×
  • প্রকাশিত : ২০২৪-০৫-১১
  • ৪৯ বার পঠিত
দিল্লি বিমানবন্দর দিয়ে তৈরি পোশাকসহ বাংলাদেশি পণ্য রফতানির ক্ষেত্রে আপত্তি জানিয়ে ল্যান্ডিং চার্জ আদায় করার দাবি করেছেন ভারতীয় ব্যবসায়ীরা। যদিও এ দাবিকে বিদ্বেষমূলক ও অযৌক্তিক বলে মন্তব্য করেছেন স্বয়ং দেশটির আন্তর্জাতিক বাণিজ্য বিশ্লেষকরা।
দিল্লি বিমানবন্দর দিয়ে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক পাঠাতে গেলে অতিরিক্ত চার্জ আদায় করতে হবে। ভারতীয় রফতানিকারকদের এমন দাবি দুরভিসন্ধিমূলক এবং এ ব্যাপারটি খতিয়ে দেখার দাবি জানিয়েছে নিট শিল্প মালিকদের শীর্ষ সংগঠন বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিকেএমইএ)। আর ষড়যন্ত্রের যোগসূত্র খুঁজে বের করার পাশাপাশি বাংলাদেশি এয়ারলাইন্সগুলোর কার্গো পরিবহন সক্ষমতা বাড়ানোর পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।

ভারতীয় বিভিন্ন গণমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুসারে, বাংলাদেশি ব্যবসায়ীরা তাদের পণ্য ইউরোপ-আমেরিকায় পাঠাতে বর্তমানে দিল্লির ইন্দিরা গান্ধী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর এতোটাই বেশি ব্যবহার করছে যে, সেখানে জায়গা পেতে ভারতীয়রাই হিমশিম খাচ্ছেন। এমনকি নিজেদের বন্দর ব্যবহারে তাদের করতে হচ্ছে বাড়তি ব্যয়।
 
এই অবস্থা থেকে মুক্তি পেতে দিল্লির বিমানবন্দর ব্যবহারে বাংলাদেশি পণ্যের ওপর ল্যান্ডিং চার্জ আরোপে কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে দাবি জানিয়েছে ফেডারেশন অব ইন্ডিয়ান এক্সপোর্ট অর্গানাইজেশন (এফআইইও)। এমনকি দিল্লিকে ব্যবহার করে বাংলাদেশি পণ্য রফতানি বন্ধ করে দেয়ার দাবিও তুলেছে দেশটির অ্যাপারেল এক্সপোর্ট প্রমোশন কাউন্সিল (এইপিসি)।
 
তবে ভারতীয় ব্যবসায়ীদের এমন দাবিকে অযৌক্তিক আর প্রতিযোগিতামূলক ব্যবসায়িক আচরণের পরিপন্থি হিসেবে উল্লেখ করেছেন দেশটির আন্তর্জাতিক বাণিজ্য বিশেষজ্ঞরা।
  
ভারতের আন্তর্জাতিক বাণিজ্য বিশেষজ্ঞ উৎপল রায় বলেন, কার্গো ফ্লাইট যত আসবে, সে অনুপাতে বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ ট্যাক্স পাবে, অর্থাৎ সরকারি কোষাগারে সেই অর্থ জমা হবে। পাশাপাশি এই বিমানবন্দর ব্যবহার করে ভারতের মাধ্যমে যত পণ্য রফতানি হবে, সরকার ততই লাভবান হবে। তাই দিল্লির বিমানবন্দর ব্যবহারের ক্ষেত্রে আপত্তি থাকার কোনো কারণই নেই।
 
দিল্লি বিমানবন্দর দিয়ে বাংলাদেশি পণ্য রফতানি কতটা বেড়েছে সেই তুলনামূলক চিত্রও তুলে ধরেছে ভারতীয় গণমাধ্যম। গত বছরের এপ্রিল থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত দিল্লি বিমানবন্দর দিয়ে বাংলাদেশি পণ্য গেছে ৫ হাজার টন। সেখানে চলতি বছরের মার্চ পর্যন্ত ৩ মাসেই গেছে ৮ হাজার টন। এছাড়া গত বছরের এপ্রিল থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত ২ লাখ ৬০ হাজার টন কার্গো হ্যান্ডেল করেছে দিল্লি বিমানবন্দর। সেই হিসাবে বাংলাদেশি পণ্য ছিল ২ শতাংশেরও কম। অথচ চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত প্রথম প্রান্তিকে এই বিমানবন্দর দিয়ে পণ্য গেছে ৯০ হাজার টন, যেখানে বাংলাদেশি পণ্য রয়েছে ৮ হাজার টন বা ৯ শতাংশ।
 
নিয়ম মেনেই বিমানবন্দর ব্যবহার করার পরও ভারতীয় ব্যবসায়ীদের এই বিদ্বেষপূর্ণ দাবি রফতানি বাজারে বাংলাদেশকে চাপে ফেলার ষড়যন্ত্রের অংশ কি-না তা খতিয়ে দেখা দরকার বলে মনে করে দেশের শীর্ষ রফতানিকারকদের সংগঠন বিকেএমইএ।
 
বিকেএমইএ নির্বাহী সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, নতুন করে এই ইস্যু সৃষ্টির কারণ খুঁজে বের করতে হবে। বাজার দখলে বাংলাদেশকে চাপে ফেলার ষড়যন্ত্র কি না তা খতিয়ে দেখতে হবে।
 
কিন্তু ঢাকা ছেড়ে কেন দিল্লির দিকে ঝুঁকছেন বাংলাদেশি রফতানিকারকরা, সেই প্রশ্নের উত্তর পাওয়া যায় কাস্টমস এজেন্ট বা ক্লিয়ারিং অ্যান্ড ফরোয়ার্ডিং (সিঅ্যান্ডএফ) এজেন্টদের তথ্য থেকে। তাদের তথ্য অনুসারে, ভারতীয় বিমানবন্দর ব্যবহারের পেছনে রয়েছে ফিলিস্তিন-ইসরাইল যুদ্ধ পরিস্থিতিতে লোহিত সাগরে নিরাপত্তা ঝুঁকি এবং কম খরচে পণ্য পাঠানোর সুযোগ।
  
তাছাড়া ঢাকা থেকে সরাসরি ইউরোপের কোনো দেশে এক কেজি কোনো পণ্য পাঠাতে ৩-৪ মাস আগে খরচ হতো ২ ডলার ৩০ সেন্ট থেকে ২ ডলার ৮০ সেন্ট পর্যন্ত। গত ঈদের আগে তা সাড়ে ৫ ডলারে ঠেকার পর, বর্তমানে নেমেছে ৪ ডলার ৩০ সেন্ট থেকে ৫ ডলার ২০ সেন্টের মধ্যে। অথচ বর্তমানে দিল্লি বিমানবন্দর হয়ে একই গন্তব্যে পণ্য পৌঁছাতে খরচ পড়ছে ৩ ডলার ৬০ সেন্ট থেকে ৪ ডলার ২০ সেন্ট। আর ট্রাকে করে দিল্লি বিমানবন্দর পর্যন্ত পণ্য পাঠাতে প্রতি কেজিতে খরচ পড়ছে ৬ সেন্ট। অর্থাৎ প্রতি কেজিতে বেঁচে যাচ্ছে প্রায় ১ ডলার।
 
আবার ঢাকা থেকে ১০ মেট্রিক টন পণ্য ট্রাকে করে দিল্লি বিমানবন্দরে পৌঁছাতে খরচ হয় ৬০ হাজার টাকা। বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাবে আগের ডলার রেট ১১০ টাকা ধরলে ডলারে এই খরচ দাঁড়ায় ৫৪৬ ডলার। অর্থাৎ প্রতি কেজিতে বাড়তি ০.০৫৪৬ ডলার যোগ করলেই সাশ্রয় হচ্ছে ১ ডলার।
 
এ অবস্থায় বাড়ন্ত বাজার-বাণিজ্য বিবেচনায়, বিশ্বের বড় বড় এয়ারলাইন্সের কার্গো বিমান যেন সরাসরি বাংলাদেশে আসে, সরকারকে সেই উদ্যোগ নেয়ার পরামর্শ দিয়েছেন পোশাক খাত বিশ্লেষকরা।
 
তৈরি পোশাক খাতের বিশ্লেষক অমিত কুমার বিশ্বাস বলেন, তৈরি পোশাক খাতে বাংলাদেশের অন্যতম প্রতিযোগী দেশ ভারত। সেই দিক বিবেচনা করলে, দেশের বিমানবন্দরের সক্ষমতা বাড়ানো প্রয়োজন। বিশ্বের বড় বড় এয়ারলাইন্সের কার্গো বিমানগুলো যেন বাংলাদেশের বিমানবন্দরই ব্যবহার করতে পারে, সেজন্য পদক্ষেপ নেয়া এখন জরুরি হয়ে পড়েছে। দেশের সরকার, ব্যবসায়ী এবং বিমানবন্দর সংশ্লিষ্টরা আলোচনায় বসলে দ্রুত ও কার্যকরী সমাধান পাওয়া যেতে পারে।
 
তাছাড়া পোশাক খাতের আন্তর্জাতিক বাজার ধরতে বাংলাদেশি এয়ারলাইন্সগুলোর কার্গো সক্ষমতা বাড়ানোরও সময় এসেছে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।

নিউজটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর..
ফেসবুকে আমরা...
ক্যালেন্ডার...

Sun
Mon
Tue
Wed
Thu
Fri
Sat