জৌলুস হারিয়ে দখল-দূষণে নিমজ্জিত আদি বুড়িগঙ্গা এখন জীর্ণ-শীর্ণ। সিটি করপোরেশন উদ্যোগ নেয়ার পরও কমছে না দখলদারদের দৌরাত্ম্য। রীতিমতো যেন আরো জেঁকে বসেছেন প্রশাসনের ঘাড়ে। এ অবস্থা থেকে দ্রুতই মুক্তি চান বুড়িগঙ্গাপাড়ের বাসিন্দারা। সিটি করপোরেশন বলছে, সীমানা পিলার বসানোর কাজ শেষ; বর্ষার পর মানা হবে না আর কোনও অজুহাত।
আদি বুড়িগঙ্গা চ্যানেলের প্রাণ ফেরাতে চেষ্টা চলছে প্রাণান্তর। উচ্ছেদের পর উচ্ছেদ, খোঁড়াখুঁড়ি আর দখলদারদের দৌরাত্ম্য রোধে তৎপর সংশ্লিষ্ট মহল। ফলাফল, সোয়ারিঘাটের দিকে কিছুটা হলেও প্রাণ ফিরেছে এ চ্যানেলে।
তবে ঠিক কতটুকু দখলমুক্ত হয়েছে, সেটা দেখতেই সেকশন এলাকায় সরেজমিনে সময় সংবাদ।
ওই এলাকার বাসিন্দা নাজমা বেগম। এখানেই কেটেছে তার পুরো যৌবন। জানালেন, বুড়িগঙ্গার অতীত থেকে বর্তমান। বলেন, এতোদিন রাজনীতিবিদরা জায়গা দখল করে রেখেছিল। সিটি করপোরেশনের অভিযানের পর কিছুটা কমেছে।
সামনে এগোতেই দেখা মিললো এক দ্বীপের। চারিদিকে খাল, মাঝে ভাঙাচোরা এক ভবন। অর্থাৎ, নদীর মাঝে বালু ভরাট কর দখলে নিয়ে গড়ে তোলা হয়েছে পাকা ভবন। যেন মগের মুল্লুক! অভিযানে এ ভবনের কিছুটা অংশ ভেঙে দিলেও থেমে নেই সেখানকার কার্যক্রম।
সিটি করপোরেশনের উচ্ছেদ অভিযানে সম্পূর্ণ যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন দ্বীপ; কিন্তু স্থাপনায় কাঠের সাঁকো তৈরি করে ব্যবসা-বাণিজ্য চালিয়ে যাচ্ছেন দখলদাররা। বারবার নোটিশ দেয়ার পরও জায়গা ছাড়ছেন না তারা।
যদিও দখলদারদের দাবি, ব্রিটিশ আমলের কাগজ যাদের কাছে আছে, সেগুলো বের করে দেখতে হবে। কাগজই কথা বলবে।
একটু এগিয়ে মোহাম্মদপুরের দিকে যেতেই দেখা মেলে বেশকটি করপোরেট প্রতিষ্ঠানের। সিটি করপোরেশনের সিদ্ধান্তকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে দেদারসে চলছে ব্যবসা-বাণিজ্য।
যদিও আদি বুড়িগঙ্গা চ্যানেলের দুপাশে নতুন করে দখল বন্ধে বসানো হয়েছে সীমানা প্রাচীর। এ কাজে সিটি করপোরেশনের প্রশংসা করছেন অনেকেই। তবে স্থানীয়দের প্রশ্ন: এ নদী দখল করে এতোদিন যারা ব্যবসা-বাণিজ্য করে বনে গেছেন রাঘববোয়াল, তাদের বিরুদ্ধে কি আদৌ লড়তে পারবে সিটি করপোরেশন?
দক্ষিণের নগরপিতা শেখ ফজলে নূর তাপস বললেন, ‘দখলদারদের কয়েক দফায় দেয়া হয়েছে নোটিশ। বর্ষার পর কাজ শুরু করলে মানা হবে না আর কোনও অজুহাত। আমরা সীমানা চিহ্নিত করেছি। আমাদের মূল নকশার কাজ হয়ে গেলে দরপত্র আহ্বান করে টেকসই নান্দনিক নদী-কাঠামো গড়ে তুলবো।’
উচ্ছেদের পর বুড়িগঙ্গার আদি চ্যানেলকে নিয়ে এখন নতুন স্বপ্ন বুনছে নগরবাসী। তবে তা কবে নাগাদ পূর্ণতা পাবে, সেই উত্তর পেতে তাদের দৃষ্টি এখন নগর ভবনে।