×
  • প্রকাশিত : ২০২৪-০৫-০৭
  • ৫৭ বার পঠিত
রাজধানীর দক্ষিণখান গাওয়াইর বাজার এলাকায় গত ২৯ এপ্রিল সকালে ছুরিকাঘাতে হযরত আলী (২৪) নামের এক যুবক গুরুতর আহত হন। ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় একই দিন দুপুরে তিনি মারা যান। এ ঘটনায় মো. সেলিম নামের তাঁর এক বন্ধুকে গ্রেপ্তার করে দক্ষিণখান থানার পুলিশ। হত্যা মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই জাহাঙ্গীর খান বলেন, মাদক সেবন নিয়ে বিরোধের জেরে এই হত্যাকাণ্ড ঘটে।

এর এক সপ্তাহ পর গত বৃহস্পতিবার সকালে রাজধানীর খিলগাঁওয়ের সিপাহীবাগ এলাকায় মাদক নিয়ে বিরোধের জেরে মো. রুবেল নামের এক যুবককে হত্যা করা হয়। এ ঘটনায় মনির নামের মাদকসেবী এক যুবককে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।

এভাবে মাদকদ্রব্যকে কেন্দ্র করে দেশে হত্যার ঘটনা বাড়ছে। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর (ডিএনসি) ও পুলিশ বলছে, ২০২৩ সালের জানুয়ারি থেকে চলতি বছরের এপ্রিল পর্যন্ত দেশে শতাধিক ব্যক্তিকে হত্যা করা হয়েছে।

ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) অপরাধবিষয়ক মাসিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত এপ্রিল পর্যন্ত ১৬ মাসে মাদকের কারণে শতাধিক ব্যক্তির খুন হওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে।

পুলিশ সদর দপ্তরের প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, গুলি ও ছুরিকাঘাতে হত্যাসহ দেশের সর্বত্র সন্ত্রাসী তৎপরতা কিংবা স্কুল-কলেজগামী শিক্ষার্থীদের উত্ত্যক্ত করার নেপথ্যেও মাদকাসক্তির বিরূপ প্রভাব রয়েছে। এমনকি সড়ক দুর্ঘটনার ক্ষেত্রেও মাদকদ্রব্যের বিরূপ প্রভাব রয়েছে।

হতাহতের আলোচিত ঘটনা

সম্প্রতি রাজধানীর কামরাঙ্গীর চরের নূরবাগ এলাকায় রাকিবের ছুরিকাঘাতে যুবক তানিন হোসেন (২৩) নিহত এবং তাঁর বড় ভাই তামিম হোসেন (২৪) আহত হন।

রাকিব সম্পর্কে তাঁদের মামা। পরিবার বলেছে, রাকিব মাদকাসক্ত। এ ঘটনায় করা মামলায় রাকিবকে গ্রেপ্তার করা হয় বলে জানান কামরাঙ্গীর চর থানার ওসি মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘মাদকের কারণে সমাজে এভাবে হত্যার ঘটনা বাড়ছে। তবে আমরা সামাজিক উঠান বৈঠকের মাধ্যমে মাদক সমস্যা নির্মূলের চেষ্টা করছি।

পুলিশ ও পরিবার সূত্রে জানা যায়, গত ১৪ এপ্রিল রাজধানীর পল্লবীর রূপনগর আবাসিক এলাকায় মাদক নিয়ে বিরোধের জেরে রিহান ইসলাম ওরফে পাভেল নামের এক তরুণকে খুন করা হয়।

গত ১ মে রাজধানীর দোলাইরপাড়ে মাদকাসক্ত ছেলের ছুরিকাঘাতে ইব্রাহিম খলিফা (৫০) নামের এক ব্যক্তি আহত হয়েছেন। ইব্রাহিম খলিফা বলেন, ‘ছেলে ইসমাইল ইয়াবা সেবন করে। নেশার টাকা না পেয়ে সে আমাকে ছুরিকাঘাত করে।’

মাদকসেবীদের নিপীড়নে পরিবারে অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা বাড়ছে। সম্প্রতি গাজীপুরের কালীগঞ্জ উপজেলায় মাদকাসক্ত ছেলেকে কুপিয়ে হত্যার অভিযোগ উঠেছে বাবার বিরুদ্ধে।

ছোট-বড় সব অপরাধে মাদকের বড় প্রভাব : ডিএনসি

ডিএনসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দেশে বর্তমানে সামাজিক অবক্ষয় ও ছোট-বড় প্রায় সব অপরাধের পেছনে অন্যতম প্রধান অনুঘটকের কাজ করছে মাদকাসক্তি। বর্তমানে এক কোটির বেশি মানুষ মাদকাসক্ত। তাদের প্রায় ৯০ শতাংশ কিশোর-তরুণ। মাদকদ্রব্য কেনার অর্থ জোগাড়ে তারা অপরাধমূলক বিভিন্ন ঘটনায় জড়াচ্ছে। মাদক ব্যবসার গডফাদাররা খুন, অপহরণ ও চাঁদাবাজিতে  কিশোর-তরুণদের ব্যবহার করছে।

জাতীয় সংসদে সম্প্রতি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বলেন, ২০২৩ সালে দেশে এক লাখ ২০ হাজার ২৮৭ জন অবৈধ মাদক ব্যবসায়ীকে গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনা হয়েছে। একই সময়ে মামলা হয়েছে ৯৭ হাজার ২৪১টি। আদালতে মাদকসংক্রান্ত বিচারাধীন মামলার সংখ্যা ৮২ হাজার ৫০৭।

অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ীদের নিয়ে একটি তালিকা করেছে। সেই তালিকাভুক্ত অন্তত ১০ জন গডফাদার দীর্ঘদিন ধরে সারা দেশের মাদক ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করছেন।

সিআইডিপ্রধান পুলিশের অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক (আইজিপি) মোহাম্মদ আলী মিয়া বলেন, গডফাদাররা বাইরে থেকে মাদকদ্রব্য এনে দেশের বিভিন্ন এলাকায় ছড়িয়ে দেন। এর বিরূপ প্রভাবে যুবসমাজ ধ্বংসের দিকে যাচ্ছে। গডফাদারদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে।

পুলিশ ও র‌্যাব সূত্র বলছে, কক্সবাজারের টেকনাফ ও উখিয়া সীমান্ত দিয়ে ইয়াবার চালান আসছে বেশি। এসব সীমান্ত দিয়ে ক্রিস্টাল মিথ বা আইসের মতো মাদকও দেশে প্রবেশ করছে। বিজিবি, পুলিশ, র‌্যাব কোস্ট গার্ড ও মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর গত কয়েক বছরে বিপুল পরিমাণ মাদকদ্রব্য উদ্বার করেছে।

মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের পুলিশ সায়েন্স অ্যান্ড ক্রিমিনোলজি বিভাগের অধ্যাপক মুহাম্মদ উমর ফারুক কালের কণ্ঠকে বলেন, সমাজে মাদক নিয়ন্ত্রণই এখন বড় চ্যালেঞ্জ। সব ধরনের মাদক বিস্তৃত করার ক্ষেত্রে গডফাদাররা মূল ভূমিকা রাখছেন। তাঁদের (গডফাদার) আইনের আওতায় আনা গেলে মাদক নির্মূল করে যুবসমাজকে মহাবিপদ থেকে উদ্ধার করা সম্ভব।

নিউজটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর..
ফেসবুকে আমরা...
ক্যালেন্ডার...

Sun
Mon
Tue
Wed
Thu
Fri
Sat