চোর পালানোর আগেই যথাযথ ব্যবস্থা নিতে পারলে অবৈধ সম্পদ অর্জনকারীদের আইনের আওতায় আনা সম্ভব বলে মন্তব্য করেছেন বিশ্লেষকরা। কিন্তু স্বাধীন সংস্থা দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) আচরণ অনেক ক্ষেত্রেই রহস্যজনক বলে মনে করেন তারা।
তিন বছর আগে ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ই-অরেঞ্জের গ্রাহকদের ১ হাজার ১০০ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ ওঠে বনানী থানার বরখাস্তকৃত পরিদর্শক সোহেল রানার বিরুদ্ধে। ভুক্তভোগীরা তার বিরুদ্ধে মামলা করলে গা ঢাকা দেন সোহেল। মাস খানেক পর তার খোঁজ মেলে ভারতে। অবৈধ অনুপ্রবেশের দায়ে সোহেলকে গ্রেফতার করে পশ্চিমবঙ্গের পুলিশ।
ব্যাংকপাড়ায় আলোচিত নাম প্রশান্ত কুমার হালদারও কয়েকটি আর্থিক প্রতিষ্ঠানকে পথে বসিয়ে দেশে ছেড়েছেন অনেক আগে। তার বিরুদ্ধে তদন্তের আঁচ পেয়ে দুদককে একরকম ঘোল খাইয়ে দেশ ছাড়েন তিনি। পিকে হালদারও পরে গ্রেফতার হন ভারতে।
বেসিক ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান আব্দুল হাই বাচ্চুর হদিস এখন পর্যন্ত পায়নি দুদক। জিজ্ঞাসাবাদ, মামলা, অভিযোগপত্র দিলেও তাকে গ্রেফতারের কোনো পদক্ষেপ নেই সংস্থাটির। বাচ্চু এখন কোথায় জানে না কেউ।
পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বেনজীর আহমেদের ক্ষেত্রেও ঘটেছে এমন ঘটনা। অনুসন্ধান শুরুর পর সপরিবারে দেশ ছাড়েন বেনজীর। তিনি এখন কোথায় জানে না দুদক এবং সরকার।
স্বভাবতই প্রশ্ন ওঠে অর্থপাচার কিংবা অভিযুক্ত ব্যক্তি দেশ ছাড়ার পর দুদকের হুঁশ কেন ফেরে? আইনজীবী ও দুদকের সাবেক কর্মকর্তারা বলছেন, কোনো ক্ষেত্রে স্বাধীন সংস্থা দুদকের আচরণ রহস্যজনক।
রিটকারী আইনজীবী সালাহ উদ্দিন রিগ্যান সময় সংবাদকে বলেন,
দুদক যখন অনুসন্ধান শুরু করেছে, তখনই তারা বুজতে পেরেছে যে এসব সম্পত্তি অবৈধভাবে অর্জন করেছেন বেনজীর আহমেদ। এজন্য এগুলো জব্দ করার জন্য আদেশ নিয়েছে সংস্থাটি। কিন্তু প্রথম দিকেই এগুলো জব্দ করা যেত। এতে তার বিদেশ যাওয়াটা ঠেকানো যেত। এক্ষেত্রে অবশ্যই দুদকের ব্যর্থতা রয়েছে।
দুদকের সাবেক মহাপরিচালক মো. মইদুল ইসলাম বলেন,
ছোট ছোট নয়, বড় বড় দুর্নীতি ধরার জন্য দুদক গঠন করা হয়েছে। এক্ষেত্রে নজরদারি করা, বাইরে যেতে না দেয়ার ব্যবস্থা নেয়া ছাড়াও গ্রেফতার করা উচিত ছিল দুদকের। এ কয়েকটা ক্ষেত্রে দুদকের ক্ষিপ্র গতির দরকার ছিল। সেই গতি দুদক দেখাতে পারেনি। এখন অনুসন্ধান, জব্দ তারপর বক্তব্যের জন্য ডাকার যে প্রক্রিয়া চলছে, তাতে শুধু মিডিয়ার খবর জোগান দেয়া ছাড়া বাস্তবে খুব একটা কাজ হবে বলে মনে হয় না।
তবে এমন অভিযোগ মানতে নারাজ দুদক সংশ্লিষ্টরা। তারা বলছেন, গ্রেফতার কিংবা কারও বিদেশযাত্রা ঠেকাতে তাদের মানতে হয় কিছু গাইড লাইন। তাড়াহুড়া করে কারও বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারে না দুদক।
সংস্থাটির আইনজীবী খুরশীদ আলম খান বলেন,
বিদেশ যাওয়ার নিষেধাজ্ঞা চাইতে হলে তার অর্জিত সম্পত্তি যে অবৈধ, তার সুনির্দিষ্ট তথ্য আমাদের কাছে থাকতে হবে। সেটা নিশ্চিত হওয়ার পর আমি আদালতে যেতে পারব। যখন আমরা সেটা শনাক্ত করতে পেরেছি, তখন আদালতে গিয়েছি।
চোর পালানোর পর বুদ্ধি, তৎপরতা না বাড়িয়ে পালানোর আগেই যথাযথ ব্যবস্থা নিতে পারলে অর্থপাচারকারীদের আইনের আওতায় আনা সম্ভব বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা।
এ জাতীয় আরো খবর..