×
  • প্রকাশিত : ২০২২-০৮-১১
  • ৮৭ বার পঠিত
রাজধানীর সঙ্গে দক্ষিণাঞ্চলের যোগাযোগব্যবস্থায় নতুন মাত্রা যুক্ত করেছে পদ্মা সেতু। কিন্তু সেতু পেরিয়ে এক্সপ্রেসওয়ে শেষ হওয়ার পর সড়কে দুর্ভোগ বাড়তে থাকে।

এক্সপ্রেসওয়ে শেষে ভাঙ্গা থেকে ফরিদপুর ও বরিশালের দিকে যাওয়ার পথে দুই লেনের সড়কে ভোগান্তিতে পড়ে চালক ও যাত্রীরা। বরিশালের পথে চার লেনের কাজ চলমান থাকলেও তাতে গতি নেই।

আর ফরিদপুরের ভাঙ্গা থেকে গোপালগঞ্জ যাওয়ার পথে মোল্লাহাট পর্যন্ত ৯০ কিলোমিটার দুই লেনের সড়ক গাড়ির চাপ নিতে পারছে না।
এদিকে পদ্মা সেতু পার হয়ে বাঁ দিক দিয়ে শরীয়তপুরে যেতে জাজিরা পর্যন্ত প্রায় গ্রামীণ সড়কের মতো পথ ব্যবহার করতে হয়। এই পথে পাশাপাশি দুটি ছোট গাড়ি চলার সুযোগ নেই। অথচ বড় বড় বাস চলা শুরু হয়েছে।

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা জানা যায়, এক্সপ্রেসওয়ে পেরিয়ে ফরিদপুরের ভাঙ্গায় গিয়ে গাড়ির গতি কমে যায়। সব মিলিয়ে ঢাকা থেকে ভাঙ্গা পর্যন্ত যত স্বচ্ছন্দে গাড়ি চলতে পারে, এর পরের অবস্থাটা যেন ভিন্ন। কষ্টের, দুর্ভোগের। তবে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সমাধি কমপ্লেক্সে যাওয়ার পথ সহজ করতে গোপালগঞ্জের গোনাপাড়া থেকে টুঙ্গিপাড়া পর্যন্ত দুই লেনের সড়ক করার পরিকল্পনা করা হচ্ছে।

সম্প্রতি সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, পদ্মা সেতু থেকে নেমে শরীয়তপুর যাওয়ার পথে জাজিরার নওডোবা পর্যন্ত এক পাশে ফাঁকা আবাদি জমি, অন্য পাশে বেশির ভাগই টিনের ঘর। যেন সড়কের ওপর মানুষের বসতি। ছোট সড়কের কারণে পাশাপাশি দুটি বাস চলাচলের কোনো সুযোগ নেই। দূর থেকেই একটি বাস থামিয়ে আরেকটি বাস পার করতে হয়। সড়কের এমন অবস্থায় দুর্ঘটনার ঝুঁকিও বাড়ছে।

শরীয়তপুর বাস মালিক সমিতির সভাপতি ফারুক আহমদ তালুকদার কালের কণ্ঠকে বলেন, শুধু রাস্তার বেহালের কারণে বাসের ব্যবসা বড় করা যাচ্ছে না। চাহিদা থাকলেও বাস বাড়ানো যাচ্ছে না।

ঢাকা থেকে শরীতপুরের মুখে ৫০ মিনিটে বাস পৌঁছে যায়। সেখান থেকে শরীতপুরের বাসস্ট্যান্ডে বাস আসতে প্রায় দুই ঘণ্টা লেগে যায়।

শরীয়তপুর-২ আসনের সংসদ সদস্য এ কে এম এনামুল হক শামীম বলেন, ‘শরীয়তপুরের রাস্তাটা আরো আগেই করা উচিত ছিল। পদ্মা সেতুর নির্মাণকাজের সঙ্গেই মাদারীপুর, শরীয়তপুরের রাস্তার কাজ শুরু হয়। আগেই বোঝা দরকার ছিল যে পদ্মা সেতু থেকে শরীয়তপুর আসার জন্য চার লেনের রাস্তা দরকার। এটা আমাদের জন্য কষ্টের। এই সড়কের জন্য শরীয়তপুর পিছিয়ে আছে। ’

সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী এ কে এম মনির হোসেন পাঠান বলেন, ‘শরীয়তপুরের সড়কের কাজ অগ্রাধিকার দিয়ে চলমান আছে। জমি অধিগ্রহণ নিয়ে কিছুটা সমস্যা হওয়ায় কাজে দেরি হচ্ছে। ’

ঢাকা থেকে ফরিদপুর, বরিশাল ও গোপালগঞ্জ যেতে সেতুর পর এক্সপ্রেসওয়ে শেষ হলে এর পরের সড়কগুলো দুই লেনের, যা বর্তমানের যান বাড়ার চাপ সামাল দিতে পারছে না। এ ছাড়া মহাসড়কে তিন চাকার যান যত্রতত্র চলাফেরা করে বলে পরিবহনের চালকদের রাস্তা অতিক্রম করতে সমস্যায় পড়তে হয়। ফরিদপুরের চন্দ্রা পরিবহনের সুপারভাইজার সেলিম মিয়া জানান, পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পর এই পথে গাড়ির সংখ্যা বেড়েছে। ভাঙ্গা থেকে মাদারীপুর পর্যন্ত সড়ক দুই লেন থেকে কমপক্ষে চার লেন নির্মাণ করা দরকার।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ফরিদপুরের ভাঙ্গা থেকে মাদারীপুর পর্যন্ত দুই লেনের সড়কের মাঝেমাঝেই খানাখন্দ রয়েছে। আবার ভাঙ্গা থেকে বরিশালের পথে কয়েকটি সড়কে কালভার্ট নির্মাণের কাজ চলছে। এতে সরু সড়কে গাড়ির চাপে মাঝেমধ্যে যানের জটলা সৃষ্টি হচ্ছে।

ফরিদপুর মিনিবাস মালিক গ্রুপের সাধারণ সম্পাদক হাজি সোবাহান মুন্সি বলেন, ভাঙ্গা থেকে কুয়াকাটা এবং ভাঙ্গা থেকে ফরিদপুর পর্যন্ত সড়ক ছোট হওয়ায় পদ্মা সেতুর প্রকৃত সুফল থেকে বঞ্চিত হচ্ছে দক্ষিণাঞ্চলের মানুষ। ফরিদপুর-বরিশাল সড়ক ছোট হওয়ায় প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটছে। আবার ভাঙ্গা থেকে কুয়াকাটা পর্যন্ত সড়ক ভাঙা রয়েছে। ঢাকা থেকে যেভাবে মানুষ ভাঙ্গায় দ্রুতগতিতে আসে, সেভাবে ভাঙ্গা থেকে বিভিন্ন জায়গায় যাওয়া যায় না। যানগুলোকে তখন মাত্র ২৪ ফুট প্রশস্ত সড়কে চলতে হয়। পদ্মা সেতু চালুর পর অতিরিক্ত যানবাহনের চাপে ভাঙ্গা থেকে বরিশাল বিভাগমুখী যানবাহনের গতি আরো কমেছে।

ভাঙ্গা-বরিশাল-কুয়াকাটা মহাসড়ক চার লেনে উন্নীত করার প্রকল্প ২০১৮ সালে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক) অনুমোদন দেয়। কিন্তু ২০২২ সালের জুনেও সেই সড়কের নির্মাণকাজ শুরু করতে পারেনি সড়ক ও সেতু বিভাগ। এরই মধ্যে পর পর তিনবার ফেরত গেছে প্রকল্পের বরাদ্দ অর্থ। সর্বশেষ অর্থবছরে বরাদ্দ দেওয়া অর্থও ফেরত যাওয়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে।

জানতে চাইলে সওজের প্রধান প্রকৌশলী এ কে এম মনির হোসেন পাঠান বলেন, জমি অধিগ্রহণসহ যেসব কাজে বেশি সময় লাগে সেগুলো করা শেষ হয়ে গেছে। এখন নির্মাণকাজে আর বেশি সময় লাগবে না।

এদিকে ভাঙ্গা এক্সপ্রেসওয়ে থেকে ঢাকা-বরিশাল সড়কের গোপালগঞ্জ অংশে প্রায় ৪০ কিলোমিটার সড়ক রয়েছে। এই রাস্তাটিও দুই লেনের ও অপ্রশস্ত। এই সড়কের বিভিন্ন স্থানে উঁচুনিচু ও ছোট ছোট গর্ত রয়েছে।

আবার ফরিদপুরের ভাঙ্গা থেকে গোপালগঞ্জ যাওয়ার দুই লেনের সড়কটি ছয় লেন করার দাবি তুলছে স্থানীয়রা। তারা বলছে, ভাঙ্গার এক্সপ্রেসওয়ে থেকে মোংলা পর্যন্ত ছয় লেনের সড়ক নির্মাণ করা দরকার। তাহলে ঢাকার সঙ্গে দক্ষিণাঞ্চলের সড়ক যোগাযোগ আরো ভালো হবে। মানুষ স্বচ্ছন্দে চলাচল করতে পারবেন।

গোপালগঞ্জ বাস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক শেখ জামিল সরোয়ার বলেন, ঢাকা-খুলনা ও ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কে প্রতিদিন গাড়ির সংখ্যা বাড়ছে। সেই তুলনায় রাস্তা সরু। যে রাস্তা আছে তা চলাচলের জন্য উপযুক্ত। দুর্ঘটনা কমাতে আরো ভালো ও প্রশস্ত সড়ক প্রয়োজন।

জানতে চাইলে গোপালগঞ্জ সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. জাহিদ হাসান বলেন, ভাঙ্গা থেকে কাশিয়ানীর কালনা সেতু পর্যন্ত ছয় লেনের প্রকল্প এরই মধ্যে পাস হয়েছে। এখন ভাটিয়াপাড়া থেকে মোল্লাহাটের আবুল খায়ের সেতু পর্যন্ত ৪৫ কিলোমিটার ও ভাঙ্গা থেকে বরিশাল সড়কের টেকেরহাট পর্যন্ত গোপালগঞ্জ অংশে প্রায় ৩৫ বিলোমিটার সড়কের ছয় লেনের সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের কাজ চলছে।

সার্বিক বিষয় নিয়ে যোগাযোগ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক মো. হাদিউজ্জামান কালের কণ্ঠকে বলেন, ঢাকার সঙ্গে দক্ষিণাঞ্চলের যোগাযোগব্যবস্থার প্রকৃত উন্নতির জন্য স্থানীয় পর্যায়ে সড়কের অবস্থা ভালো করতে হবে। তা না হলে সুফলের পরিবর্তে ভোগান্তি বাড়বে। ওই অঞ্চলে এখন গাড়ির চাপ বাড়ছে, ফলে দুর্ঘটনা যেন কম হয় সেই বিষয়েও নজরে রাখতে হবে।

নিউজটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর..
ফেসবুকে আমরা...
ক্যালেন্ডার...

Sun
Mon
Tue
Wed
Thu
Fri
Sat