টাকার বিনিময়ে বৈধতা দেয়াই যেনো কিছু ট্রাফিক পুলিশ সদস্যের নীতি। কখনো নিজেরা আবার কখনো সোর্স দিয়ে অলিগলি ঘুরিয়ে অটোরিকশা জব্দ করা, রেকার ব্যবহার না করেও কয়েক ঘণ্টা আটকে রেখে, রেকার বিল আদায় করে ছেড়ে দেয়াই যেন তাদের কাজ! রশিদ না দিয়ে টাকা নেয়ার অভিযোগও আছে তাদের বিরুদ্ধে। খোদ রাজধানীতেই এমন অনিয়ম ঘটছে বলে অভিযোগ রয়েছে।
সম্প্রতি রাজধানীর লালবাগের ঢাকেশ্বরী মন্দির ট্রাফিক বক্সের সামনে দেখা যায়, শিকলে বাঁধা কয়েকটি অবৈধ অটোরিকশা, যেগুলোর রাজপথে চলার কোনো অনুমোদন নেই। অথচ কিছুক্ষণ পরই পুলিশের সামনে শিকল খুলে একটি অটোরিকশা নিয়ে চলে যান একজন চালক। কিন্তু কীভাবে?
ওই চালক সময় সংবাদকে বলেন,
আমার অটোরিকশা নিয়ে যায় পুলিশ। অনেক অনুনয়-বিনয় করার পর আমার কাছ থেকে ৬শ টাকা দাবি করেন তারা। টাকা দেয়ার পর গাড়িটি ছেড়ে দেন।
সময় সংবাদের হাতে আসে একটি রেকার বিলের স্লিপ। নিয়ম না থাকলেও যেখানে দেখা যায়, একই স্লিপে জরিমানা করা হয়েছে দুজনকে। আবার স্লিপ না দিয়েও টাকা আদায়ের অভিযোগ ভুক্তভোগীদের। ব্যবহার না করেও রেকারের বিল করেন তারা। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, লালবাগের ওই ট্রাফিক পুলিশ বক্সের নিত্যদিনের রুটিনই এটি!
পরে সেখানে ক্যামেরা নিয়ে যেতেই তৎপর হয়ে ওঠেন ট্রাফিক পুলিশের সদস্যরা। শুরু হয় সটকে পড়ার প্রতিযোগিতা। এ সময় টাকা নেয়ার বিষয়টি অস্বীকার করে তারা জানান, কোনো অনিয়ম করা হয়নি।
সময় সংবাদের অনুসন্ধানে ধরা পড়ে পুলিশের সঙ্গে বসে থাকা জাহাঙ্গীর নামে এক ব্যক্তি, যিনি কাজ করেন সোর্স হিসেবে। যদিও তার দাবি, তিনি অটোরিকশার মালিক।
বিষয়টি নিয়ে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) লালবাগ ট্রাফিক বিভাগের উপ-কমিশনার আসমা সিদ্দিকা লিলিকে ফোন দিলেও ক্যামেরার সামনে কথা বলতে রাজি নন তিনি। জানান, কথা বলতে বাধ্য নন। তার কার্যালয়ে দীর্ঘ অপেক্ষা শেষেও পাওয়া যায়নি তাকে।
তবে পুলিশের ঊর্ধ্বতনরা বলছেন, অটোরিকশায় রেকার বিল করার সুযোগ নেই। এ বিষয়ে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস দিলেন ডিএমপির (ট্রাফিক দক্ষিণ) যুগ্ম পুলিশ কমিশনার এস এম মেহেদী হাসান।
তিনি বলেন,
যখন কোনো যানবহান ডাম্পিং করা হয়, তখন রেকার কর্তৃপক্ষকে ভাড়াটা দেয়া লাগে। সেক্ষেত্রে এর ব্যত্যয় ঘটে থাকলে সেটি আমরা অবশ্যই সিরিয়াসলি দেখবো।
এদিকে, অসৎ কর্মকর্তাদের চিহ্ণিত করে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার তাগিদ বিশেষজ্ঞদের। তারা বলছেন, এ অবস্থান থেকে সরে না আসলে পরিণাম ভোগ করতে হবে বাহিনীটিকে।
এ বিষয়ে সমাজ ও অপরাধ বিশেষজ্ঞ ড. তৌহিদুল হক বলেন,
কারও ক্ষেত্রে বিষয়টি দেখা হলেও অর্থের বিনিময়ে কারও ক্ষেত্রে দেখা হচ্ছে না। এভাবে অবৈধতার একটা চর্চা তৈরি হচ্ছে। সরকারের উচ্চ পর্যায় থেকে কঠোর কোনো বার্তা না আসলে এটা বন্ধ করা কঠিন।