×
  • প্রকাশিত : ২০২৪-০৫-২৮
  • ৭৮ বার পঠিত
নানা উদ্যোগের কথা বলা হলেও গতি নেই সরকারের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) বাস্তবায়নে। যার প্রমাণ মেলে চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের এডিপি বাস্তবায়ন হারে। অর্থবছরের প্রথম ১০ মাসে বাস্তবায়ন করা হয়েছে মাত্র ৪৯.২৬ শতাংশ। বাকি আছে আর মাত্র দুই মাস।

এই সময়ের মধ্যে বাস্তবায়ন করতে হবে ৫০.৭৪ শতাংশ। বাকি সময়ের মধ্যে শতভাগ বাস্তবায়ন নিয়ে দেখা দিয়েছে শঙ্কা।
বিশেষজ্ঞদের মতে, চলতি অর্থবছর এডিপির শতভাগ বাস্তবায়ন সম্ভব নয়। কয়েক বছর ধরে একই চিত্র দেখা গেলেও বাস্তবায়নের কোনো পরিবর্তন লক্ষ্য করা যাচ্ছে না।

পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) ২০২৩-২৪ অর্থবছরের (জুলাই-এপ্রিল) প্রথম ১০ মাসের এডিপি বাস্তবায়নের অগ্রগতি প্রতিবেদনে এমন চিত্র প্রকাশ পেয়েছে। গতকাল সোমবার এডিপির অগ্রগতি প্রতিবেদন প্রকাশ করে আইএমইডি। প্রতিবেদন অনুযায়ী, বরাদ্দের হিসাবে কয়েকটি মন্ত্রণালয় ছাড়া বেশির ভাগই তাদের কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে পারছে না।

বিশ্লেষকরা বলছেন, কয়েক বছর ধরে এডিপি বাস্তবায়নের একই চিত্র দেখা যাচ্ছে।

অর্থবছরের ১০ মাসে যেখানে অর্ধেকও বাস্তবায়ন করা হয়নি, সেখানে মাত্র দুই মাসে কী করে বাকি অর্ধেক বাস্তবায়ন হবে। প্রতিবছরই শেষ সময়ে এসে তাড়াহুড়া করে বাস্তবায়ন হার বাড়ানো হয়, এতে কাজের মান ঠিক থাকে না। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও বিভাগকে জবাবদিহির আওতায় না আনলে শতভাগ এডিপি বাস্তবায়ন কোনো অর্থবছরেই সম্ভব হবে না।
বিশ্বব্যাংকের ঢাকা কার্যালয়ের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন বলেন, ‘এডিপি বাস্তবায়নের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ না হলেও বড় আকারের এডিপি নেওয়া হচ্ছে। বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে দেখা যায়, প্রথম ৮ বা ৯ মাস বাস্তবায়ন হার অনেক কম থাকে।

কিন্তু শেষ দুই মাসে এডিপি বাস্তবায়ন ব্যাপকহারে বেড়ে যায়। শেষ সময়ে তড়িঘড়ি করে বাস্তবায়ন বাড়ানো হয়। এতে গুণগত মান ঠিক থাকে না। এর পরও বাস্তবায়নের কোনো পরিবর্তন লক্ষ্য করা যাচ্ছে না। যথারীতি গতানুগতিকভাবেই চলছে এডিপি। এ জন্য বড় আকারের এডিপি নেওয়ার চেয়ে বাস্তবায়নের দিকে নজর দেওয়া উচিত।’
ধীরগতির বিষয়ে বাস্তবায়ন, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) সচিব আবুল কাশেম মো. মহিউদ্দিন কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘গত অর্থবছরের তুলনায় চলতি অর্থবছরের এডিপি বাস্তবায়ন কম হয়েছে, এটা ঠিক। তবে বাস্তবায়ন হার বাড়ানোর বিষয়ে জোর দেওয়া হচ্ছে। দ্রুত প্রকল্প বাস্তবায়নেও জোর দিতে বলেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এনইসি বৈঠকে সব সচিবকে এডিপি বাস্তবায়ন বাড়ানোর নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।

আইএমইডির প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, চলতি অর্থবছরের এডিপিতে এক হাজার ৬৭৪টি প্রকল্পের বিপরীতে বরাদ্দ রয়েছে দুই লাখ ৫৪ হাজার ৩৯১ কোটি টাকা। প্রথম ১০ মাসে ৫৮টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগের তত্ত্বাবধানে থাকা এসব প্রকল্পের বিপরীতে খরচ হয়েছে এক লাখ ২৫ হাজার ৩১৫ কোটি ৬৮ লাখ টাকা, যা বরাদ্দের মাত্র ৪৯.২৬ শতাংশ। 

গত ১০ অর্থবছরের এডিপি বাস্তবায়নের চিত্র পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, করোনার সময় ছাড়া চলতি অর্থবছরে এত কম এডিপি বাস্তবায়ন হয়নি কখনো। ১০ বছরের মধ্যে সবচেয়ে কম এডিপি বাস্তবায়ন হয়েছিল ২০২০-২১ অর্থবছরে। ওই বছর একই সময়ে বাস্তবায়ন হার ছিল ৪৯.০৯ শতাংশ। আর ২০১৯-২০ অর্থবছরে ছিল ৪৯.১৩ শতাংশ।

সবচেয়ে বেশি বাস্তবায়ন হয়েছিল ২০১৪-১৫ অর্থবছরে। ওই সময় বাস্তবায়ন হার ছিল ৫৫.৬৭ শতাংশ। এ ছাড়া ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ছিল ৫৪.৯৪ শতাংশ, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ছিল ৫৪.৫৬ শতাংশ, ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ছিল ৫২.৪২ শতাংশ, ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ছিল ৫০.১৭ শতাংশ এবং ২০২১-২২ অর্থবছরে ছিল ৫৪.৫৭ শতাংশ। এমনকি গত অর্থবছরেও একই সময়ে ৫০.৩৩ শতাংশ বাস্তবায়ন হয়েছিল। 

এদিকে সামগ্রিকভাবে এডিপি বাস্তবায়ন হারের সঙ্গে সঙ্গে মাসের হিসাবে চলতি অর্থবছরের এপ্রিলে গত অর্থবছরের তুলনায় কম বাস্তবায়ন হয়েছে। আইএমইডির তথ্য অনুযায়ী, শুধু এপ্রিল মাসে এডিপি বাস্তবায়নে খরচ হয়েছে ১৭ হাজার ৭০৩ কোটি ২৪ লাখ টাকা। অর্থাৎ এপ্রিল মাসে বাস্তবায়ন হয়েছে ৬.৯৬ শতাংশ। ২০২২-২৩ অর্থবছরের একই মাসে খরচ হয়েছিল ২০ হাজার ৫৪৩ কোটি ৩৫ লাখ টাকা, যা বরাদ্দের ৮.৬৮ শতাংশ। অর্থাৎ মাসের হিসাবে এডিপি বাস্তবায়ন প্রায় দুই শতাংশ কম হয়েছে।

আইএমইডির তথ্য বিশ্লেষণে দেখা গেছে, শতাংশের হিসাবে বাস্তবায়নে পিছিয়ে থাকলেও টাকা খরচে এগিয়ে রয়েছে স্থানীয় সরকার বিভাগ। বিভাগটির ২৬৩টি প্রকল্পের বিপরীতে বরাদ্দ ছিল ৪২ হাজার ৯৫৬ কোটি ৭১ লাখ টাকা। অর্থবছরের ১০ মাসে ব্যয় হয়েছে ২৩ হাজার ৭৬২ কোটি ২৬ লাখ টাকা, যা শতাংশের হিসাবে ৫৫.০৩ শতাংশ। দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা বিদ্যুৎ বিভাগ খরচ করেছে ২০ হাজার ৭৬২ কোটি ২৬ লাখ টাকা, যা মোট বরাদ্দের ৬৮.২৯ শতাংশ।

১০ মাসে ৩০ শতাংশও বাস্তবায়ন করতে পারেনি আটটি মন্ত্রণালয় ও বিভাগ। এর মধ্যে সবচেয়ে পিছিয়ে আছে অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ। চলতি অর্থবছরে তাদের বরাদ্দ ছিল ২৪২ কোটি ৬৮ লাখ টাকা। ১০ মাসে ব্যয় করেছে মাত্র ৪১ কোটি ৪২ লাখ টাকা, যা শতাংশের হিসাবে মাত্র ১৭.০৭ শতাংশ। এ ছাড়া নির্বাচন কমিশন সচিবালয় খরচ করেছে ২২.৮৮ শতাংশ, পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগ ২৪.৩১ শতাংশ, পররাষষ্ট্র মন্ত্রণালয় ২৪.৪২ শতাংশ, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ ২৬.৯৭ শতাংশ এবং পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় ২৮.২৫ শতাংশ বাস্তবায়ন করেছে।

নিউজটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর..
ফেসবুকে আমরা...
ক্যালেন্ডার...

Sun
Mon
Tue
Wed
Thu
Fri
Sat