বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ হিসাব পদ্ধতি পরিবর্তন ও খেলাপি ঋণ কমিয়ে আনার তাগিদ দিয়েছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)। একই সঙ্গে সুদ ও বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময় হার বাজারের ওপর ছেড়ে দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছে সংস্থাটি। এছাড়া বাণিজ্য ঘাটতির অঙ্ক ও চলতি হিসাবে ভারসাম্য উন্নতি বিষয়ে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
বৃহস্পতিবার বিকালে বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে আইএমএফের রুদ্ধদ্বার সমাপনী বৈঠকে এসব পরামর্শ দিয়েছে সংস্থাটি। বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ ব্যাংকের নবনিযুক্ত গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার। সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন ডেপুটি গভর্নর আহমেদ জামাল, কাজী ছাইদুর রহমান, একেএম সাজেদুর রহমান খান, আবু ফরাহ মো. নাছের ও মাসুদ বিশ্বাস। এছাড়া সংশ্লিষ্ট নির্বাহী পরিচালক ও পরিচালকরা উপস্থিত ছিলেন। বৈঠক সূত্রে জানা যায়, আইএমএফ স্টাফ ভিজিট মিশন-২০২২ নামে প্রতিনিধি দলটি ১৪ জুলাই ঢাকা সফরে এসেছে। দফায় দফায় বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে আলোচনা করার পর এসব পরামর্শ দিয়েছে দলটি। আইএমএফের বিস্তর আলোচনার মধ্যে ছিল- করোনা ও ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সংকট মোকাবিলার উপায়, প্রয়োজনীয় নীতি প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন।
সংস্থাটি আরও বলেছে, রিজার্ভের অর্থে গঠিত ইডিএফসহ বিভিন্ন ঋণ তহবিল গঠন করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক, যা এখনো রিজার্ভেই দেখানো হচ্ছে। অথচ এগুলো নন লিকুইড সম্পদ বা ইনভেস্টমেন্ট গ্রেড সিকিউরিটিজ। সংস্থাটির ব্যালেন্স অব পেমেন্ট অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল ইনভেস্টমেন্ট পজিশন (বিপিএম-৬) ম্যানুয়াল অনুযায়ী, এসব দায় রিজার্ভ হিসাবে বিবেচিত হবে না।
এছাড়াও আলোচনায়, মহামারির মধ্যে ঘোষিত প্রণোদনা প্যাকেজ বাস্তবায়ন, সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে মুদ্রানীতি পদ্ধতির পরিবর্তন, বাণিজ্য ঘাটতি এবং চলতি হিসাবের ভারসাম্যের উন্নতির বিষয় উঠে আসে। এছাড়া প্রকৃত রিজার্ভের পরিমাণ জানতে চেয়েছে আইএমএফ। পাশাপাশি বৈদেশিক মুদ্রার তারল্যবিষয়ক আলোচনা হয় বৈঠকে। প্রয়োজনের তাগিদে ব্যবসায়িক নীতি পরিবর্তনের পরামর্শও দেওয়া হয়েছে। ব্যাংকের রেপো রেট, কল মানি, ট্রেজারি বিল, বন্ড, আমানত এবং ঋণের সুদের হার নিয়েও আলোচনা হয়েছে।
করোনার মধ্যে ব্যাংকের গ্রাহক ও ঋণখেলাপিদের দেয়া বিশেষ সুবিধাগুলোর মাধ্যমে কতটুকু উপকৃত হয়েছে দেশের অর্থনীতি এবং ক্ষুদ্র উদ্যোক্তারা কি পরিমাণ ঋণ পেয়েছেন সে বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে বৈঠকে। রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর পারফরম্যান্স এবং মূলধন সহায়তার পরিকল্পনা, খেলাপি ঋণ কমাতে স্বল্পমেয়াদি ও মধ্যমেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহণ নিয়ে জানতে চায় আইএমএফ। নতুন ব্যাংকের লাইসেন্সসংক্রান্ত বিষয় নিয়েও আলোচনা হয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মো. সিরাজুল ইসলাম যুগান্তরকে বলেন, খেলাপি ঋণ কমিয়ে আনার পরামর্শ এসেছে আইএমএফের পক্ষ থেকে। মুক্তবাজার অর্থনীতিতে ঋণের সুদহার নির্ধারণ না করে বাজারের ওপর ছেড়ে দেওয়ার তাগিদ দিয়েছে তারা। তিনি আরও বলেন, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের হিসাব পদ্ধতি সংশোধনের যে প্রস্তাব আইএমএফ দিয়েছে তা মানতে রাজি নয় বাংলাদেশ ব্যাংক। কারণ ইডিএফে ৭ বিলিয়ন ডলার ঋণ দেওয়া হলেও সেটা ঘূর্ণায়মান অবস্থায় আছে। সুতরাং তাদের প্রস্তাবের সঙ্গে একমত হতে পারছি না।
এ জাতীয় আরো খবর..