×
  • প্রকাশিত : ২০২৪-০৬-২৬
  • ১১৫ বার পঠিত
দুই বছর আগে শুরু হওয়া ডলারের সংকটে এখনো ভুগছে বাংলাদেশ। বৈদেশিক মুদ্রার মজুদ বাড়াতে সাম্প্রতিক সময়ে যেসব পদক্ষেপ নেওয়া হয়, সেগুলো রিজার্ভ বাড়াতে ব্যর্থ হয়েছে। এখন বিদেশি ঋণ ও প্রবাসীদের পাঠানো আয়েই (রেমিট্যান্স) ভরসা করছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এই দুই সূচকের ওপর নির্ভর করে ক্রমে রিজার্ভ পতনের গতি কিছুটা কমেছে।

বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।
ঈদুল আজহা এবং ডলারের দাম সাত টাকা বৃদ্ধির কারণে বেড়েছে প্রবাস আয়ের প্রবাহ। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, জুন মাসের প্রথম ২১ দিনে দেশে এসেছে ১৯১ কোটি ডলার। এর আগে গত মে মাসে এসেছে চলতি অর্থবছরের সর্বোচ্চ ২২৫ কোটি ৩৮ লাখ ৮০ হাজার ডলার, যা গত ৪৬ মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ।

রিজার্ভের পতন রোধে বিদেশি  ঋণ ও রেমিট্যান্সই ভরসা

এপ্রিল, মার্চ, ফেব্রুয়ারি ও জানুয়ারিতে দেশে যথাক্রমে রেমিট্যান্স আসে ২০৪ কোটি ৩০ লাখ ৬০ হাজার, ১৯৯ কোটি ৬৮ লাখ ৫০ হাজার, ২১৬ কোটি ৬০ লাখ এবং ২১০ কোটি ৯ লাখ ৫০ হাজার ডলার।

ডলার সংকটের মধ্যে আর্থিক হিসাব ও চলতি হিসাবে ঘাটতি হওয়ায় ২০২২ সালের জুলাইয়ে আইএমএফের কাছে ঋণ চায় বাংলাদেশ। ছয় মাস পর সংস্থাটি গত বছরের ৩০ জানুয়ারি ৪৭০ কোটি ডলার ঋণ অনুমোদন করে। এর তিন দিনের মাথায় ২ ফেব্রুয়ারি ঋণের প্রথম কিস্তিতে ৪৭ কোটি ৬৩ লাখ ডলার ও গত ডিসেম্বর মাসে দ্বিতীয় কিস্তিতে ৬৮ কোটি ১০ লাখ ডলার পেয়েছে বাংলাদেশ।

গত ২৪ জুন ঋণের তৃতীয় কিস্তি বাবদ ১১১ কোটি ডলার অনুমোদিত হয়েছে। সব মিলিয়ে তিন কিস্তিতে আইএমএফ থেকে ২২৬.৭৩ কোটি ডলারের ঋণ পেয়েছে বাংলাদেশ। সাত কিস্তিতে পুরো ঋণ পাওয়া যাবে বলে জানা গেছে।

বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, রিজার্ভের পতন ঠেকাতে গত বছর থেকে আমদানি সীমিত করেছে সরকার। এর পরও প্রতি মাসে আমদানি দায় মেটানোর জন্য গড়ে প্রায় ৫০০ কোটি ডলার প্রয়োজন হচ্ছে।

এর সঙ্গে পরিশোধ করতে হচ্ছে বিদেশ থেকে নেওয়া ঋণ ও তার সুদ। ফলে রপ্তানি আয় দিয়ে পুরো দায় মেটানো সম্ভব হচ্ছে না। আইএমএফের হিসাবে, ব্যবহারযোগ্য প্রকৃত রিজার্ভের অর্থ দিয়ে তিন মাসেরও আমদানি খরচ মেটানো যাবে না বলে জানান কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য মতে, গত ১৯ জুন দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ছিল ১৯.৫১ বিলিয়ন ডলার। তবে দু-এক দিনের মধ্যে আইএমএফের ১.১১ বিলিয়ন ডলারের ঋণের অর্থ বাংলাদেশের রিজার্ভে যুক্ত হবে। এতে কিছুটা বাড়বে রিজার্ভ। তবে রপ্তানি আয়, বিদেশি বিনিয়োগ ও রেমিট্যান্স বাড়াতে না পারলে রিজার্ভ সমস্যার সমাধান সম্ভব নয় বলে মত বিশ্লেষকদের।

বিশ্বব্যাংকের বাংলাদেশ কার্যালয়ের সাবেক মুখ্য অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন বলেন, দেশের আর্থিক খাতের স্থিতিশীলতার জন্য ভালো অঙ্কের রিজার্ভ থাকা জরুরি। এখন রিজার্ভ যে পর্যায়ে নেমে এসেছে, তা নিয়ে যথেষ্ট শঙ্কার কারণ আছে। কারণ এই রিজার্ভ দিয়ে দেশের তিন মাসেরও আমদানি দায় মেটানো যাবে না। ভারতের ১২-১৩ মাস ও ভিয়েতনামের সাত-আট মাসের আমদানি দায় মেটানোর মতো রিজার্ভ আছে।

জাহিদ হোসেন বলেন, আমদানি নিয়ন্ত্রণ করে দেশের কাঙ্ক্ষিত জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জন করা সম্ভব নয়। উৎপাদন বাড়িয়ে ভালো জিডিপি অর্জন করতে যন্ত্রপাতি, কাঁচামাল ও মধ্যবর্তী পণ্য আমদানি বাড়াতে হবে। এ জন্য আমদানি পাঁচ বিলিয়ন ডলার থেকে বাড়িয়ে সাত বিলিয়ন ডলারে উন্নীত করতে হবে।

১৫ মে এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নে (আকু) মার্চ ও এপ্রিল মাসের দায় মেটানোর পর বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাবে মোট রিজার্ভ কমে ২৩.৭৭ বিলিয়ন বা দুই হাজার ৩৭৭ কোটি ডলারে নেমে আসে। আইএমএফের হিসাবপদ্ধতি বিপিএম ৬ অনুযায়ী তা ছিল ১৮.৩২ বিলিয়ন বা এক হাজার ৮৩২ কোটি ডলার। তবে প্রকৃত বা দায়হীন রিজার্ভ এখন ১৩ বিলিয়ন বা এক হাজার ৩০০ কোটি ডলারের কিছুটা কম। ওই মাসে ডলারের দাম এক লাফে সাত টাকা বৃদ্ধি এবং ঈদ ঘিরে রেমিট্যান্স বাড়াতে শুরু করে। ফলে রিজার্ভের পরিমাণ কিছুটা বাড়ে। এখন দেশের রিজার্ভ ১৯.৫১ বিলিয়ন ডলার।

আইএমএফের ঋণ যুক্ত হলে আরো এক বিলিয়ন ডলার বাড়বে বলে জানিয়েছেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা। জুলাইয়ে আকুর বিল (মে ও জুন) পরিশোধ করলে আবার রিজার্ভে টান পড়তে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

নিউজটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর..
ফেসবুকে আমরা...
ক্যালেন্ডার...

Sun
Mon
Tue
Wed
Thu
Fri
Sat