ইউক্রেনের ওপর হামলার কারণে পশ্চিমাবিশ্ব কার্যত একঘরে করে রাখলেও রাশিয়ার কিছু বন্ধু এখনো রয়েছে। বিশেষ করে রাজনৈতিক সমর্থন ও ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে চীনের ওপর সে দেশের নির্ভরতা বেড়েই চলেছে। রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন বৃহস্পতিবার দুই দিনের রাষ্ট্রীয় সফরে চীনে গিয়ে সেই সম্পর্ক আরো জোরালো করার অঙ্গীকার করেছেন। চীনের প্রেসিডেন্ট শি চিনপিং তাকে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বাগত জানিয়েছেন।
উল্লেখ্য, ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ইউক্রেনের ওপর হামলার ঠিক আগে রাশিয়া ও চীন ‘সীমাহীন’ সহযোগিতার অঙ্গীকার করেছিল। এ যাত্রায় পুতিনের প্রতিনিধিদলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভ, সদ্য নিযুক্ত প্রতিরক্ষামন্ত্রী আন্দ্রেই বেলুসভ ও রুশ নিরাপত্তা পরিষদের সচিব সের্গেই শোইগুও রয়েছেন।
চীন সফরের ঠিক আগে সে দেশের সিনহুয়া সংবাদ সংস্থাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে পুতিন চীনের প্রেসিডেন্টের ভূয়সী প্রশংসা করেন। জাতীয় স্বার্থ ও গভীর পারস্পরিক আস্থার ভিত্তিতে শি যেভাবে রাশিয়ার সঙ্গে ‘কৌশলগত’ সহযোগিতা গড়ে তুলেছেন, তার প্রশংসা করে পুতিন বলেন, সে কারণেই প্রেসিডেন্ট হিসেবে আবার কার্যভার গ্রহণের পর তিনি প্রথম বিদেশ সফরের গন্তব্য হিসেবে চীনকেই বেছে নিয়েছেন।
তিনি শিল্প, উচ্চ পর্যায়ের শিল্প, মহাকাশ, পরমাণু শক্তির শান্তিপূর্ণ ব্যবহার, এআই, পুনর্ব্যবহারযোগ্য জ্বালানির উৎস ও অন্যান্য উদ্ভাবনি ক্ষেত্রে আরো নিবিড় দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতার উদ্যোগ নিতে চান। সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের সঙ্গে গণপ্রজাতন্ত্রী চীনের কূটনৈতিক সম্পর্কের ৭৫ বছর পূর্তি উপলক্ষ্যে পুতিনের সফরের সময় বড় উৎসবের আয়োজন করা হয়েছে।
এ ছাড়া ইউক্রেন যুদ্ধ অবসানের ক্ষেত্রেও চীনের উদ্যোগ সম্পর্কে ইতিবাচক মনোভাব দেখাচ্ছেন পুতিন। তার মতে, বর্তমান এই সংকট সম্পর্কে শি চিনপিংয়ের প্রকৃত ধারণা রয়েছে।
তবে যুদ্ধের কারণে রাশিয়ার ওপর পশ্চিমা জগতের কড়া নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও চীন সে দেশকে সরাসরি অস্ত্র পাঠায়নি। গত মাসে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিনকেন বেইজিং সফরে গিয়ে রাশিয়ার সঙ্গে সামরিক সহযোগিতার বিষয়ে চীনকে সতর্ক করে দিয়েছিলেন। চীন ও রাশিয়া প্রকাশ্যে যুক্তরাষ্ট্রের ‘আধিপত্য’ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করলেও বেইজিং চীনের কম্পানিগুলোর ওপর পশ্চিমা জগতের নিষেধাজ্ঞা এড়াতে রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্কের ক্ষেত্রে সীমারেখা মেনে চলার চেষ্টা করছে। নিষেধাজ্ঞার ভয়ে চীনের ব্যাংকগুলোও রাশিয়ার ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করতে শুরু করেছে। গত মার্চ ও এপ্রিল মাসে রাশিয়ায় চীনের রপ্তানিও কমে গেছে।
গত ডিসেম্বর মাসে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন রাশিয়ার সঙ্গে সহযোগিতার দায়ে তৃতীয় দেশের ব্যাংকগুলোর ওপরও নিষেধাজ্ঞা চাপানোর নির্বাহী আদেশ দেওয়ার পর চীনসহ কিছু দেশ অস্বস্তিতে পড়েছে। চীনের কিছু কম্পানি ইতিমধ্যেই সমস্যার মুখে পড়েছে।
এ জাতীয় আরো খবর..