দেশের সড়ক-মহাসড়কে গাড়ি চলাচলের গতিসীমা বেঁধে দিয়েছে সরকার। সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের জারি করা ‘মোটরযানের গতিসীমা-সংক্রান্ত নির্দেশিকা-২০২৪’ অনুযায়ী, সিটি করপোরেশন, পৌর এলাকা এবং জেলা সদরে মোটরসাইকেলের সর্বোচ্চ গতি হবে ঘণ্টায় ৩০ কিলোমিটার।
মঙ্গলবার (৭ মে) বাংলাদেশ সড়ক কর্তৃপক্ষ বিআরটিএর চেয়ারম্যান নূর মোহাম্মদ মজুমদার স্বাক্ষরিত এক নির্দেশনা পত্রে বলা হয় ১০ ধরনের গাড়ির জন্য সড়কের গতিসীমা নির্ধারণ করা হয়েছে ৬ ক্যাটাগরিতে।
মোটরসাইকেলে ঘণ্টায় সর্বোচ্চ গতিসীমা- এক্সপ্রেসওয়েতে ৬০ কিলোমিটার, জাতীয় মহাসড়কে (ক্যাটাগরি-এ) ৫০ কিলোমিটার, জাতীয় (ক্যাটাগরি-বি) ও আঞ্চলিক মহাসড়কে ৫০ কিলোমিটার, জেলা সড়কে ৫০ কিলোমিটার, সিটি করপোরেশন/পৌরসভা/জেলা সদরে ৩০ কিলোমিটার, উপজেলা মহাসড়ক ও শহর এলাকায় প্রাইমারি আরবান সড়কে ৩০ কিলোমিটার, শেয়ার রোড ও অন্যান্য সড়ক এবং গ্রামীণ সড়কে ২০ কিলোমিটার নির্ধারণ করা হয়েছে।
মোটরকার, জিপ, মাইক্রোবাসসহ হালকা যাত্রীবাহী মোটরযান ও ভারী যাত্রীবাহী মোটরযানের ক্ষেত্রে ঘণ্টায় সর্বোচ্চ গতিসীমা নির্ধারণ করা হয়েছে এক্সপ্রেসওয়েতে ৮০ কিলোমিটার। জাতীয় মহাসড়কে (ক্যাটগরি-এ) ৮০ কিলোমিটার, জাতীয় (ক্যাটগরি-বি) ও আঞ্চলিক মহাসড়কে ৭০ কিলোমিটার, জেলা সড়কে ৬০ কিলোমিটার, সিটি করপোরেশন/পৌরসভা/জেলা সদরে ৪০ কিলোমিটার, উপজেলা মহাসড়ক ও শহর এলাকায় প্রাইমারি আরবান সড়কে ৪০ কিলোমিটার, শেয়ার রোড ও অন্যান্য সড়ক এবং গ্রামীণ সড়কে ৩০ কিলোমিটার।
ট্রাক, মিনি ট্রাক, কাভার্ডভ্যানসহ মালবাহী মোটরযান এবং ট্রেইলারযুক্ত আর্টিকুলেটেড মোটরযানের ঘণ্টায় সর্বোচ্চ গতিসীমা: এক্সপ্রেসওয়েতে ৫০ কিলোমিটার, জাতীয় মহাসড়কে (ক্যাটাগরি-এ) ৫০ কিলোমিটার, জাতীয় (ক্যাটাগরি-বি) ও আঞ্চলিক মহাসড়কে ৪৫ কিলোমিটার, জেলা সড়কে ৪০ কিলোমিটার, সিটি করপোরেশন/পৌরসভা/জেলা সদরে ৩০ কিলোমিটার, উপজেলা মহাসড়ক ও শহর এলাকায় প্রাইমারি আরবান সড়কে ৩০ কিলোমিটার, শেয়ার রোড ও অন্যান্য সড়ক এবং গ্রামীণ সড়কে ৩০ কিলোমিটার। এক্সপ্রেসওয়ে ও জাতীয় মহাসড়কে (ক্যাটাগরি-এ) ও (ক্যাটাগরি-বি) এবং আঞ্চলিক মহাসড়কে থ্রি-হুইলার চলাচল নিষিদ্ধ করা হয়েছে। জেলা সড়ক, সিটি করপোরেশন/পৌরসভা/জেলা সদর, উপজেলা মহাসড়ক ও শহর এলাকায় প্রাইমারি আরবান সড়কে চলাচলের অনুমতি সাপেক্ষে সর্বোচ্চ ঘণ্টায় ৩০ কিলোমিটার গতিতে থ্রি-হুইলার চলতে পারবে। এছাড়া শেয়ার রোড ও অন্যান্য সড়ক এবং গ্রামীণ সড়কে সর্বোচ্চ ঘণ্টায় ২০ ও ৩০ কিলোমিটার গতিতে থ্রি-হুইলার চলতে পারবে।
সাধারণ নির্দেশনায় বলা হয়, নির্ধারিত এ গতিসীমা মেনেই সড়ক মহাসড়কে মোটরযান চালাতে হবে। বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান, হাসপাতাল, আবাসিক এলাকা এবং হাট-বাজার সংলগ্ন সড়ক বা মহাসড়কে মোটরযানের সর্বোচ্চ গতিসীমা স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠান বা রাস্তা নির্মাণকারী বা উপযুক্ত প্রতিষ্ঠান কর্তৃক নির্ধারিত হবে; তবে তা কোনোক্রমেই জাতীয় মহাসড়কের ক্ষেত্রে ৪০ কিলোমিটার/ঘণ্টা এবং আঞ্চলিক মহাসড়কের ক্ষেত্রে ৩০ কিলোমিটার/ঘণ্টার অধিক হবে না; জরুরি পরিষেবায় নিয়োজিত মোটরযান, যেমন: অ্যাম্বুলেন্স, ফায়ারসার্ভিসের ক্ষেত্রে এই গতিসীমা শিথিলযোগ্য হবে।
আরও বলা হয়েছে, সর্বোচ্চ গতিসীমার এই বাধ্যবাধকতা শুধুমাত্র স্বাভাবিক অবস্থায় প্রযোজ্য হবে; দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়া, প্রখর রোদ, অতিরিক্ত বৃষ্টি, ঘনকুয়াশাসহ প্রতিকূল পরিস্থিতিতে নিয়ন্ত্রণযোগ্য নিরাপদ গতিসীমা প্রযোজ্য হবে; দৃষ্টিসীমা বেশি মাত্রায় কমে গেলে বা একেবারেই দেখা না গেলে মোটরযান চালানো বন্ধ রাখতে হবে; এক্সপ্রেসওয়ে, জাতীয় মহাসড়ক, আঞ্চলিক মহাসড়ক এবং জেলা সড়কের উভয়দিকের প্রবেশমুখ ও নির্দিষ্ট দূরত্বে যানবাহন ভিত্তিক নির্ধারিত গতিসীমা সংক্রান্ত সাইন রাস্তা নির্মাণকারী বা উপযুক্ত প্রতিষ্ঠানকে প্রদর্শন করতে হবে; মোটরযানের শ্রেণি/ধরণ অনুযায়ী ভিন্ন ভিন্ন গতিসীমার জন্য একই পোস্টে মোটরযানের নাম ও ছবি সম্বলিত গতিসীমার সাইন প্রদর্শন করতে হবে; এবং পাহাড়ী এলাকা, আঁকাবাঁকা সড়ক, বাঁক, ব্রিজ, রেল বা লেভেলক্রসিং, সড়ক সংযোগস্থল, বাজার, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও হাসপাতালের সামনে সাইনে প্রদর্শিত গতিসীমা প্রযোজ্য হবে।
বিশেষ নির্দেশনায় বলা হয়, মালবাহী মোটরযানসহ অন্যান্য স্বল্পগতির মোটরযান সর্বদা সড়কের বামপাশের লেন দিয়ে চলাচল করবে। শুধুমাত্র ওভারটেক করার সময় ডান লেন ব্যবহার করতে পারবে, কখনো বাম লেন দিয়ে ওভারটেক করা যাবে না। ওভারটেকিং নিষিদ্ধ না থাকলে রাস্তার ট্রাফিক সাইন, রোডমার্কিং দেখে এবং সামনে, পেছনে পর্যাপ্ত ও প্রয়োজনীয় জায়গা থাকলে নিরাপদ পরিস্থিতি বিবেচনায় ওভারটেক করা যাবে; এবং ওভারটেক করার সময় সামনে বিপরীত লেনে আসা গাড়ি এবং পেছনের গাড়ির অবস্থান ও গতিবেগ দেখে ওভারটেকিংয়ের জন্য নিরাপদ দূরত্ব আছে কিনা, সে সম্পর্কে নিশ্চিত হতে হবে।
উল্লিখিত গতিসীমা অমান্য করলে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে সড়ক পরিবহন আইন, ২০১৮-এর সংশ্লিষ্ট ধারা অনুযায়ী আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে নির্দেশিকায় জানানো হয়েছে।
এ জাতীয় আরো খবর..