পাঁচটি কাজকে গুরুত্ব দিয়ে নতুন মিশনের কথা জানিয়েছেন র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র্যাব) নতুন মহাপরিচালক (ডিজি) অতিরিক্ত আইজিপি ব্যারিস্টার মো. হারুন অর রশিদ।
রোববার র্যাবের সব ব্যাটালিয়নের অধিনায়কদের সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা বিষয়ক বিশেষ সভা শেষে রাজধানীর কুর্মিটোলায় র্যাব সদর দপ্তরে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় তিনি এ কথা জানান।
সভায় সিদ্ধান্ত হওয়া পাঁচটি কাজকে গুরুত্ব দেওয়া হবে জানিয়ে র্যাব মহাপরিচালক বলেন, ‘মাদক উদ্ধার, অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার, সন্ত্রাস, উগ্রবাদ ও জঙ্গিবাদ দমন এবং কিশোর গ্যাং কালচার নির্মূল নিয়ে আমরা জোরালভাবে কাজ শুরু করেছি। এই কাজগুলোকে গুরুত্ব দিয়ে আমাদের নতুন মিশন শুরু হবে।’
র্যাবের নতুন ডিজি বলেন, এই পাঁচটি বিষয়ের মধ্যে অন্যতম প্রধান মাদক ও অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার। এরপর সন্ত্রাস, উগ্রবাদ ও জঙ্গিবাদ দমন এবং সবশেষে কিশোর গ্যাং কালচার নির্মূল করা।
তিনি বলেন, মাদক আমাদের যুব সমাজকে ধ্বংসের পথে নিয়ে গেছে। তাই মাদক নির্মূলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পাশাপাশি সামাজিক আন্দোলনও দরকার। সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় কাজ করলে সমাজ থেকে মাদক নির্মূল করা সম্ভব হবে।
র্যাব মহাপরিচালক বলেন, অনেক ক্ষেত্রে গণমাধ্যমই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর আগে খবর জেনে যায়। তাই আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় গণমাধ্যমের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। তাই আমি মাদক নির্মূলে শুধু সহযোগিতা নয়, সমাজ ও গণমাধ্যমের অংশীদারিত্ব চাই।
তিনি বলেন, সমাজ থেকে উগ্রবাদ, সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ দমনে র্যাব দীর্ঘদিন ধরে কাজ করে আসছে। সামনেও সেই কাজের পরিধি আরও বাড়ানো হবে।
কিশোর গ্যাং কালচার নিয়ে র্যাব মহাপরিচালক বলেন, ইদানীং কিশোর গ্যাংয়ের উৎপাত বেড়ে চলেছে। এই কিশোর গ্যাংয়ের বেশিরভাগই তরুণ প্রজন্ম। এদের কিশোর অপরাধ থেকে মুক্ত করতে চাই। এ নিয়ে আমরা জোরালভাবে কাজ করছি। সাসটেইনেবল সমাজ প্রতিষ্ঠায় গ্যাং কালচারে জড়ানো কিশোরদের সংশোধন করে মূলধারায় কিভাবে আনা যায় সে চেষ্টা করবে র্যাব।
তিনি বলেন, এমনকি যারা কিশোর গ্যাং পরিচালনা করছে সেদিকেও নজর দিচ্ছি। যে অপরাধ করে, আর যে অপরাধ করায় দুজনই অপরাধী। উভয়কেই আইনের আওতায় আনা হবে এবং কিশোর গ্যাং নির্মূলে রাজনৈতিক ব্যক্তিদের সম্পর্ক খুঁজে পেলে তাদের বিরুদ্ধেও আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
র্যাবের মহাপরিচালক আরও বলেন, অনলাইন গেমের মাধ্যমে জুয়া বন্ধেও আমরা কাজ করব। অনলাইন জুয়া প্রতিরোধে আমাদের সাইবার ক্রাইম ইউনিট কাজ করছে। তিনি বলেন, আজকে সিও (অধিনায়ক) পর্যায়ে কনফারেন্স ছিল। আমি তাদের বেশকিছু বিষয়ে নির্দেশনা দিয়েছি। এলিট ফোর্স হিসেবে র্যাবকে উদ্ভাবনী হতে হবে। মানুষকে সেবা দেওয়া, অপরাধ দমন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষা, জঙ্গি সন্ত্রাস দমন, মাদক উদ্ধারসহ অভিযানিক কার্যক্রমকে আরও গতিশীল করার নির্দেশনা দিয়েছি। এ জন্য প্রযুক্তিগত সক্ষমতা বৃদ্ধির মাধ্যমে র্যাবকে স্মার্ট বাহিনী হিসেবে কর্মপরিধি বাড়ানোর নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
আইনবিরোধী কোনো কাজ করে র্যাব সদস্যরা ছাড় পাবেন না জানিয়ে র্যাব ডিজি বলেন, র্যাবের প্রতি মানুষের যে আস্থা ও বিশ্বাস সেটা আরও বাড়াতে চাই। সর্বোচ্চ পেশাদারিত্বের সঙ্গে অর্পিত দায়িত্ব পালনে প্রত্যেকটি ব্যাটালিয়নকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। র্যাবের প্রতিটি সদস্যকে সব ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ শৃঙ্খলা বজায় রাখা, চেইন অব কমান্ড অনুসরণ এবং শৃঙ্খলা পরিপন্থি কাজ হতে বিরত থাকার বিষয়ে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। কোনো র্যাব সদস্য যদি আইনবহির্ভূত কাজ করেন বা অসৎ উদ্দেশ্যে কোনো কাজ করেন কিংবা কোনো সদস্যের বিরুদ্ধে দুর্নীতির প্রমাণ পাওয়া যায়; তাদের বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
মানবাধিকার সমুন্নত রাখার ব্যাপারে নতুন র্যাব মহাপরিচালক বলেন, আমরা মানুষের মৌলিক অধিকার ও মানবাধিকার সমুন্নত রাখতে চাই। র্যাবের কোনো সদস্য অবশ্যই মানবাধিকার লঙ্ঘনের মতো কাজে জড়াবে না। কোনো সদস্য যদি কারো মানবাধিকার হরণ করতে চায় তাহলে তাকে আইনের আওতায় আনা ও তার বিরুদ্ধে আইনানুগ পদক্ষেপ নেওয়া হবে। বাংলাদেশের সংবিধান অনুসৃত মৌলিক মানবাধিকারগুলো সমুন্নত রাখার বিষয়টি আরও বেশি গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হবে।
এ সময় তিনি পুরোপুরি সচেতন থেকে মানবাধিকার, জেন্ডার সংবেদনশীল বিষয়কে সমুন্নত রেখে আন্তরিকতা ও নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করার ওপর গুরুত্বারোপ করেন।
রাষ্ট্রীয় শৃঙ্খলা, জননিরাপত্তা এবং অপরাধ দমন ও নিয়ন্ত্রণসহ সব অভিযানিক কার্যক্রমে আইনের যথাযথ প্রয়োগ নিশ্চিত করার ওপর র্যাব মহাপরিচালক গুরুত্বারোপ করে বলেন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষা, জননিরাপত্তা ও জনশৃঙ্খলা, অপরাধ দমন ও নিয়ন্ত্রণের মতো চ্যালেঞ্জের পাশাপাশি মাদক, জঙ্গি, সন্ত্রাস, কিশোর গ্যাং, আর্থিক অনিয়ম, অনলাইন প্রতারণা, সাইবার ক্রাইমের মতো বিভিন্ন ধরনের অপরাধ সংঘটিত হচ্ছে। র্যাব ও অন্যান্য আইন প্রয়োগকারী সংস্থা দীর্ঘদিন ধরেই এসব অপরাধের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করে আসছে। আইনানুযায়ী নিয়মতান্ত্রিকভাবে অভিযান জোরদার করতে সুস্পষ্ট দিকনির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। কেউ যেন বেআইনি বা আইনবহির্ভূত কোনো কাজে না জড়ান বা অপেশাদার কাজ না করেন, সে ব্যাপারে গুরুত্ব দিয়ে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
দুর্নীতির বিরুদ্ধে ‘জিরো টলারেন্স’ উল্লেখ করে র্যাব মহাপরিচালক বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দুর্নীতি দমন ও প্রতিরোধের মাধ্যমে দেশের প্রকৃত আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের জন্য একটি সুশাসনভিত্তিক রাষ্ট্রীয় কাঠামো প্রতিষ্ঠার জন্য দুর্নীতির বিরুদ্ধে ‘জিরো টলারেন্স’ নীতির ঘোষণা দিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী দুর্নীতির বিরুদ্ধে র্যাবের দৃঢ় অবস্থান পুনরায় উল্লেখ করেন তিনি।
এ ছাড়া বাহিনীর অভ্যন্তরীণ শৃঙ্খলা বজায় রাখার ব্যাপারে সবাইকে সচেষ্ট থাকার আহ্বান জানান র্যাব মহাপরিচালক। তিনি র্যাব সদস্যদের বাহিনীর পবিত্র পোশাকের সম্মানহানি হয় এমন কাজ করা থেকে বিরত থেকে অর্পিত দায়িত্ব যথাযথভাবে পালনের আহ্বান জানান তিনি। শৃঙ্খলা পরিপন্থি কাজ হতে বিরত থাকার বিষয়েও নির্দেশনা দেন র্যাবের নতুন প্রধান।
এ জাতীয় আরো খবর..