পুরো নাম অ্যাডেল লরি ব্লু অ্যাডকিন্স। কিন্তু বিশ্বজুড়ে পরিচিত ‘অ্যাডেল’ নামেই। গান দিয়ে একজন সংগীতশিল্পী যতটা অর্জন করতে পারেন, তার সবই বগলদাবা করেছেন এই ব্রিটিশ গায়িকা। আকাশচুম্বী জনপ্রিয়তা, তুমুল সাফল্য আর পুরস্কারের মঞ্চে বাজিমাত; সবই রয়েছে তাঁর ক্যারিয়ারে।
বিশ্ব সংগীতের অন্যতম জনপ্রিয় এই গায়িকার জন্মদিন আজ। ১৯৮৮ সালের ৫ মে লন্ডনে জন্মগ্রহণ করেছিলেন অ্যাডেল।
১৯৮৮ সালের এই দিনে লন্ডনের টটেনহামে জন্ম অ্যাডেলের। বয়স যখন সবে দুই বছর, তখনই তার বাবা-মায়ের বিচ্ছেদ হয়।
মায়ের কাছেই তাঁর বেড়ে ওঠা। মাত্র চার বছর বয়সে স্টেজে গান গাওয়া শুরু তার! কিন্তু কাঙ্ক্ষিত সাফল্য ও পরিচিতি পেতে তাকে অপেক্ষা করতে হয়েছিল আরও ১৯ বছর। এখন তাকে বিবেচনা করা হয় বিশ্বের অন্যতম ‘বেস্ট-সেলিং আর্টিস্ট’ হিসেবে। যার গানের রেকর্ড ১২০ মিলিয়ন কপির বেশি বিক্রি হয়েছে।
1
মঞ্চে অ্যাডেল
যুক্তরাজ্যের ব্রিট স্কুল থেকে গ্র্যাজুয়েশন শেষ করার পর ২০০৬ সালে দুটি গান প্রকাশের মাধ্যমে অ্যাডেলের আনুষ্ঠানিক যাত্রা হয়। এই সময়ে একটি মজার ঘটনাও রয়েছে গায়িকার। তিনি তার তিনটি গানের একটি ডেমো রেকর্ড ক্লাস প্রজেক্টের অংশ হিসেবে এক বন্ধুকে দেন। সেই বন্ধু গানগুলো ‘মাইস্পেস’ নামের প্ল্যাটফর্মে প্রকাশ করে দেয় এবং সেগুলো বেশ জনপ্রিয়তা পায়। এরই সুবাদে এক্সএল রেকর্ডিং-এর পরিচালক রিচার্ড রাসেল ফোন করেন অ্যাডেলকে।
কিন্তু বিশ্বাস হয় না গায়িকার। কারণ তিনি তখন রেকর্ড লেবেল হিসেবে শুধু ‘ভার্জিন রেকর্ডস’র নাম জানতেন। ফলে রিচার্ডের সঙ্গে দেখা করার সময় এক বন্ধুকে সঙ্গে নিয়ে গিয়েছিলেন অ্যাডেল। ২০০৬ সালের সেপ্টেম্বরে প্রতিষ্ঠানটির সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হন তিনি। পরের বছরের অক্টোবরে প্রকাশ হয় তার প্রথম শ্রোতাপ্রিয় গান ‘হোমটাউন গ্লোরি’। হোমটাউন গ্লোরি গানটি তাকে জনপ্রিয়তা এনে দেয়। সেই সঙ্গে অ্যাডেলের প্রথম অ্যালবাম ‘১৯’ ব্রিটেনে ব্যাপক জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। তাঁর ব্যতিক্রমী কণ্ঠস্বর সমালোচকদের কাছেও প্রশংসা পায়।
আন্তর্জাতিক অঙ্গনে অ্যাডেল জনপ্রিয়তা পান ২০১১ সালে তার দ্বিতীয় অ্যালবাম ‘২১’ প্রকাশের পর। এটি ছিল তার সম্পর্ক বিচ্ছেদের অনুপ্রেরণায় সৃষ্ট। যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রসহ ৩০টি দেশে এই অ্যালবাম এক নম্বরে চলে আসে। বিলবোর্ডের ইতিহাসে প্রথম নারী হিসেবে আর্টিস্ট অব দ্য ইয়ার, বিলবোর্ড ২০০ অ্যালবাম অব দ্য ইয়ার (২১) এবং হট ১০০ সং অব দ্য ইয়ার (রোলিং ইন দ্য ডিপ) অর্জন করেন। এর পরের বছর সংগীতের সবচেয়ে বড় পুরস্কার গ্র্যামিতে বাজিমাত করেন অ্যাডেল। ছয়টি মনোনয়ন পেয়ে ছয়টিতেই পুরস্কার ছিনিয়ে নেন এই গায়িকা। ২০১২ সালে জেমস বন্ড সিরিজের সিনেমা ‘স্কাইফল’-এর জন্য গান করেন অ্যাডেল। এর টাইটেল গান প্রকাশের পর ব্যাপক জনপ্রিয়তা পায়। ৫ মিলিয়নের বেশি কপি বিক্রি হয়েছিল এই গানের। এছাড়া, এই গান দিয়েই অ্যাডেল অর্জন করে নেন অ্যাকাডেমি অ্যাওয়ার্ড বা অস্কার। জিতে নেন গোল্ডেন গ্লোব অ্যাওয়ার্ডও।
অস্কার হাতে অ্যাডেল
এখন পর্যন্ত অ্যাডেলের প্রকাশিত চারটি অ্যালবামের মধ্যে তিনটি স্টুডিও অ্যালবাম এবং একটি লাইভ অ্যালবাম। ‘১৯’, ‘২১’, ‘২৫’ এবং ‘লাইভ এট দ্য রয়েল অ্যালবার্ট হল’ এই চারটি অ্যালবাম দিয়েই তিনি সংগীত জগতের সমস্ত অর্জন নিজের করে নিয়েছেন। জনপ্রিয় এই গায়িকা ক্যারিয়ারে প্রায় দেড়শটি সম্মানজনক পুরস্কার জিতেছেন। তার মধ্যে একটি অ্যাকাডেমি পুরস্কার, ১৫টি গ্র্যামি, ৯টি ব্রিট, ১১টি গিনেজ ওয়ার্ল্ড রেকর্ডস ও ১৮টি বিলবোর্ড অ্যাওয়ার্ড অন্যতম।
ব্যক্তিগত জীবনে অ্যাডেল বিয়ে করেছেন সাইমন কোনেচকিকে। ২০১৬ সালে বিয়ের পর চলতি বছর তাদের বিচ্ছেদ হয়ে যায়। এ দম্পতির একটি সন্তান রয়েছে।
নিজের সুদীর্ঘ ক্যারিয়ারে অ্যাডেল মোট চারটি স্টুডিও অ্যালবাম, একটি ভিডিও অ্যালবাম, ১৭টি মিউজিক ভিডিও, দুটি ইপি ও ১৭টি একক গান প্রকাশ করেছেন। সর্বশেষ ২০২২ সালের অক্টোবরে তার গান প্রকাশ হয়েছে। ‘আই ড্রিঙ্ক ওয়াইন’ শিরোনামের গানটির ভিউ ৫০ মিলিয়ন। ভক্তদের শ্রোতাদের কাছে অ্যাডেল বরাবরই এক উন্মাদনার নাম। গায়িকার নতুন গানের অপেক্ষায় আকুল হয়ে থাকেন বিশ্বজুড়ে তাঁর অনুরাগীরা।
এ জাতীয় আরো খবর..