×
  • প্রকাশিত : ২০২৪-০৬-০২
  • ৬৯ বার পঠিত
প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকা (ইসিএ) প্রবাল দ্বীপ সেন্ট মার্টিনে ১০ বছর আগে নিজের নামে ১ একর ৭৫ শতক জমি কেনেন পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বেনজীর আহমদ। আর কক্সবাজারের মেরিন ড্রাইভের ইনানী সৈকতে তাঁর স্ত্রী ও তিন মেয়ের নামে কেনেন আরও ৭২ শতক জমি। সে সময় বেনজীর আহমেদ ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) কমিশনার ছিলেন।

সেন্ট মার্টিন ও ইনানী সৈকত এলাকায় কেনা বেনজীরের এসব জমিতে এখন পর্যন্ত কোনো স্থাপনা তৈরি করা হয়নি। সেন্ট মার্টিন দ্বীপের বিশাল জমিটি কংক্রিটের পিলারে কাঁটাতারের সীমানা দিয়ে ঘিরে রাখা হয়েছে।

সম্প্রতি সরেজমিনে দ্বীপের দক্ষিণ পাড়ায় দেখা গেছে, কাঁটাতারের নিচে কিছু অংশে পাথরের স্তূপ। রাস্তার দিকের অংশে বড় একটি ফটক। ফটকের পাশে কয়েক মাস আগেও জমির মালিক হিসেবে বেনজীর আহমেদের নামে সাইনবোর্ড টাঙানো ছিল। এখন সেই সাইনবোর্ড নেই জানিয়ে স্থানীয় ৯ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য নজির আহমদ প্রথম আলোকে বলেন, দ্বীপের মানুষ জানে জায়গাটির মালিক সাবেক আইজিপি। এ কারণে ওই জমিতে কেউ ঢোকে না।

কয়েকজনের কাছ থেকে জিনজিরা মৌজার ২২ শতাংশ জমি কেনেন বেনজীর। জমির দলিলমূল্য দেখানো হয় ১৫ লাখ ৫০ হাজার টাকা।

বেনজীরের জমিগুলো দেখাশোনা করেন সেন্ট মার্টিন দ্বীপ ইউনিয়ন বিএনপির আহ্বায়ক আবদুর রহমান। তিনি সেখানকার আবাসিক হোটেল সেন্ডশোর–এর মালিক। ২০১৪ সালে স্থানীয় ২২ জনের কাছ থেকে বেনজীর ১ একর ৭৫ শতক জমি কেনার কথা স্বীকার করে আবদুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, দ্বীপের দক্ষিণ পাশের বিশাল এই জায়গা পরিত্যক্ত ছিল, মাটির নিচে পাথর থাকায় চাষাবাদ হয় না। তখন প্রতি কানি (১ কানিতে ৪০ শতক) জমি বিক্রি হয়েছিল ৬-৭ লাখ টাকা দামে। দলিল রেজিস্ট্রির সময় বেনজীর আহমেদ টেকনাফ আসেননি জানিয়ে আবদুর রহমান বলেন, সেন্ট মার্টিনে বেনজীরকে তিনি ১৮৫ শতাংশ জমি কিনে দিয়েছিলেন। এর মধ্যে ১৭৫ শতাংশের (পৌনে দুই একর) নাম খতিয়ান হয়েছে।

সেন্ট মার্টিন দ্বীপের দক্ষিণপাড়াতে বেনজীরের জমি

বেনজীর আহমেদ ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে সম্প্রতি দুর্নীতি ও অনিয়মের মাধ্যমে বিপুল সম্পদের মালিক হওয়ার অভিযোগ ওঠে। এরপর তাঁর জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অনুসন্ধান করছে দুদক। সংস্থাটি এখন পর্যন্ত বেনজীর ও তাঁর পরিবারের নামে গোপালগঞ্জ ও মাদারীপুরে ৬২১ বিঘা জমি, ১৯টি কোম্পানির শেয়ার, গুলশানে ৪টি ফ্ল্যাট, ৩০ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র, ৩৩টি ব্যাংক হিসাব এবং তিনটি বিও হিসাব (শেয়ার ব্যবসার বেনিফিশিয়ারি ওনার্স অ্যাকাউন্ট) খুঁজে পেয়েছে। আদালতের আদেশে এসব সম্পদ জব্দ ও অবরুদ্ধ করা হয়েছে।

কক্সবাজারের মেরিন ড্রাইভের ইনানী সৈকতে তাঁর স্ত্রী ও তিন মেয়ের নামে কেনেন আরও ৭২ শতক জমি। সে সময় বেনজীর আহমেদ ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) কমিশনার ছিলেন।

এদিকে টেকনাফ সাবরেজিস্ট্রি কার্যালয় সূত্র জানায়, ২০১৪ সালের ২৯ মে সেন্ট মার্টিনের কোনারপাড়ার (বর্তমান বাজারপাড়া) বাসিন্দা আবদুর রহমানসহ কয়েকজনের কাছ থেকে জিনজিরা মৌজার ২২ শতাংশ জমি কেনেন বেনজীর। জমির দলিলমূল্য দেখানো হয় ১৫ লাখ ৫০ হাজার টাকা। একই দিন জোসনা বেগম গংয়ের কাছ থেকে ১২ লাখ ৬৫ হাজার টাকায় কেনা হয় ৪৪ শতাংশ জমি, মোহাম্মদ হোছন গংয়ের কাছ থেকে ১০ লাখ ৭ হাজার টাকায় কেনা হয় ৩৫ শতাংশ, মোহাম্মদ ইসলাম গংয়ের কাছ থেকে ১৩ লাখ টাকা দামে ৪৫ শতাংশ, আবদুল জলিল গংয়ের কাছ থেকে ৮ লাখ ৩৫ হাজার টাকায় কেনা হয় আরও ২৯ শতক জমি।

কক্সবাজারের মেরিন ড্রাইভের ইনানী সৈকতে বেনজীরের স্ত্রী ও তাঁর তিন মেয়ের নামে ৭২ শতাংশ জমি রয়েছে। ওই জমি উখিয়ার মেরিন ড্রাইভের পাশে এলজিইডি ভবনসংলগ্ন। জমি কেনার ক্ষেত্রে সহায়তা করেন স্থানীয় জালিয়া পালং ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য শামসুল আলম। তিনি বলেন, জমিগুলো এখনো পড়ে আছে।

২০০৯ সালে স্ত্রী জীসান মীর্জার নামে ৪০ শতক জমি কেনেন বেনজীর। জমির দলিলমূল্য উল্লেখ করা হয় ৫ লাখ টাকা। জীসান মীর্জার নামে পরে আরও ১০ ও ৭ শতাংশ জমি কেনেন, যার দলিলমূল্য যথাক্রমে ১৬ লাখ ৬৬ হাজার টাকা ও ৩ লাখ ৭০ হাজার টাকা।

এ ছাড়া বেনজীরের তিন মেয়ে ফারহীন রিশতা বিনতে বেনজীর, তাহসিন রাইশা বিনতে বেনজীর ও জারা জেরিন বিনতে বেনজীরের নামে কেনা হয় ১৫ শতাংশ জমি। যার দলিলমূল্য দেখানো হয় ২৪ লাখ ৮৫ হাজার টাকা।

২০০৯ সালে স্ত্রী জীসান মীর্জার নামে ৪০ শতক জমি কেনেন বেনজীর। জমির দলিলমূল্য উল্লেখ করা হয় ৫ লাখ টাকা। জীসান মীর্জার নামে পরে আরও ১০ ও ৭ শতাংশ জমি কেনেন, যার দলিলমূল্য যথাক্রমে ১৬ লাখ ৬৬ হাজার টাকা ও ৩ লাখ ৭০ হাজার টাকা।

সরকারি কর্মচারী বিধিমালা অনুযায়ী, চাকরিকালে কোনো সরকারি কর্মচারী বা তাঁর পরিবারের সদস্যরা সরকারের পূর্বানুমোদন ছাড়া ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান খুলতে পারবেন না। এমনকি আড়াই লাখ টাকার ওপরের স্থাবর বা অস্থাবর সম্পত্তি ক্রয়-বিক্রয়ের ক্ষেত্রেও পূর্বানুমোদন লাগবে। কিন্তু এ ক্ষেত্রে পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক বেনজীর আহমেদ কোনো পূর্বানুমোদন নিয়েছেন কি না, তা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের কেউ বলতে পারছেন না।

সেন্ট মার্টিন দ্বীপের যত্রতত্র জায়গা জমি বেচাবিক্রি এবং অবৈধভাবে অবকাঠামো নির্মাণ বন্ধে পরিবেশ অধিদপ্তর ১৯৯৯ সালে দ্বীপটিকে প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকা (ইসিএ) ঘোষণা করে। সর্বশেষ ২০২৩ সালের ৪ জানুয়ারি বন্য প্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইন অনুযায়ী সেন্ট মার্টিন দ্বীপসংলগ্ন বঙ্গোপসাগরের ১ হাজার ৭৪৩ বর্গকিলোমিটার এলাকাকে সামুদ্রিক সংরক্ষিত এলাকা হিসেবে ঘোষণা করে পরিবেশ মন্ত্রণালয়।

এ প্রসঙ্গে টেকনাফ উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) সৈয়দ সাফফাত আলী বলেন, ২০১২ সালের ২০ মে প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর থেকে কক্সবাজার জেলার মহাপরিকল্পনা নিয়ে একটি প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। এর পর থেকে সেন্ট মার্টিনসহ টেকনাফ উপজেলার আটটি মৌজার জমি বেচাকেনা করতে জেলা প্রশাসনের অনুমতি লাগে। বেনজীর আহমেদের জমি কেনার আগে অনুমতি নেওয়া হয়েছিল কি না, তা তাঁর জানা নেই।

অভিযোগের বিষয়ে বেনজীর আহমেদ ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের বক্তব্য জানতে নানাভাবে যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়েছে। তবে তা সম্ভব হয়নি। তাঁকে ফোনে পাওয়া যায়নি। ফোনে ও হোয়াটসঅ্যাপে এবং ই-মেইলে প্রশ্ন পাঠানো হয়েছে। কোনো উত্তর পাওয়া যায়নি।

নিউজটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর..
ফেসবুকে আমরা...
ক্যালেন্ডার...

Sun
Mon
Tue
Wed
Thu
Fri
Sat