স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা (এলডিসি) থেকে ২০২৬ সালে বাংলাদেশ বের হলেও দেশের সামনে নতুন কিছু চ্যালেঞ্জ আসবে। এর মধ্যে রয়েছে-বাণিজ্য সুবিধা কমে যাওয়া এবং কমবে স্বল্প সুদে ঋণ পাওয়ার সুযোগ। এ অবস্থায় আগামী ২-৩ বছর বাংলাদেশকে সতর্ক পদক্ষেপ নিতে হবে।
রোববার রাজধানীর হোটেল শেরাটনে আমেরিকান চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (অ্যামচেম) আয়োজিত ‘টেকসই প্রবৃদ্ধির জন্য বাংলাদেশের শ্রমিকের উন্নয়ন’ শীর্ষক গবেষণা রিপোর্ট প্রকাশ অনুষ্ঠানে বক্তারা এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠানে জানানো হয়, দেশের অর্থনীতিতে স্বল্পমেয়াদি ৫টি চ্যালেঞ্জ রয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে মুদ্রা বিনিময় হারে স্থিতিশীলতা, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ, আর্থিক খাতে সুশাসন নিশ্চিত করা, পুঁজিবাজারের গভীরতা বাড়ানো এবং মানবসম্পদের উন্নয়ন।
অ্যামচেমের প্রেসিডেন্ট সৈয়দ এরশাদ আহমেদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশের অধ্যাপক মো. মামুন হাবিব, শ্রম বিশেষজ্ঞ লীনা খান, শ্রম কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. হুমায়ূন কবির, আইএলও-এর প্রোগ্রাম ম্যানেজার নীরান রামজুথান প্রমুখ।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. আতিউর রহমান বলেন, আগামী দিনে এলডিসি উত্তরণ হলে বাংলাদেশের সামনে চ্যালেঞ্জ ও সম্ভাবনা দুটিই রয়েছে। এক্ষেত্রে শুল্ক সুবিধা কমবে। উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, এলডিসি উত্তরণের পর বেশকিছু দেশ ও অঞ্চলে বড় শুল্ক দিতে হবে। এর মধ্যে চীনের বাজারে পণ্য রপ্তানিতে ৬ দশমিক ৭ শতাংশ, জাপানে ৯ শতাংশ, ইউরোপীয় ইউনিয়নে ১১ দশমিক ৬ শতাংশ, কানাডায় ১৬ দশমিক ২ শতাংশ এবং ভারতে পণ্য রপ্তানিতে ২২ দশমিক ৭ শতাংশ শুল্ক দিতে হবে। কিন্তু বর্তমানে এসব দেশে রপ্তানিতে কোনো শুল্ক দিতে হয় না।
ড. আতিউর রহমান আরও বলেন, বাংলাদেশের অর্থনীতিতে স্বল্পমেয়াদি কিছু চ্যালেঞ্জ রয়েছে। এগুলো হলো-মুদ্রা বিনিময় হারে স্থিতিশীলতা এবং মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ, আর্থিক খাতে সুশাসন নিশ্চিত করে সামগ্রিকভাবে ব্যবসা-বাণিজ্যে আস্থা বাড়ানো, পুঁজিবাজারের গভীরতা বাড়ানো এবং শক্তিশালী বেসরকারি খাত প্রতিষ্ঠানে মানবসম্পদের উন্নয়ন। এসব চ্যালেঞ্জ দক্ষতার সঙ্গে মোকাবিলা করতে হবে।
অ্যামচেমের প্রেসিডেন্ট সৈয়দ এরশাদ আহমেদ বলেন, এলডিসি উত্তরণের পর আমাদের বাজার সুবিধা কমবে। এজন্য এখনই প্রস্তুতি নিতে হবে। তিনি আক্ষেপ করে বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের বর্তমান গভর্নর এবং জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যানের সঙ্গে দেখা করাই কঠিন।
প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, বাংলাদেশের ৩ কোটি ৯৯ লাখ মানুষের বয়স ৫ থেকে ১৭ বছরের মধ্যে। কিন্তু শিশু শ্রমিক আছে ১৭ লাখ। এ সময়ে কর্মস্থলে শ্রমিকদের নিরাপত্তা বাড়ানোর সুপারিশ তুলে ধরে বলা হয়, ২০১২ সালে তাজরিন গার্মেন্টসে দুর্ঘটনায় ১১২ জন নিহত এবং আহত হয়েছেন ২০০ জন। ২০১৩ সালে রানা প্লাজা দুর্ঘটনায় ১ হাজার ১৩৭ জন নিহত, আহতের সংখ্যা আড়াই হাজার ছাড়িয়ে যায়। ২০২১ সালে হাশেম ফুড ফ্যাক্টরিতে অগ্নিকাণ্ডে মৃতের সংখ্যা ৫২ এবং আহত ২০। সর্বশেষ ২০২২ সালে চট্টগ্রামে বিএম কনটেইনার ডিপোতে অগ্নিকাণ্ডে নিহত হয়েছেন ৪৯ জন শ্রমিক। এছাড়াও আহত হয়েছেন ৪৫০ জন।
অন্য বক্তারা বলেন, বাণিজ্য সুবিধার জন্য শ্রমিকের অধিকার খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলো এ বিষয়টিকে গুরুত্ব দেয়।
এ জাতীয় আরো খবর..