ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম আনারকে হত্যার আগে তাঁর রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের সঙ্গে অন্তত ২৫ বার বৈঠক করেন মূল পরিকল্পনাকারী আখতারুজ্জান শাহীন। উদ্দেশ্য হাসিলে দীর্ঘদিন ধরে নানা পরিকল্পনা করেন তিনি। সময়ের প্রয়োজনে তিনি স্থানীয় রাজনৈতিক নেতাদের কাছে টানেন। তাঁদের পেছনে তিনি বিনিয়োগ করেন বিপুল অর্থ।
নিষিদ্ধঘোষিত পূর্ব বাংলার কমিউনিস্ট পার্টি (এমএলএম) সন্ত্রাসী বাহিনীর সহযোগীদের নিয়ে তিনি এই হত্যা পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করেন। গতকাল শনিবার ঝিনাইদহ স্থানীয় গোয়েন্দা সূত্র এসব তথ্য দিয়েছে।
নাম প্রকাশ না করে স্থানীয় এক গোয়েন্দা কর্মকর্তা বলেন, এলাকার যেকোনো নির্বাচনে শাহীন নেতাদের বিপুল নির্বাচনী খরচ দিতেন। স্থানীয় রাজনৈতিক ষড়যন্ত্রের কারণে এমপি আনারকে হত্যা করা হয়।
এর সঙ্গে মোটা অঙ্কের অর্থের বিনিময়ে ভাড়াটে সন্ত্রাসী হিসেবে যোগ দেন সর্বহারা নেতা আমান উল্লাহ ওরফে শিমুল ভুঁইয়াসহ তাঁর সহযোগীরা। প্রতিপক্ষ দীর্ঘদিন ধরে আনারকে হত্যার পরিকল্পনা করে। একাধিকবার দেশ ও দেশের বাইরে তারা আনারকে হত্যার চেষ্টা চালায়। শেষ পর্যস্ত কৌশলে ভারতে নিয়ে তারা আনারকে হত্যা করে।
ওই সূত্র আরো জানায়, হত্যার আগে আনারের ঘনিষ্ঠদেরও কাছে টানেন শাহীন। তাঁদের বিভিন্ন প্রলোভন দেখান। বিদেশে পাঠানোর লোভ দেখানো হয়। আনারের রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের সঙ্গেও ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক তৈরি করেন। অন্তত ২৫ বার তাঁরা ঝিনাইদহ জেলার বিভিন্ন গোপন জায়গায় বৈঠক করেন।
এমপি আনার হত্যার ঘটনায় মামলার তদন্তকাজ স্বাধীনভাবে এগিয়ে নিতে পুলিশকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার হাবিবুর রহমান। তিনি বলেন, ‘এমপি আনার হত্যার ঘটনায় করা মামলার তদন্ত সঠিকভাবে এগিয়ে চলছে। তদন্তে কারো হস্তক্ষেপ বা কোনো চাপ নেই। স্বাধীনভাবে আমরা তদন্তের কাজ চালিয়ে যাচ্ছি।’
ঈদুল আজহা উপলক্ষে গতকাল ডিএমপি সদর দপ্তরে সমন্বয় সভা শেষে প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন।
ঝিনাইদহ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাইদুল করিম মিন্টুকে গ্রেপ্তারের বিষয়ে কোনো চাপ বা এ বিষয়ে কোনো তদবির আসছে কি না—জানতে চাইলে ডিএমপি কমিশনার বলেন, ‘এমপি আনার হত্যা মামলার তদন্ত যাতে সুষ্ঠুভাবে হয়, সেভাবে আমাদের কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। এ বিষয়ে কোনো ধরনের হস্তক্ষেপ নেই। স্বাধীনভাবে তদন্ত করার জন্য আমাদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।’
এমপি আনার হত্যাকাণ্ডে জড়িত সন্দেহে ডিবির হাতে গ্রেপ্তার ঝিনাইদহ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাইদুল করিম মিন্টু বর্তমানে আট দিনের রিমান্ডে রয়েছেন।
ডিবি সূত্র জানায়, ঢাকার উত্তরায় মিন্টুর এক ঘনিষ্ঠ সহযোগীকে কঠোর নজরদারিতে রাখা হয়েছে। তাঁকে যেকোনো সময় আটক করা হতে পারে।
[প্রতিবেদন তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করেছেন ঝিনাইদহ সংবাদদাতা]
এ জাতীয় আরো খবর..