×
  • প্রকাশিত : ২০২৪-০৫-১৫
  • ৪৯ বার পঠিত
সেমিকন্ডাক্টর নিয়ে বিশ্বে অঘোষিত লড়াই চলছে। এর বর্তমান বিশ্ব বাজার ৬৭৩ দশমিক ১ বিলিয়ন ডলার। ২০৩২ সালে যা ১ হাজার ৩০৭ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছবে। কিন্তু বাংলাদেশ শুধু সেমিকন্ডাক্টর ডিজাইন করে বছরে ৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার আয় করছে।

বিপুল এই সম্ভাবনাময় খাত থেকে বাংলাদেশের আয় বাড়াতে প্রয়োজন সারকারি-বেসরকারি বিনিয়োগ, সরকারের নীতিসহায়তা ও দক্ষ মানবসম্পদ।
আজ বুধবার (১৫ মে) বিকেলে রাজধানী মতিঝিলে ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই) কার্যালয়ে এক আলোচনাসভায় বক্তারা এসব কথা বলেন। বাংলাদেশে সেমিকন্ডাক্টর শিল্পখাতের সম্ভাবনা শীর্ষক সভার আয়োজন করে ডিসিসিআই।

অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) ন্যানোমেটিরিয়ালস অ্যান্ড সিরামিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ড. এ এস এম এ হাসীব।

তিনি বলেন, ‘ইলেকট্রিকাল ও ইলেকট্রনিক্স পণ্যের ডিজাইন, চিপ ফেব্রিকশন, অ্যাসেম্বেলিং, টেস্টিং ও প্যাকেজিংকেই প্রধানত সেমিকন্ডাক্টর খাত হিসেবে বিবেচিত হয়। ২০২৪ সালে এর বিশ্ব বাজার বাজার ৬৭৩ দশমিক ১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। একই ভাবে ২০২৬ সালে হবে ৮২২ দশমিক ৩, ২০২৮ সালে ৯৩২ দশমিক ২, ২০৩০ সালে ১০৯৩ দশমিক ১ বিলিয়ন ডলারের বাজার হবে। এটি অত্যন্ত শ্রমঘন শিল্পখাত।

বিশ্বের মধ্যে ৮১শতাংশই এশিয়া মহাদেশের বিভিন্ন দেশে উৎপাদিত হচ্ছে। যার মধ্যে অন্যতম তাওয়ান, দক্ষিণ-কোরিয়া, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, ভিয়েতনাম, চীন, জাপান ও ভারত।’
ড. হাসীব বলেন, ‘এই দেশগুলোর সরকার সেমিকন্ডাক্টর খাতের বিকাশে বিনিয়োগ, ঋণ, নীতি সহায়তা, কর অব্যাহতি এবং গবেষণার জন্য প্রয়োজনীয় সহযোগিতা দিচ্ছে। আমাদের দেশে দক্ষ জনবল রয়েছে। এখন এই খাতে সমন্বিত কর্মপরিকল্পনা, নীতি সহায়তা ও বাস্তবায়নের দিকে নজর দিতে হবে।

সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্য প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহম্মেদ পলক বলেন, বিশ্বে এখন সেমিকন্ডাক্টর নিয়ে অঘোষিত লড়াই চলছে। 
২০৪১ সালে আমাদের ৫০ বিলিয়ন ডলারের রপ্তানির লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে হলে সেমিকন্ডাক্টর খাত থেকে ১০ বিলিয়ন ডলার আয় নিয়ে আসতে হবে। যা সবার সম্মিলিত সহযোগিতায় এই লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করা সম্ভব। এই খাতে বিলিয়ন ডলারের বিনিয়োগ প্রয়োজন, উদ্যোক্তা প্রয়োজন। দেশি বা বিদেশি কোনো বিনিয়োগকারী আসলে আমরাও তাদের জন্য অর্থসহায়তা দেব। এখন আমাদের দেশের ছেলে-মেয়েরা বড়-বড় কম্পানির সেমিকন্ডাক্টরের ডিজাইন করছে। আমরা ১ লাখ তরুণ-তরুণীকে এই খাতের জন্য তৈরি করার লক্ষ্য নিয়ে এগুচ্ছি। স্মার্ট বাংলাদেশ বির্নিমাণের লক্ষ্যে পৌঁছতে হলে, আমাদের স্মার্ট গভমেন্ট, স্মার্ট ইকোনোমির পাশাপাশি স্মার্ট প্রাইভেট সেক্টরের সমন্বয় দরকার।’

প্রতিমন্ত্রী আরো বলেন, ‘প্রয়োজনীয় অবকাঠামো ও নীতি সহায়তার কারণেই বর্তমানে তথ্য-প্রযুক্তি খাতে দেশীয় উদ্যোক্তাদের পাশাপাশি বিদেশি উদ্যোক্তাদের বিনিয়োগ বৃদ্ধি পাচ্ছে। দেশে বর্তমানে ৪টি প্রতিষ্ঠান সেমিকান্ডাক্টিং খাতে বেশ ভালো করছে। তবে এ খাতের যথাযথ বিকাশে আমাদেরকে চিপ ম্যানুফেকচারিং, অ্যাসেম্বিলিং ও প্যাকেজিং-এর উপর আরো বেশি গুরুত্ব দিতে হবে। সামনের দিনগুলোতে প্রযুক্তিখাতের সকল স্তরে ন্যানো চিপের বহুমুখী ব্যবহার বাড়বে। তাই আমাদেরকে এ ব্যাপারে এখনই মনোযোগী হতে হবে। আর এই খাতের সার্বিক উন্নয়নে আমরা সেমিকন্ডাক্টর নীতি প্রণয়ন করব।’

স্বাগত বক্তব্যে ডিসিসিআই সভাপতি আশরাফ আহমেদ বলেন, ‘স্থানীয় শিল্পের বিকাশের পাশাপাশি সেমিকন্ডাক্টর খাতে বৈদেশিক বিনিয়োগ আকর্ষণে আমাদেরকে দক্ষ জনবল তৈরির কোনো বিকল্প নেই। এজন্য আমাদের শিক্ষাক্রমের আমূল পরিবর্তন ও নতুন প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়ানোতে মনোযোগী হতে হবে। সেমিকন্ডাক্টর খাতের বিকাশে ব্যবসা পরিচালনায় লাইসেন্স প্রাপ্তি প্রক্রিয়া সহজীকরণ, সহায়ক নীতি সহায়তা নিশ্চিতকরণ, ঋণ সহায়তা প্রদান বিশেষকরে এ খাতের এসএমইদের স্বল্পসুদে ঋণ সুবিধা দিতে হবে। এ ছাড়া ব্যাক-টু-ব্যাক এলসি বন্ডেড ওয়্যারহাউজ, কর অব্যাহতি সুবিধা দেওয়াসহ একটি সমন্বিত কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন খুবই জরুরী।’

বাংলাদেশ হাই-টেক পার্ক কর্তৃপক্ষের ব্যবস্থাপনা পরিচালক জি এস এম জাফরউল্লাহ্ বলেন, ‘সেমিকন্ডাক্টর খাতের বিকাশে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণের এখনই সময়। আমাদের পক্ষ থেকে ১০টি বিশ্ববিদ্যালয়ে টেকনিক্যাল হাব স্থাপন করা হচ্ছে, যেগুলো দক্ষ জনবল তৈরিতে ভূমিকা রাখবে। পদ্মা সেতুর ওপরে শিবচরে প্রায় ৭০ একর জমিতে শেখ হাসিনা ইনসটিটিউট অফ ফ্রন্টওয়ার টেকনোলোজি (শিফট) নামের ইনস্টিটিউিট স্থাপন করা হবে। যেখানে তথ্য-প্রযুক্তিখাতের তরুণ জনগোষ্ঠীকে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দক্ষ করে গড়ে তোলা হবে। যার অর্থনীতিতে বড় অবদান রাখতে সক্ষম হবে।’ 

তিনি আরো বলেন, ‘সারাদেশে ৯৪টি হাইটেক পার্ক হবে স্থাপন করা হবে, যার মধ্যে ২১টি নির্মাণ কাজ প্রায় শেষ হয়েছে। কেউ যদি এই খাতের জন্য জায়গা চায় তাহলে আমরা ঢাকা, সিলেট, রাজশাহী ও যশোরের হাইটেক পার্কগুলোতে শিল্প স্থাপনের জন্য জমি ও প্রয়োজনীয় সুবিধা দেব।  তথ্য-প্রযুক্তি খাতে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ বাড়াতে আরও কিছুদিন কর অব্যাহতি সুবিধা দেওয়া উচিত।’

সভায় আরো উপস্থিত ছিলেন বন্ডস্টেইন টেকনোলোজি লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মীর শাহরুখ ইসলাম, সফটওয়্যার টেটোন প্রাইভেট লিমিটেডের সহপ্রতিষ্ঠাতা ও ভাইস চেয়ারম্যান রাজীব হাসান, ওয়ালটন ডিজি-টেক ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডর অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক লিয়াকত আলী, যুক্তরাজ্যের রিডিং বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিজিটিং অধ্যাপক ড. এম নিয়াজ আসাদুল্লাহ, ডিসিসিআই ঊর্ধ্বতন সহসভাপতি মালিক তালহা ইসমাইল বারী প্রমুখ।

নিউজটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর..
ফেসবুকে আমরা...
ক্যালেন্ডার...

Sun
Mon
Tue
Wed
Thu
Fri
Sat