১৯৯৪ সালের কম্পানি আইনে সংজ্ঞায়িত কম্পানি, ব্যাংক-বীমা বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান, বিদেশি লিয়াজোঁ অফিস, রিপ্রেজেন্টেটিভ অফিস বা ব্রাঞ্চ অফিস, বিদেশি সত্তা বা ব্যক্তির স্থায়ী কোনো প্রতিষ্ঠান, শিল্প ও বাণিজ্য সংগঠন, ফাউন্ডেশন, সমিতি, সমবায় সমিতি আয়কর আইন ২০২৩ অনুযায়ী কম্পানি। তাদের সঞ্চয়ী ও স্থায়ী আমানতের সুদ বা মুনাফার বিপরীতে ২০ শতাংশ করের বিধান রয়েছে।
এই তালিকায় বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আগেই স্থান করে নিয়েছিল। এবার সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ও এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোকেও কম্পানির আওতায় ফেলে আসন্ন ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটে ২০ শতাংশ কর কর্তনের বিধান করতে যাচ্ছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বশীল সূত্র এ তথ্য নিশ্চিত করেছে। তবে বিষয়টিকে বোধগম্য নয় বলে মনে করেন শিক্ষাবিদরা। তাঁরা বলেন, এক ধাক্কায় করের হার দ্বিগুণ না করে উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ে নতুন সক্ষম করদাতা শনাক্ত করে রাজস্ব আদায় বাড়ানোর পরামর্শ দিয়েছেন তাঁরা।
অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, বর্তমানে কম্পানিগুলোর সঞ্চয়ী ও স্থায়ী আমানতের সুদ বা মুনাফার বিপরীতে কর কর্তনের হার ২০ শতাংশ।
কম্পানি ছাড়া অন্যান্য ব্যক্তির ক্ষেত্রে এই হার ১০ শতাংশ। সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়, এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, চার্টার্ড অ্যাকাউনট্যান্ট বা কষ্ট অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট অ্যাকাউনট্যান্ট বা চার্টার্ড সেক্রেটারিজ ইনস্টিটিউটের ক্ষেত্রে কর কর্তনের হার ১০ শতাংশ।
এ ক্ষেত্রে সরকার বা সরকারের অনুমোদনক্রমে তফসিলভুক্ত কোনো ব্যাংকের স্পন্সরকৃত কোনো ডিপোজিট পেনশন স্কিম থেকে এবং এনবিআরের বিশেষ আদেশে অব্যাহতিপ্রাপ্ত কোনো সত্তার ক্ষেত্রে এই ধারা প্রযোজ্য হবে না। তবে আগামী বাজেটে কম্পানির ২০ শতাংশ করহারের তালিকায় যুক্ত হবে সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ও এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান।
অন্যদিকে স্বীকৃত ভবিষ্যতহবিল, অনুমোদিত আনুতোষিক তহবিল, অনুমোদিত বার্ধক্য তহবিল ও পেনশন তহবিলের ক্ষেত্রে করহার কমিয়ে ১০ শতাংশ করা হতে পারে। অর্থ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বশীল সূত্র এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে অর্থ মন্ত্রণালয়ের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা কালের কণ্ঠকে বলেন, দেশ-বিদেশে কোনো আইনের মাধ্যমে নিবন্ধিত প্রতিষ্ঠানই কম্পানি হিসেবে বিবেচিত হবে। সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়, এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠা হচ্ছে আইনের মাধ্যমে। কেউ যদি একটি কোচিং সেন্টার চালু করে সে ক্ষেত্রে কোনো আইনের মাধ্যমে তাকে নিবন্ধিত হতে হয় না।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) শিক্ষক সমিতির সভাপতি নিজাম উদ্দিন ভূইয়া কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘এমনিতেই শিক্ষকদের আয় খুব কম। তার মধ্যে এটা মরার উপর খাড়ার ঘাঁ। এটা ১০ শতাংশ থেকে ১২ শতাংশ হতে পারত। কিন্তু এক ধাক্কায় এটা দ্বিগুণ করে ফেলা সমীচীন হবে না।’
বিশ্ববিদ্যালয়কে কম্পানির তালিকায় ফেলা মোটেও যৌক্তিক নয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘এটা এনবিআর নিজেদের মতো করে ব্যাখ্যা করলে হবে না। উপজেলা থেকে ইউনিয়ন পর্যায়ে অনেক লোক আছে, যারা করের আওতার বাইরে। এনবিআর সেদিকে ফোকাস না করে এদিকে কর আদায়ে মনোযোগী হয়েছে। কর দেওয়ার সক্ষমতা অনেক মানুষের আছে। কিন্তু গুটিকয়েক মানুষ কর দেয়।’ এনবিআরের করজাল সম্প্রসারণের মাধ্যমে কর আদায় বৃদ্ধি করা উচিত বলে মনে করেন তিনি।
এ জাতীয় আরো খবর..