তিন দিন ধরে আমার মা মারাত্মক অসুস্থ। চিকিৎসকদের পরামর্শ মেনে স্যালাইনের ওপর আছে মা। কোনো কিছু ঠিকমতো খেতে পারছে না। শুধু কান্নাকাটি করছে।
সানির কথা বলছে বারবার। ভাইয়ের শোকে আমি নিজেও অসুস্থ হয়ে পড়েছি। তবে সানি কিভাবে মারা গেল, পুলিশের তদন্তের মাধ্যমে এর সত্যটা জানতে চাই। ’
এভাবেই বলছিলেন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শিক্ষার্থী তারিকুজ্জামান সানির বড় ভাই মো. হাসানুজ্জামান। গতকাল রবিবার কালের কণ্ঠকে তিনি বলেন, ‘যাদের সঙ্গে সানি ঘুরতে গিয়েছিল তারা সবাই সানির চেয়ে বয়সে বড়। গড়ে তাদের বয়স ৩০ থেকে ৩৫ বছর। তারা কেউই সানির বন্ধু ছিল না। বর্তমানে লেখাপড়ার মধ্যেও নেই তাদের কেউ। তারা সবাই আগে থেকেই কমবেশি মাদক সেবন করত বলে আমি খোঁজ নিয়ে জানতে পেরেছি। ’
বয়সে ছোট হয়েও সানি কেন বড়দের সঙ্গে হাজারীবাগ থেকে দোহারের পদ্মা নদীতে ঘুরতে গিয়েছিল—জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘যে ১৫ জনের সঙ্গে সানি ঘুরতে গিয়েছিল তারা সবাই এলাকার বড় ভাই। তাদের মধ্যে কয়েকজনের সঙ্গে সানির ভালো সম্পর্ক ছিল। ওই বড় ভাইরাই সানিকে ডেকে নিয়ে গিয়েছিল। তাদের সঙ্গে ঘুরতে যাওয়ার বিষয়টি মা ও আমি জানতাম না। ’
সানি মাদক সেবন করত কি না—জানতে চাইলে হাসানুজ্জামান বলেন, ‘প্রশ্নই আসে না। সানি মেধাবী ছিল। এ কারণে বুয়েটে ভর্তির যোগ্যতা অর্জন করে। ’
তিনি আরো বলেন, ‘খোঁজ নিয়ে আমি জানতে পেরেছি, যখন ঘটনাটি ঘটে, তখন রাত ৮টা বা তারও কিছু বেশি সময় হবে। অর্থাৎ সোয়া ৮টা বাজে তখন। তখন নদীর তীরে একটি ড্রেজার ছিল। সেটায় সানির সঙ্গে থাকা ১৫ জন অনেক হাসি-ঠাট্টার মধ্যে ছিল। ঘটনার পর তাদের দুজনের সঙ্গে আমি কথা বলে জানতে পেরেছি, তারা মাদক সেবন করেছিল সে সময়। এতে অনেকটা ঘোরের মধ্যে ছিল তারা। আর ওই ঘোরের মধ্যেই ড্রেজার থেকে আমার ভাই সানি নিচে নদীতে পড়ে যায়। এরপর কিছুক্ষণের মধ্যেই নাকি হারিয়ে যায়। ’
হাসানুজ্জামান প্রতিবেদককে বলেন, প্রকৃতপক্ষে সেখানে কী ঘটেছিল, ড্রেজার থেকে নিচে পড়ে গেলে তারা কেন সানিকে দ্রুত ওপরে ওঠায়নি—এমন অনেক প্রশ্ন রয়েছে আমার। তাই মামলা করে সত্যটা জানতে পুলিশের সহযোগিতা চেয়েছি।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা নৌ পুলিশের এসআই সামসুল ইসলাম এ প্রসঙ্গে বলেন, তদন্তে এখনো প্রকৃত তথ্য পাওয়া যায়নি। ঘটনাটি রহস্যজনক ধরেই তদন্ত চলছে। ঘটনার সময় গ্রেপ্তারকৃতরা মাদকাসক্ত ছিল বলে মামলার বাদী দাবি করেছেন। এমন অনেক বিষয়ে এ ঘটনায় গ্রেপ্তার হওয়া ১৫ জনকে রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদ অব্যাহত রয়েছে। প্রথম দিনের জিজ্ঞাসাবাদে তারা অনেক তথ্য দিয়েছে। তা যাচাই-বাছাই চলছে।
পুলিশ ও পারিবারিক সূত্র জানিয়েছে, হাজারীবাগ ১৬ নম্বর নিলাম্বর সাহা রোডের ভাড়া বাসায় বড় ভাই ও মায়ের সঙ্গে থাকতেন সানি। তিনি বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) স্থাপত্য বিভাগের শেষ বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন। তাঁর বাবা মো. হারুনুর রশিদ ২০২০ সালে মারা যান।
এ জাতীয় আরো খবর..