দলবদলের বিশ্ব রেকর্ড গড়ে ২০১৭ সালে বার্সেলোনা থেকে নেইমারকে উড়িয়ে এনেছিল পিএসজি। সে বছরই দলটিতে নাম লেখান সে সময়ের আলোচিত এক তরুণ, কিলিয়ান এমবাপ্পে। তখন সমর্থকরা ভাবেন, এবার বুঝি ইউরোপের মঞ্চে কিছু একটা করে দেখাবে প্যারিসের ক্লাবটি। কিন্তু না, তেমন বড় কিছু করতে পারেনি দলটি।
২০২০ সালে চ্যাম্পিয়নস লিগের ফাইনাল খেললেও শিরোপা ঘরে তুলতে পারেনি পিএসজি। পরের বছর পিএসজির এই আক্রমণভাগে যোগ দেন লিওনেল মেসি। এমন বিধ্বংসী আক্রমণভাগ নিয়ে প্যারিসিয়ানদের আশা-প্রত্যাশার পারদ বেড়ে যায় তরতর করে। কিন্তু হায়! যা হওয়ার তাই হলো।
মেসি-নেইমার-এমবাপ্পেকে নিয়ে গড়া আক্রমণভাগ নিয়ে টানা দুই আসরেই শেষ ষোলো থেকে বিদায় নেয় পিএসজি।
ইউরোপ সেরার মঞ্চে দলটি যেন নিজেদের বার বার হারিয়ে খুঁজেছে। এবারও তার ব্যতিক্রম কিছু ঘটেনি। মেসি-নেইমার না থাকলেও বিশ্ব মাতানো এমবাপ্পে ছিলেন দলটিতে, এরপরও সেমিফাইনাল থেকে বিদায় নিতে হয়েছে পিএসজিকে।
এ মৌসুম শেষে ক্লাব ছাড়ছেন এমবাপ্পে। পিএসজিকে চ্যাম্পিয়নস লিগ শিরোপা জিতিয়ে দল ছেড়ে যাওয়ার আশায় ছিলেন তিনি। কিন্তু এমবাপ্পে পারলেন না। পিএসজিও পারল না কাড়িকাড়ি অর্থ ও সেরা নাম ভিড়িয়েও সাফল্য অর্জন করতে। ফলে তারকার ভিড়েও ইউরোপের মঞ্চে পিএসজি আটকে রইল ব্যর্থতার বৃত্তে।
চলতি মৌসুমে ফরাসি ফরোয়ার্ড এমবাপ্পেকে ঘিরে পরিকল্পনা সাজিয়েছিল পিএসজি। কিন্ত মাঝপথে দল ছেড়ে যাওয়াত ঘোষণার পর থেকে পিএসজির একাদশে আর নিয়মিত ছিলেন না ২৪ বছর বয়সী এই ফুটবলার। কিন্তু বড় ম্যাচে এমবাপ্পের বিকল্প ছিল না এই দলে। লিগ ম্যাচে কোচ লুই এনরিকে তাকে বেঞ্চে রাখলেও চ্যাম্পিয়নস লিগের ম্যাচে ভরসা রাখেন এমবাপ্পের ওপর। কিন্তু সেই এমবাপ্পেই সেমিফাইনালের দুই লেগে থাকলেন নিষ্প্রভ। আক্রমণে ফুটবল পায়ে সুরভী ছড়াতে পারেননি তিনি। হতে পারেননি প্রতিপক্ষ রক্ষণভাগের ত্রাস। ফুটবল সমর্থকরা যে এমবাপ্পেকে দেখে অভ্যস্ত সেই চেনা রূপে ছিলেন না তিনি। যার প্রভাব পড়েছে দলীয় নৈপুণ্যে। ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের তারকা ও সাবেক খেলোয়াড় রিও ফার্দিনান্দ যেমন বলেছেন, 'এমবাপ্পের জন্য এটা অস্বাভাবিক ছিল। সে এমন একজন যিনি বড় মঞ্চে নৈপুণ্য দেখাতে পছন্দ করে। তার ক্যারিয়ারে সবসময় সেরা অবস্থানে তাকে দেখেছি কিন্তু এবার দুই লেগেই ছন্দে ছিল না। সে পার্থক্য গড়ে দিতে পারেনি, সে নিখুঁত ছিল না।'
এমবাপ্পের নামের পাশে সবমিলিয়ে সাতটি লিগ শিরোপা। আছে বিশ্বকাপ জয়ের কীর্তি। কিন্তু চ্যাম্পিয়নস লিগ জেতার স্বপ্ন এখনো স্বপ্নই রয়ে গেল। কথায় আছে বড় খেলোয়াড় বড় মঞ্চে পথ খুঁজে নেয়। এমবাপ্পের ক্ষেত্রেও এমনটা ভাবা হয়েছিল। কিন্তু ফরাসি তারকা সেই পথ খুঁজে নিতে পারেননি। মূলত বরুশিয়া ডর্টমুন্ডের রক্ষণভাগ এমবাপ্পের জন্য একটু জায়গাও ছাড়েনি। এমবাপ্পেও তাই সেভাবে সুযোগ পাননি। সুযোগ পেয়েছিলেন তবে দুই লেগে তার দুটি প্রচেষ্টা আটকে যায় পোস্টে। বুন্দেসলিগার পঞ্চম স্থানে থাকা দলের বিপক্ষে দুই লেগ মিলিয়ে ৪৪টি শট নিয়েও কোনো গোলই যে করতে পারেনি পিএসজি। পরিসংখ্যান বলছে, ২০০৩-০৪ মৌসুমের পর পিএসজিই প্রথম কোনো দল যারা এত শট নেওয়ার পরও গোল করতে পারেনি।
নিজের সর্বোচ্চটুকু নিঙড়ে দিয়েও গোল না পাওয়ার হতাশা আছে এমবাপ্পের। আবার ফাইনালে দলকে নিতে না পারায় দোষ নিজের ঘাড়ে নিয়েছেন এই ফরাসি তারকা, 'আমি দলের জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা করেনি কিন্তু এটা যথেষ্ট ছিল না। যখন প্রতিপক্ষের বক্সে কার্যকরীতার কথা উঠবে তখন আমার কথা আসবে। আমি সেই লোক যার গোল করা উচিৎ এবং ম্যাচে পার্থক্য গড়ে দেওয়া উচিৎ। যখন সবকিছু ভালো থাকে তখন সব আলো আমার দিকে আসে আর খারাপ সময়ে দায়টাও নিতে হয়। এটা সমস্যা না।'
এ জাতীয় আরো খবর..