বুঝে নিবে।
আর ভ্যাটের টাকা দিতে কম্পানি যাত্রীর ভাড়া সমন্বয় করবে কিনা- সেই সিদ্ধান্ত কম্পানিকেই নিতে হবে।
বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন এমন একজন নাম প্রকাশ না করা শর্তে কালের কণ্ঠকে বলেন, ডিএমটিসিএলের ওপর ভ্যাট আরোপ হয়ে গেছে। কিন্তু এই ভ্যাটের টাকা কীভাবে পরিশোধ করা হবে সেটি এখনও পরিস্কার নয়। যদি টিকিটের টাকার ভেতর ভ্যাট অন্তভুক্ত থাকে তাহলে ১০০ টাকায় ১৩ টাকা ভ্যাট দিতে হবে। আর যদি বিক্রয় মূল্যের ওপর ভ্যাট দিতে হয় তাহলে ভ্যাট হবে ১৫ টাকা।
জানতে চাইলে ডিএমটিসিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম এ এন ছিদ্দিক কালের কণ্ঠকে বলেন, 'এ বিষয়ে মন্ত্রণালয় থেকে কথা বলবে। আমি কথা বলার জন্য অথরাইজড না।'
২০২৩ সালে মেট্রোর সেবার ওপর ভ্যাট যুক্ত করতে এনবিআর থেকে উদ্যোগ নেওয়া হয়। তখন মেট্রো কর্তৃপক্ষের অনুরোধে ভ্যাট মওকুফ করা হয়েছিল। ২০২৩ সালের মে মাসে এনবিআর প্রজ্ঞাপন জারি করে জানায়, ২০২৪ সালের জুন মাস পর্যন্ত মেট্রোরেলের টিকিটের ওপর ভ্যাট মওকুফ থাকবে। সেই বিবেচনায় ১ জুলাই থেকে ভ্যাট যুক্ত হয়েছে।
এ নিয়ে ডিএমটিসিএলকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। সেই চিঠির বিপরীতে ভ্যাট মওকুফ চেয়ে পাল্টা চিঠি দিয়েছে ডিএমটিসিএল। এমনকি ভ্যাট কমানো বা রোহিতের বিষয়ে এখনও মেট্রো কর্তৃপক্ষ আশাবাদী।
নাম প্রকাশ না করে ডিএমটিসিএলের উচ্চপদস্ত এক কর্মকর্তা কালের কণ্ঠকে বলেন, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে মেট্রোর ভ্যাট রোহিতের বিষয়টি তুলে ধরা হবে। কেন না, যাত্রীর কাছে ভ্যাট নিয়ে এত দ্রুত ভাড়া বাড়ানো ঠিক হবে না। আর ভ্যাট ডিএমটিসিএল দিলে কম্পানির লোকসান গুনতে হবে। সে ক্ষেত্রে কম্পানির পক্ষ থেকে সরকারের কাছে ভর্তুকি চাওয়া হবে।
এদিকে গত ৩০ জুন ডিএমটিসিএলের সচিব মোহাম্মদ আবদুর রউফ স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে বলা হয়, যাত্রী সেবার ওপর ভ্যাট দিতে হিসাবের ব্যবস্থায় একটি ভ্যাটের কলাম যুক্ত করতে বলা হয়।
চিঠিতে আরো বলা হয়, মেট্রোরেলের সেবার ওপর ২০২২ সালের ২৮ ডিসেম্বর থেকে ২০২৪ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত ভ্যাট অব্যাহতি দেয় এনবিআর। ভ্যাটের অব্যাহতি অব্যাহত রাখতে গত ১৯ মে এনবিআরকে চিঠি দেওয়া হয়েছি। কিন্তু এই চিঠির বিপরীতে এনবিআর থেকে কোনো সিদ্ধান্ত পাওয়া যায়নি। আগামী ২১ জুলাইয়ের মধ্যে কোনো সিদ্ধান্ত পাওয়া না গেলে যাত্রীদের কাছ থেকে আদায় করা ভাড়ায় স্বয়ংক্রিয়ভাবে ভ্যাট অন্তর্ভুক্ত করা প্রয়োজন হবে।
এ জাতীয় আরো খবর..