×
  • প্রকাশিত : ২০২২-০৭-০৭
  • ৭৫ বার পঠিত
সারা দেশেই কমবেশি লোড শেডিং হচ্ছে। শহরের তুলনায় গ্রামের দিকে লোড শেডিং বেশি হচ্ছে। গ্যাসসংকটের কারণে বেশ কিছু বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ থাকায় এই পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। বিশ্ববাজারে জ্বালানির দাম না কমা পর্যন্ত এ সমস্যা কাটছে না বলে জানিয়েছেন জ্বালানি বিভাগ ও পেট্রোবাংলার সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।

এই পরিস্থিতি সামলাতে নানা উদ্যোগ নিচ্ছে সরকার।
এই উদ্যোগের অংশ হিসেবে আজ বৃহস্পতিবার বিদ্যুৎ ও গ্যাস পরিস্থিতি পর্যালোচনায় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সভাকক্ষে সকাল ১১টায় সভা অনুষ্ঠিত হবে। এতে সভাপতিত্ব করবেন প্রধানমন্ত্রীর বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিষয়ক উপদেষ্টা তৌফিক-ই-এলাহী চৌধুরী। এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি গতকাল কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘বর্তমান বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সংকট সমাধানে বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ নিয়েই সভায় আলোচনা হবে। ’

চলমান পরিস্থিতি সামাল দিতে এরই মধ্যে সরকার সারা দেশে দোকানপাট রাত ৮টার মধ্যে বন্ধের সিদ্ধান্ত নেয়। যদিও ঈদের কারণে তা রাত ১০টা পর্যন্ত খোলা রাখার সুযোগ দেওয়া হয়। তবে ঈদের পর রাত ৮টায় দোকান বন্ধের সিদ্ধান্ত কার্যকর করা হবে। এ ছাড়া বিদ্যুৎ ব্যবহারে সাশ্রয়ী হতে প্রচারণা চালানো হচ্ছে। আলোকসজ্জাসহ অপ্রয়োজনে বিদ্যুৎ ব্যবহার না করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া দুর্ভোগ কমাতে রুটিন করে লোড শেডিং দেওয়ার পরিকল্পনা নেওয়া হচ্ছে।

পেট্রোবাংলার কর্মকর্তারা বলছেন, গত মাসের শেষ সপ্তাহের দিকে স্পট মার্কেট (খোলাবাজার) থেকে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) কিনতে প্রতি ইউনিট (এমএমবিটিইউ) খরচ হয়েছিল প্রায় ২৫ ডলার। সেটি এখন প্রায় ৪০ ডলার। এ কারণেই সরকার স্পট মার্কেট থেকে এলএনজি আমদানি বন্ধ রেখেছে। এখন চুক্তিভিত্তিক এলএনজি এবং দেশীয় গ্যাস থেকেই চাহিদা পূরণের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। ফলে গ্যাসসংকটে বেশ কিছু গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ রয়েছে। এতে প্রায় দুই হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন কমে গেছে।

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে বিশ্ববাজারে জ্বালানির দাম ঊর্ধ্বমুখী থাকায় বিদ্যুৎ উৎপাদনে জ্বালানি তেল, এলএনজি ও কয়লায় বিশাল অঙ্কের অর্থ পরিশোধে বিপাকে পড়েছে বিশ্বের বড় অর্থনীতির দেশগুলোও। এরই মধ্যে বিশ্বের বড় অর্থনীতি জাপান, জার্মানি, যুক্তরাজ্যসহ বিভিন্ন দেশও লোড শেডিং দিতে বাধ্য হচ্ছে।

 রংপুর বিভাগের বিভিন্ন জেলায় চাহিদার তুলনায় অর্ধেকেরও কম বিদ্যুৎ সরবরাহ হচ্ছে। এর ফলে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ১২ ঘণ্টারও বেশি সময় লোড শেডিংয়ে এসব এলাকার মানুষ। কুড়িগ্রামে চার দিন ধরে ২৪ ঘণ্টায় বিদ্যুৎ সরবরাহ ১২ ঘণ্টারও কম। ফলে প্রচণ্ড রৌদ্রতাপ আর ভাপসা গরমের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বিদ্যুতের মাত্রাতিরিক্ত লোড শেডিংয়ে জনজীবন অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে। বাসাবাড়ি, অফিস-আদালত, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, হোটেল-রেস্তোরাঁ, দোকানপাটসহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠানে বিদ্যুতের অভাবে স্বাভাবিক কার্যক্রম চালানো সম্ভব হচ্ছে না।

এ বিষয়ে নেসকো কুড়িগ্রামের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আলিমুল ইসলাম সেলিম বলেন, ‘বিদ্যুৎ উৎপাদনে ঘাটতি থাকায় জাতীয় গ্রিড থেকে আমাদের চাহিদা অনুযায়ী বিদ্যুৎ সরবরাহ না পাওয়ায় লোড শেডিং দিতে বাধ্য হচ্ছি। সরবরাহ পেলে এ অবস্থার উন্নতি হবে। ’

ময়মনসিংহ বিভাগের সব জেলায় চার-পাঁচ দিন ধরেই চলছে বিদ্যুতের অসহনীয় লোড শেডিং। এতে বিপর্যস্ত হয়ে উঠেছে এসব এলাকার মানুষের জীবন। শহর থেকে গ্রাম সর্বত্রই চলছে লোড শেডিং। একদিকে তীব্র গরম, অন্যদিকে লোড শেডিং, এতে ক্ষুব্ধ সাধারণ মানুষ।

শেরপুর পিডিবির আবাসিক প্রকৌশলী সুব্রত রায় বলেন, ‘চাহিদার প্রায় অর্ধেক বিদ্যুৎ পাচ্ছি। যে কারণে লোড ম্যানেজমেন্ট করে পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার চেষ্টা চলছে। ’

রাজশাহী বিভাগের সব জেলায় একই পরিস্থিতি। পাবনার ভাঙ্গুড়ায় দুই সপ্তাহ ধরে মারাত্মক বিদ্যুৎ বিপর্যয় ঘটেছে। এ উপজেলার বিদ্যুৎ উপকেন্দ্রের ছয়টি ফিডারে গড়ে প্রতিদিন ১২-১৪ ঘণ্টা করে লোড শেডিং চলছে।

উপজেলার পৌর শহরের হারোপাড়া মহল্লার গরু ব্যবসায়ী মুজাহিদুল ইসলাম বলেন, ‘আমার খামারে কোরবানির ঈদ উপলক্ষে বিক্রির জন্য অর্ধশতাধিক ষাঁড় গরু রয়েছে। বিদ্যুৎ না থাকার কারণে খামারের ফ্যান বন্ধ থাকছে। ফলে গরমে এসব গরু মারা যাওয়ার আশঙ্কায় আছি। ’

চট্টগ্রামের বিভিন্ন এলাকায় বিদ্যুতের লোড শেডিংয়ে মানুষের ভোগান্তি বেড়েছে। কয়েক দিন ধরে বিদ্যুৎ ‘এই আসে আবার এই যায় অবস্থা’। প্রচণ্ড গরমের সঙ্গে ঘন ঘন বিদ্যুতের যাওয়া-আসা অব্যাহত রয়েছে। গতকাল বুধবার থেকে চট্টগ্রাম শহর কিছুটা লোড শেডিংমুক্ত হলেও চট্টগ্রামের বিভিন্ন জেলায় গতকালও আট ঘণ্টা লোড শেডিংয়ে ছিল।

খাগড়াছড়ির দীঘিনালা উপজেলায় এক সপ্তাহ ধরে লোড শেডিং কিছুটা বাড়লেও গত দুই দিনে তার মাত্রা অনেক বেড়ে গেছে। বর্তমানে লোড শেডিং হচ্ছে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে কমপক্ষে আট ঘণ্টা।

উপজেলা বিদ্যুৎ বিভাগের আবাসিক প্রকৌশলী সন্তোষ চাকমা কালের কণ্ঠকে বলেন, ২৪ ঘণ্টার প্রায় আট ঘণ্টাই লোড শেডিংয়ের আওতায় আছে দীঘিনালা।

(তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন স্থানীয় প্রতিনিধিরা)

নিউজটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর..
ফেসবুকে আমরা...
ক্যালেন্ডার...

Sun
Mon
Tue
Wed
Thu
Fri
Sat