পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে ভারত ও চীনের ভূমিকা অত্যন্ত মুখ্য। এই বিষয়ে তাদেরকে আরও বেশি করে যুক্ত করতে পারলে সমস্যা সমাধান করা সম্ভব।
রোববার (১৯ মে) রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া মিলনায়তনে ওভারসিস করেসপন্ডেন্টস বাংলাদেশ (ওকাব) আয়োজিত ‘রোহিঙ্গা সংকট : ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা‘ শীর্ষক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানের জন্য আমরা কূটনৈতিক পথ অবলম্বন করছি। একইসঙ্গে আন্তর্জাতিক আদালতে গিয়েছি। গাম্বিয়া ও ওআইসির মাধ্যমে আইসিজেতে মামলা করেছি। মামলায় এখন পর্যন্ত যে আউটকাম এসেছে, সেটি আমাদের পক্ষে। গাম্বিয়া বলেছে, মামলা সঠিক পথে যাচ্ছে। আমরা আশা করছি, খুব দ্রুত এই মামলার ইতিবাচক আউটকাম আসবে।
ড. হাছান মাহমুদ বলেন, আশা করছি, আইসিজের মাধ্যমে একটি আন্তর্জাতিক চাপ মিয়ানমারের ওপর পড়বে। ক্রমাগতভাবে চেষ্টা করেছি, আন্তর্জাতিকভাবে যেসব দেশের প্রভাব মিয়ানমারের ওপর আছে, তাদের এই বিষয়ে যুক্ত করার। কয়দিন আগে মার্কিন সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী বাংলাদেশ ঘুরে গেছেন। তার সঙ্গেও রোহিঙ্গা বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। সেই আলোচনায় সমস্যা সমাধানের জন্য কিছু পরামর্শ দিয়েছেন।
তিনি বলেন, রোহিঙ্গা সংকটের একমাত্র সমাধান তাদের নিজ দেশে প্রত্যাবর্তন। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা তাদের জীবিকা নির্বাহের সুযোগ দিতে বলেছে। ক্যাম্পে তারা কিছু কাজ করছে। কিন্তু তাদের পুরোপুরি জীবিকা নির্বাহের নিশ্চয়তা আমরা কীভাবে দেব? ক্যাম্পের ভেতরে আমরা সীমিত কিছু কাজের ব্যবস্থা করতে পারি। কিন্তু ক্যাম্পগুলো খুবই সংকীর্ণ ও জনাকীর্ণ। রোহিঙ্গাদের জীবিকা নির্বাহের ব্যবস্থা করা সমাধান নয়। একমাত্র সমাধান হচ্ছে সব অধিকারসহ তাদের নিজ দেশে প্রত্যাবর্তন।
তিনি আরও বলেন, আন্তর্জাতিক চাপ যদি আমরা অব্যাহত রাখতে পারি এবং আইসিজে থেকে যদি একটি ভালো রায় আমাদের পক্ষে আসে, তাহলে মিয়ানমারের ওপর চাপ আরো বাড়বে। তখন মিয়ানমার রোহিঙ্গা প্রত্যাবর্তন শুরু করবে। মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ জাতিগত সংঘাত রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবর্তনের ব্যাপারে অজুহাত হিসেবে দাঁড় করানো উচিত নয়।
রোহিঙ্গাদের ক্ষেত্রে মানবিক দিক ও প্রত্যাবর্তনের বিষয়ে সাবেক পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম বলেন, রোহিঙ্গা সংকট এখনো বিশ্বব্যাপী একটি বড় সমস্যা। এই সংকটের আরো অনেক গভীরে যেতে হবে। যতদিন যাবে এই সমস্যার গভীরতা আরও বাড়বে৷ তাই শান্তিপূর্ণ উপায়ে রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবর্তন একটি বড় চ্যালেঞ্জ। এর সমাধানে আঞ্চলিক শক্তিগুলোকে একযোগে উদ্যোগী হতে হবে।
সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করে ওকাবের কার্যকরী কমিটির সদস্য ফরিদ আহমেদ বলেন, রোহিঙ্গাদের অব্যাহত অবস্থান বাংলাদেশের অর্থনীতি, জীববৈচিত্র্য, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উপর প্রভাব ফেলছে। রোহিঙ্গারা মাদক ও অস্ত্র চোরাচালান, সন্ত্রাসী তৎপরতা, পাচারের মতো অপরাধের সঙ্গে যুক্ত হচ্ছে। অনেকে মানব পাচারকারীদের শিকার হচ্ছেন এবং ক্যাম্প থেকে পালিয়ে থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া এবং ইন্দোনেশিয়ার মতো দেশে ভ্রমণের চেষ্টা করছে। এমনকি তারা বাংলাদেশের পাসপোর্ট ও এনআইডি কেলেঙ্কারিতে জড়িয়ে পড়ছে রোহিঙ্গারা।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শান্তি ও সংঘর্ষ বিভাগের অধ্যাপক তৌহিদুল ইসলাম বলেন, মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ সংকট রোহিঙ্গা প্রত্যাবর্তনকে বাধাগ্রস্ত করছে। রোহিঙ্গারা দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের ছড়িয়ে পড়ছে। সংখ্যার দিক থেকে বাঙালিরাই এখন উখিয়ায় সংখ্যালঘু। সেখান থেকে তারা শুধু টেকনাফ-কক্সবাজার নয় সারা দেশেই ছড়িয়ে পড়ছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক দেলোয়ার হোসেন বলেন, ক্যাম্পগুলোতে আরসাসহ বিভিন্ন জঙ্গি গোষ্ঠীর কার্যক্রম বাড়ছে কি না তা গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করতে হবে।
ওকাবের সভাপতি নজরুল ইসলামের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর সাবেক তথ্য উপদেষ্টা ইকবাল সোবহান চৌধুরী, ইউরোপীয় ইউনিয়নের ঢাকা অফিসের মিডিয়া কো-অর্ডিনেটর তৌহিদ রোজ, জাতীয় প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি শওকত মাহমুদ প্রমুখ।
এ জাতীয় আরো খবর..