তিন দিনে বিদেশি মদের পাঁচটি বড় চালান আটকের পর চোরাচালান প্রতিরোধে কার্যক্রম জোরদার করেছে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউজ। আমদানি পণ্যবোঝাই ১৫০টি কনটেইনার সন্দেহজনক মনে হওয়ায় স্বয়ংক্রিয়ভাবে ‘লক’ (ডেলিভারি স্থগিত) করে দেওয়া হয়েছে।
শুল্ক ফাঁকির উদ্দেশ্যে মিথ্যা ঘোষণা ও জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে এসব কনটেইনারে ঘোষিত পণ্যের পরিবর্তে অন্য পণ্য আনা হতে পারে বলে প্রাথমিকভাবে সন্দেহ করা হচ্ছে। এর মধ্যে অন্তত ৪০টি কনটেইনার খালাসের দায়িত্বে রয়েছে চট্টগ্রাম নগরীর দোভাস লেনের জাফর আহমেদের মালিকানাধীন সিঅ্যান্ডএফ প্রতিষ্ঠান।
শনি থেকে সোমবার পর্যন্ত দেশের প্রধান সমুদ্র বন্দর দিয়ে আসা মদের যে পাঁচটি চালান কাস্টম ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী আটক করেছে, তার তিনটি খালাসের চেষ্টা করেছিল এই সিঅ্যান্ডএফ প্রতিষ্ঠান।
কনটেইনার লকের বিষয়টি বৃহস্পতিবার যুগান্তরকে নিশ্চিত করেছেন চট্টগ্রাম কাস্টম হাউজের উপকমিশনার মো. সাইফুল হক। তিনি বলেন, ঝুঁকি ব্যবস্থাপনার আওতায় ১৫০টি চালান আমরা লক করে দিয়েছি। এগুলোর ভেতরে আসলে কী পণ্য আছে, তা নিশ্চিত হতে কায়িক পরীক্ষা করা হবে। এরইমধ্যে আমরা সংশ্লিষ্ট আমদানিকারকদের বিষয়টি জানিয়েছি। তারা কাগজপত্র নিয়ে আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করছেন। যদি ঘোষণা অনুযায়ী পণ্য পাওয়া যায়, তাহলে সমস্যা নেই। আমদানিকারকরা তাদের পণ্য নিয়ম অনুযায়ী ডেলিভারি নিয়ে যেতে পারবেন। আর যদি মিথ্যা ঘোষণা বা অন্য কোনো জাল-জালিয়াতির বিষয় ধরা পড়ে, তাহলে চালান আটক করা হবে।
সূত্র জানায়, বন্দরে আমদানি করা পণ্য চালান সন্দেহজনক বা ঝুঁকিপূর্ণ মনে হলে কাস্টম হাউজের এআইআর ও পোর্ট কনট্রোল ইউনিট শাখা অ্যাসাইকুডা ওয়ার্ল্ড সফটওয়্যারের মাধ্যমে স্বয়ংক্রিয়ভাবে লক করে দিতে পারে। শুল্ক গোয়েন্দারাও একই কাজ করতে পারেন। লক করার পর আমদানিকারক পণ্য ডেলিভারি নিতে পারেন না। তাদের প্রয়োজনীয় কাগজপত্র যাচাই-বাছাই এবং সন্দেহজনক কনটেইনার খুলে কায়িক পরীক্ষা করা হয়। এরপরই পণ্য ডেলিভারির অনুমতি দেওয়া হয়।
চট্টগ্রাম বন্দর থেকে প্রতিদিন তিন থেকে চার হাজার আমদানি পণ্যবোঝাই কনটেইনার ডেলিভারি হয়। বিল অব এন্ট্রি দাখিলের পর প্রয়োজনীয় আনুষ্ঠানিকতা শেষে ডেলিভারির অনুমতি দেয় কাস্টম কর্তৃপক্ষ। এর মধ্যে কোনো কনটেইনার সন্দেহজনক মনে হলে তা যাচাই করে দেখার জন্য লক করা হয়।
তিন দিনে চট্টগ্রাম বন্দরের ভেতর ও বাইরে থেকে পাঁচটি কনটেইনার জব্দ করে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউজ ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। এসব কনটেইনারে পাওয়া যায় বিপুল পরিমাণ বিদেশি মদ, যা মিথ্যা ঘোষণা ও জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে আনা হয়েছিল। এই পাঁচ চালানের মাধ্যমে চোরাচালানি চক্র প্রায় ৬০ কোটি টাকার শুল্ক ফাঁকির অপচেষ্টা করেছিল বলে কাস্টম কর্তৃপক্ষ নিশ্চিত করেছে। এ নিয়ে দেশজুড়ে তোলপাড় সৃষ্টি হলে নড়েচড়ে বসেন কাস্টম কর্মকর্তারা। এ ধরনের মদের চালান আরও আছে কিনা তা শনাক্ত করতে তারা তৎপর হয়ে ওঠেন। বিভিন্ন আমদানি চালানের তথ্য পর্যালোচনার পর ১৫০টি চালানকে সন্দেহজনক হিসাবে শনাক্ত করা হয়।
চট্টগ্রাম কাস্টম হাউজ সূত্র জানায়, আটক হওয়া মদের তিন চালানের সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট জাফর আহমেদের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট যতগুলো চালান বর্তমানে চট্টগ্রাম বন্দরে আছে, তার সবই লক করে দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া চারটি ইপিজেডের যে চার আমদানিকারকের নামে মদের চালান এসেছে, তাদের নামে থাকা অন্যান্য চালান এবং এগুলোর রপ্তানিকারকের অন্যান্য চালান লক করা হয়েছে। যেসব বন্দর থেকে যেসব জাহাজে করে মদের চালান এসেছে, সেসব জাহাজের অন্যান্য চালানও লক করা হয়েছে।
চট্টগ্রাম কাস্টম হাউজের উপকমিশনার মো. সাইফুল হক যুগান্তরকে বলেন, সিঅ্যান্ডএফ জাফর আহমেদের মোবাইল ফোন বন্ধ। আমরা ধারণা করছি, তিনি গা ঢাকা দিয়েছেন। তার নামে বিল অব এন্ট্রি দাখিল করা হয়েছে এরকম ৪০টি চালানের খোঁজ পাওয়া গেছে। এগুলো লক করা হয়েছে।
সাইফুল হক জানান, জাফর চট্টগ্রাম বন্দরে বছরে প্রায় ৫০০ চালানের কাজ করে থাকেন। আমদানি পণ্য খালাসের পাশাপাশি রপ্তানি পণ্যের কাজও করেন তিনি। চোরাচালানি চক্র ঝুঁকি কমানোর কৌশল হিসাবে মাঝেমধ্যে প্রতিষ্ঠিত সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টকে ব্যবহার করে। মদের চালানের ক্ষেত্রেও তাই ঘটেছে বলে মনে হচ্ছে।
চট্টগ্রাম সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক কাজী মাহমুদ ইমাম বিলু যুগান্তরকে বলেন, ‘কোনো চালান সন্দেহজনক মনে হলে কাস্টম লক করতে পারে। তবে একসঙ্গে এত চালান লক করা হয়েছে, এমন আগে কখনো শুনিনি। যদি সঠিক সন্দেহ থেকে এটা করা হয়, তাহলে অসুবিধা নেই। সেটাতো ভালোই। কিন্তু যদি সন্দেহ ঠিক না হয়, তাহলে আমদানিকারকরা হয়রানির শিকার হবেন। এ বিষয়টা মাথায় রাখতে হবে কাস্টম কর্তৃপক্ষকে।’
এ জাতীয় আরো খবর..