×
  • প্রকাশিত : ২০২৪-০৫-২৬
  • ৪৫ বার পঠিত
অনুকূল আবহাওয়া ও নিরবচ্ছিন্ন সেচ সুবিধার ফলে রাজশাহীসহ উত্তরাঞ্চলের জেলাগুলো এবং কিশোরগঞ্জের হাওড়ে বোরোর বাম্পার ফলন হয়েছে। সোনার ধানে ঘর-আঙিনা ভরে উঠলেও কৃষকের মুখে নেই হাসি। কারণ, তারা ন্যায্য দাম পাচ্ছেন না। চাষিরা বলছেন, চালের দাম না কমলেও ধানের দাম কমছে। মিলারদের সিন্ডিকেটের কারণে এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। তারা জানান, মৌসুমের শুরুতে চাষিরা উত্তরের হাটবাজারে বোরো ধানের ভালো দাম পেলেও চলতি সপ্তাহে মনপ্রতি দাম কমেছে ২০০ থেকে ২৫০ টাকা।

জানা যায়, উত্তরাঞ্চলের ধানের বৃহৎ মোকাম নওগাঁর সাপাহারে গত সপ্তাহে মোটা ধান বিক্রি হয়েছে ১ হাজার ৩৫০ টাকা মন দরে। সপ্তাহের ব্যবধানে মনে ১৫০ টাকা কমে একই জাতের ধান শনিবার বিক্রি হয়েছে ১ হাজার ২০০ টাকা দরে। ধান কেনাবেচার আরেক মোকাম রাজশাহীর কাকনহাটে বিআর-২৮ জাতের ধান বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ২০০ টাকা মন দরে।

কাকনহাটের নারায়ণপুর গ্রামের চাষি নজরুল ইসলাম বলেন, বোরো কাটা শুরুর দিকে ধানের দাম মনপ্রতি ২০০ থেকে ২৫০ টাকা বেশি ছিল। আমি এক মাস আগে ৫ মন ধান বিক্রি করেছি ১ হাজার ৪০০ টাকা মন দরে। তবে কয়েকদিন ধরে ধানের দাম কিছুটা পড়তির দিকে।

রাজশাহীর তানোরের চন্দনকোঠা গ্রামের কৃষক শরিফুল ইসলাম বলেন, মুণ্ডমালা বাজারে ধানের আমদানি বেশি হলেও ক্রেতা কম। বড় বড় মিলারের দালালরাই অধিকাংশ ধান কিনছে মোকামে বসে। মিলারদের দালাল সিন্ডিকেট ধান কেনায় কৃষকরা দাম কম পাচ্ছেন। গোদাগাড়ীর দিগরাম এলাকার চাষি আব্দুর রহিম বলেন, চলতি মৌসুমে বরেন্দ্র অঞ্চলে বোরোর ভালো ফলন হয়েছে। প্রতি বিঘা ধান আবাদে খরচ হয়েছে ১৪ হাজার টাকার মতো। এখন এক বিঘায় ধান পাওয়া যাচ্ছে ২৫ থেকে ২৮ মন। ১ হাজার ২০০ টাকা মন দরে বিক্রি করলে এক বিঘায় ৩০ হাজার টাকার ধান পাওয়া যাচ্ছে। এ চাষি আরও জানান, বিঘাতে কৃষকের লাভ হচ্ছে ১৫ হাজার টাকা। তবে ধানের দাম পড়ে গেলে কৃষকের আর্থিক ক্ষতি হবে বলে জানান তিনি।

অভিযোগের বিষয়ে নবাব অটোরাইস মিলের মালিক আকবর হোসেন যুগান্তরকে বলেন, বাজারে ধানের আমদানির ওপর দাম নির্ভর করে। ধান বেশি উঠলে দাম কমে, কম উঠলে বাড়ে। এখানে সিন্ডিকেট বলে কিছু নেই।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কৃষি তথ্য বিভাগ সূত্রে জানা যায়, উত্তরের ১৬ জেলায় মোট আবাদযোগ্য জমির পরিমাণ ২৭ লাখ ১৬ হাজার ৩৫৪ হেক্টর। এর মধ্যে রংপুর বিভাগে ১২ লাখ ৯৭ হাজার ৯৬৪ হেক্টর এবং রাজশাহী বিভাগে ১৪ লাখ ১৮ হাজার ৩৯০ হেক্টর। এর মধ্যে চলতি মৌসুমে মোট ১৬ লাখ ৮৫ হাজার ১২৭ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের আবাদ হয়েছে। এ পরিমাণ জমি থেকে ৫৮ লাখ ৮৭ হাজার ৩৭৮ মেট্রিক টন বোরো ধান ফলনের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে। তবে ফলন ভালো হওয়ায় বোরোর উৎপাদন এবার লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাবে বলে আশা করা হচ্ছে।

এদিকে কিশোরগঞ্জের ইটনা উপজেলার ধনপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান প্রদীপ কুমার দাস জানান, সিন্ডিকেটের কারণে ধানের উপযুক্ত দাম না পাওয়ায় তিনি তার ৪০ একর জমি বর্গাচাষিদের হাতে তুলে দিয়েছেন। এবার প্রতি একর জমিতে ৭০ থেকে ৭৫ মন বোরো ফসল উৎপাদন হয়েছে। কিন্তু বর্গাচাষিরও খরচ ও ঋণ মেটাতে ধানের একটি অংশ ফড়িয়া ব্যবসায়ীদের কাছে আগাম পানির দরে বিক্রি করে দিতে বাধ্য হচ্ছেন। তিনি বলেন, প্রকৃত বোরো চাষিরা কখনো সরকারি খাদ্যগুদামে তাদের ধান বিক্রি করতে পারেন না।

জানা যায়, কিশোরগঞ্জের ১৩ উপজেলার মধ্যে ৮টিতে কার্ডধারী কৃষকের কাছ থেকে অনলাইনে আবেদন নিয়ে লটারির মাধ্যমে সরকারি খাদ্যগুদামে ধান কেনার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। কিন্তু বর্গাচাষিদের জন্য কোনো কার্ড বরাদ্দ নেই। কৃষকরা জানান, হাওড়ে মজুতদার ও চালকল মালিকদের হয়ে ফড়িয়া ব্যবসায়ীদের ভিড় এখন ফসলের মাঠ, ধান শুকানোর খলা ও হাটবাজারে। কৃষকরা চাষাবাদের খরচের দেনা শোধ এবং ধান কাটা ও মাড়াইয়ের খরচ মেটাতে তাদের কাছে কম দামে ধান বিক্রি করে দিচ্ছেন।

তারা আরও জানান, এক মন ধান উৎপাদনে ৮৫০ থেকে ৯০০ টাকা খরচ হয়েছে। আর সেই কষ্টের ধান ফড়িয়া ও মজুতদারদের কাছে ৯০০ থেকে ১০০০ টাকা মন দরে বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন।

তবে ফড়িয়া ব্যবসায়ীদের দাবি, ভেজা ধান কেনার পর সেই ধান শুকাতে হচ্ছে। তাই বর্তমানে বাজারে ধানের দামে এমন অসংগতি।

কিশোরগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. আবুল কালাম আজাদ বলেন, জেলায় এ বছর ১ লাখ ৬৬ হাজার ৪২০ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের আবাদ হয়েছে। উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ১১ লাখ ১৬ হাজার ২১০ মেট্রিক টন।

নিউজটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর..
ফেসবুকে আমরা...
ক্যালেন্ডার...

Sun
Mon
Tue
Wed
Thu
Fri
Sat