বাংলাদেশের চলমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতে আগেরবারের তুলনায় ২০২১-২২ অর্থবছরে মাথাপিছু বার্ষিক বৈদেশিক ঋণের পরিমাণ বেড়েছে। এক অর্থবছরে এই ঋণের পরিমাণ পাঁচ হাজার ৬৮২ টাকা বা ৬০ ডলার। বর্তমান বাজারদর (প্রতি ডলার ৯৪.৭০ টাকা ধরে) অনুযায়ী আগের অর্থবছর মাথাপিছু বৈদেশিক ঋণের পরিমাণ ছিল চার হাজার ২৭১ টাকা। অর্থাৎ আগের বছরের চেয়ে ২০২১-২২ অর্থবছর এক হাজার ৪১১ টাকা মাথাপিছু ঋণ বাড়ল।
অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) সব শেষ হালনাগাদ প্রতিবেদনের তথ্য বিশ্লেষণ করে এই হিসাব পাওয়া গেছে।
২০২১-২২ অর্থবছরে উন্নয়ন সহযোগী সংস্থারা বাংলাদেশকে ঋণ দিয়েছে মোট ৯২ হাজার ৯০৭ কোটি ৮৯ লাখ ৭২ হাজার টাকা বা ৯৮১ কোটি সাত লাখ ৬০ হাজার ডলার। এসব অর্থের বেশির ভাগ মূলত গেছে কভিডভিত্তিক প্রকল্প ও কর্মসংস্থানের জন্য। এর আগের অর্থবছর বৈদেশিক উন্নয়ন সহযোগী সংস্থাগুলো ঋণের অর্থ ছাড় করেছিল ৭৪৪ কোটি ৮৬ লাখ ৮০ হাজার কোটি ডলার।
এদিকে গত অর্থবছরে সরকার পুঞ্জীভূত পাওনা হিসেবে পরিশোধ করেছে ২০১ কোটি ৪১ লাখ ডলার। এর পরিমাণ আগের অর্থবছরের চেয়ে প্রায় ১০ কোটি ডলার বেশি। ২০২০-২১ অর্থবছরে ১৯১ কোটি ৪৮ লাখ ডলার পরিশোধ করেছিল সরকার।
ইআরডির প্রতিবেদন অনুযায়ী, দেশে প্রথমবারের মতো এক অর্থবছরে এক হাজার কোটি বা ১০ বিলিয়ন ডলারের বেশি বিদেশি ঋণ ও সহায়তার অর্থ ছাড় করেছে উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা ও দেশ। বিদেশি অর্থায়নে উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে ২০২১-২২ অর্থবছরে ঋণ ও অনুদান মিলিয়ে এসেছে মোট এক হাজার কোটি ৮৩ লাখ ডলার, যা আগের অর্থবছরের চেয়ে প্রায় ২৬ শতাংশ বেশি। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি অর্থায়ন করেছে এডিবি। এরপর রয়েছে জাপান ও বিশ্ব ব্যাংক। ২০২০-২১ অর্থবছর উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা ও দেশ বাংলাদেশের অনুকূলে মোট ৭৯৫ কোটি ৭৫ লাখ ডলার অর্থ ছাড় করেছিল।
এ বিষয়ে ইআরডিতে সদ্য যোগদানকারী সচিব শরীফা খান গতকাল বৃহস্পতিবার কালের কণ্ঠকে বলেন, করোনা মহামারি অভিঘাত কমে আসার পর গত অর্থবছরে দেশে চলমান বিশেষ করে বিদেশি অর্থায়নে চলমান প্রকল্পের অগ্রগতি ব্যাপকভাবে বেড়ে যায়। ফলে সেসব প্রকল্পের বিপরীতে প্রতিশ্রুত বিদেশি অর্থায়নের গতিও বেড়ে যায়। শেষ পর্যন্ত ১০ বিলিয়ন ডলারের মাইলফলক স্পর্শ করা সম্ভব হয়েছে।
বিশ্বব্যাংকের (ঢাকা অফিসের) সাবেক মুখ্য অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘যে অর্থ ছাড় হয়েছে দেখতে হবে সেই অর্থ ঠিকমতো ব্যবহার হচ্ছে কি না। গেল অর্থবছরে যে বড় আকারের বৈদেশিক অর্থ ছাড় হয়েছে তার বেশির ভাগ মূলত হয়েছে কভিডকেন্দ্রিক। আমাদের বিশ্বব্যাংক, আইএমএফের ঋণগুলো হচ্ছে সস্তা, সহজ শর্তের। আমি মনে করি, এই পাইপলাইনের ঋণের অর্থগুলো আরো দ্রুত ছাড় করা উচিত। ’
এ জাতীয় আরো খবর..