পর্বতারোহণে অন্যতম বড় তারকা নির্মল পুরজা। তার বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির গুরুতর অভিযোগে অনেকেই হতবাক হয়ে গেছেন। তবে যারা বিষয়টি নিয়ে খোঁজ রাখেন তারা বলছেন, এটি কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। সেই সঙ্গে নির্মল পুরজার বিরুদ্ধে যৌন হয়রানি ও লাঞ্ছনার অভিযোগ আসার পর থেকে বিভিন্ন ব্র্যান্ড ও ট্যুর কম্পানি নেপালের এই ৪০ বছর বয়সী পর্বতারোহণ তারকার সঙ্গে দূরত্ব বজায় রাখছে।
তবে ঘটনাস্থলের সদস্যরা বলছেন, নারীদের নিরাপত্তায় পর্বতারোহণের পুরো সংস্কৃতিতেই পরিবর্তন আনা দরকার।
৩১ মে পুরজার বিরুদ্ধে ফিনল্যান্ডের পর্বতারোহী ও মডেল লোটা হিন্টসা গুরুতর অপরাধের অভিযোগ আনেন। মার্কিন গণমাধ্যম নিউ ইয়র্ক টাইমসকে হিন্টসা বলেন, গত বছর কাঠমাণ্ডুতে একটি হোটেল রুমে পুরজা তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে তার পোশাক খুলতে শুরু করেন এবং তারপর হিন্টসার উপস্থিতিতেই নিজের শারীরিক আনন্দ উপভোগ করেন।
মার্কিন চিকিৎসক এপ্রিল লিওনার্দোও সংবাদপত্রটিকে পুরজার কাছ থেকে একই ধরনের হয়রানির শিকার হওয়ার কথা জানিয়েছেন।
লিওনার্দো জানান, ২০২২ সালে পাকিস্তানে বিশ্বের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ পর্বত কেটু অভিযানের সময় পুরজা তার তাঁবুতে এসে তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে তাকে চুম্বন করেছিলেন।
লিওনার্দো পুরজার কম্পানি এলিট এক্সপেডের একজন ক্লায়েন্ট ছিলেন। এই প্রতিষ্ঠান বিশ্বের সর্বোচ্চ পর্বতমালাগুলোতে পথপ্রদর্শকসহ আরোহণের ব্যবস্থা করে দেয়।
এদিকে পুরজা একটি ইনস্টাগ্রাম স্টোরিতে ‘দ্ব্যর্থহীনভাবে’ তার বিরুদ্ধে আনা সব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
তিনি বলেন, এসব অভিযোগ মানহানিকর ও মিথ্যা।
২০ লাখের বেশি ইনস্টাগ্রাম ফলোয়ার
২০১৯ সালে ছয় মাসের মধ্যে আট হাজার মিটারের চেয়ে উঁচু ১৪টি পর্বত আরোহণ করে বিশ্বজুড়ে গণমাধ্যমের শিরোনামে আসেন পুরজা। দ্রুত এক পর্বত থেকে অন্য পর্বতের পাদদেশে পৌঁছতে তিনি বোতলজাত অক্সিজেন, শক্তিশালী শেরপা দল ও হেলিকপ্টার ব্যবহার করেছিলেন। এই একই কাজ করতে আরেক বিখ্যাত পর্বতারোহী রাইনহোল্ড মেসনারের লেগেছিল ১৬ বছর। ১৯৮৬ সালে সব আটহাজারী পর্বতে আরোহণ করা প্রথম পর্বতারোহী হয়েছিলেন মেসনার।
২০২১ সালে নেটফ্লিক্সের ডকুমেন্টারি ‘ফোরটিন পিকস-নাথিং ইজ ইমপসিবল’ মুক্তি পাওয়ার পর পুরজার জনপ্রিয়তা আরো বেড়ে যায়। ইনস্টাগ্রামে এখন তার ২০ লাখেরও বেশি ফলোয়ার রয়েছে।
নেপালি পর্বতারোহী পুরজা ব্রিটিশ গুর্খা রেজিমেন্টের সাবেক অভিজাত সেনা। নেপালি সেনারা ২০০ বছরেরও বেশি সময় ধরে ব্রিটেনে তাদের জীবিকা নির্বাহ করে আসছে। পুরজা তার স্ত্রী ও মেয়ের সঙ্গে ইংল্যান্ডের দক্ষিণে হ্যাম্পশায়ার কাউন্টিতে বাস করেন। ২০১৮ সালে রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ তাকে পর্বতারোহণের ক্ষেত্রে বিশেষ ভূমিকা রাখায় সম্মানিত করেছিলেন।
পুরজাকে এড়িয়ে চলছে বিভিন্ন সংগঠন
এদিকে বেশ কিছু পশ্চিমা বাণিজ্যিক অভিযান পরিচালনাকারী সংগঠন এখন আপাতত পুরজার সঙ্গে কিছু করতে চান না। অস্ট্রিয়ার প্রতিষ্ঠান ফুর্টেনবাখ অ্যাডভেঞ্চারস ইনস্টাগ্রামে ঘোষণা করেছে, ‘আমরা হতবাক ও গভীরভাবে দুঃখিত।’
প্রতিষ্ঠানটি বলেছে, ‘এই সম্প্রদায়ের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ রোল মডেলদের মধ্যে একজনের বিরুদ্ধে বেশ কয়েকটি যৌন নিপীড়নের অভিযোগ রয়েছে। আমরা দ্ব্যর্থহীনভাবে এই ধরনের আচরণের নিন্দা করি এবং এটা নিশ্চিত করছি, আমাদের সম্প্রদায়ে এর কোনো স্থান নেই।’
এ ছাড়া মার্কিন ট্যুর অপারেটর আলপেনগ্লো এক্সপিডিশনসের প্রধান আড্রিয়ান বালিঙ্গার লিখেছেন, যৌন অপরাধগুলো এমন ‘এক ধরনের বিপদ যা কেবল প্রশমন করলেই চলবে না। জিরো টলারেন্স নিশ্চিত করতে আমরা একযোগে কাজ করতে পারি।’
এ জাতীয় আরো খবর..