আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘আঘাত আরো আসবে জানি। সামনে হয়তো আরো আঘাত আসবে। যখন আমার আব্বা দেশটাকে উন্নয়নের পথে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছিলেন, তখনই তো ১৫ আগস্ট ঘটেছে। আজকেও বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশ হয়েছে।
উন্নয়নের পথে এগিয়ে যাচ্ছে। স্বাধীনতার চেতনায় জয় বাংলা ফিরে এসেছে। এগুলো যারা সহ্য করতে পারবে না, তারা বসে থাকবে না। তারা আঘাত করবে। বাংলাদেশকে আবারও জঙ্গি রাষ্ট্রে পরিণত করার চেষ্টা করবে। ’
শেখ হাসিনা গতকাল রবিবার রাজধানীর বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলায় নিহতদের স্মরণে আওয়ামী লীগ আয়োজিত আলোচনাসভায় এসব কথা বলেন।
২০০৪ সালের আলোচিত গ্রেনেড হামলার প্রসঙ্গ তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, ‘সেই সময়ে প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার বত্তৃদ্ধতাগুলো অনুসরণ করবেন। কোটালীপাড়ায় বোমা পুঁতে রাখার আগে বলেছিলেন, আওয়ামী লীগ শত বছরেও ক্ষমতায় আসতে পারবে না। ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার আগে বলেছিলেন, শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী তো দূরের কথা, বিরোধী দলের নেতাও কোনো দিন হতে পারবে না। এগুলোর তো রেকর্ড আছে। এই বত্তৃদ্ধতা সে আগাম দিল কিভাবে যে বিরোধী দলের নেতা হতে পারব না? তার মানে আমাকে হত্যা করবে; এই পরিকল্পনাটা তারা নিয়ে ফেলে। ’
সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা ছাড়া এ ঘটনা ঘটতে পারে না
আওয়ামী লীগের সমাবেশে গ্রেনেড হামলা প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, ‘সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা ছাড়া এজাতীয় ঘটনা ঘটতে পারে না। লক্ষ্য তো ছিল আমাকেই হত্যা করা, আওয়ামী লীগকে নিশ্চিহ্ন করা। ’
জাতির পিতাকে হত্যার দায়ে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি খন্দকার আব্দুর রশিদ ও শরীফুল হক ডালিম ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার সময় বাংলাদেশে অবস্থান করছিলেন বলে উল্লেখ করেন প্র্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘ডালিম ও রশিদ যে ঢাকায় ছিল, এটা তো অনেকেই জানে। হামলার পরও যখন খুনিরা দেখল যে বেঁচে আছি, তখন তারা দেশ থেকে পালিয়ে যায়। খালেদা জিয়া তাদের যেভাবেই হোক দেশ থেকে চলে যেতে সাহায্য করেন। এটা তো বাস্তব কথা। ’
আমাদের যেন নতুন জন্ম হয়েছে
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আজকে ২১ আগস্ট। যারা সেদিন ওই র্যালিতে ছিলাম, আমাদের যেন নতুন জন্ম হয়েছে। আমাদের দায়িত্ব জনগণের প্রতি। আর সেই দায়িত্ব যতক্ষণ নিঃশ্বাস আছে, পালন করে যাব। সেটাই হচ্ছে আজকের প্রতিজ্ঞা। ’ ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলায় আহতদের প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আজ ১৮ বছর হয়ে গেল। যারা স্প্লিন্টার নিয়ে বেঁচে আছে, প্রত্যেকেই কিন্তু কষ্ট ভোগ করছে। যত বয়স বাড়ছে ততই তাদের শরীরের যন্ত্রণা বাড়ছে। আমি সবার খোঁজ রাখি। বঙ্গবন্ধু মেমোরিয়াল ট্রাস্ট থেকে তাদের সাহায্য করি। আমার যত দূর সাধ্য করে দিয়েছি। আমি কাউকে ফ্ল্যাট কিনে দিয়েছি। কাউকে জমি কিনে দিয়েছি। ঘর করে দিয়েছি। মাসোহারার ব্যবস্থা করে দিয়েছি। প্রতি মাসে ওষুধ কেনার টাকা দিয়ে যাচ্ছি। কিন্তু তারা যা হারিয়েছে, সেটা তো ফেরত দিতে পারব না। তাদের শরীরের যন্ত্রণা তো প্রশমন করতে পারব না। ’
দেশকে উন্নয়নশীল করেছি, এটাই হয়তো বড় অপরাধ
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমাদের টার্গেট ছিল ২০২১ সালে উন্নয়নশীল দেশে রূপান্তর করব। সেটা আমরা করতে পেরেছি। আমার যে লক্ষ্য ছিল তা অর্জন করেছি। এরপর ভবিষ্যতে বাংলাদেশ যারা চালাবে, সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাবে। উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে যে মর্যাদা পেয়েছি, সেটা কার্যকর করতে হবে। ’ প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশকে আজকে উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত করতে পেরেছি, এটাই হয়তো বড় অপরাধ। ’
সমালোচনা নয়, সহযোগিতাও দরকার
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে বৈশ্বিক অর্থনীতির মন্দার প্রভাব বাংলাদেশে পড়ার প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশ পরিস্থিতি মোকাবেলার প্রচেষ্টা চালাচ্ছে। আজকে বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক মন্দার যে ধাক্কাটা আমাদের দেশে পড়েছে, তা থেকে দেশের মানুষকে কিভাবে আমরা রক্ষা করব, সেটাই আমাদের চিন্তা। এ জন্য সবার সহযোগিতাও দরকার। শুধু সমালোচনা আর কথা বললেই তো হবে না। সবাইকে কাজও করতে হবে, যেন এই ধাক্কা থেকে আমাদের দেশের মানুষ রেহাই পায়, রক্ষা পায়। ’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, সরকার নানা ব্যবস্থা নিচ্ছে। তবে বিদ্যুৎ, পানি ও গ্যাস ব্যবহারে সবাইকে সাশ্রয়ী হতে হবে। তিনি বলেন, বর্তমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতি বিবেচনায় এক কোটি মানুষকে রেশন কার্ড দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার।
নির্বাচন সামনে এলেই চক্রান্ত শুরু হয়
বিএনপিকে নির্বাচনে আনতে বিভিন্ন মহলের চাপের প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বলেন, ‘এখন তাদের (বিএনপি) সঙ্গে বসতে হবে, কথা বলতে হবে, খাতির করতে হবে। তাদের ইলেকশনে আনতে হবে। এত আহ্লাদ কেন আমি তো বুঝি না। বাংলাদেশে কি আর মানুষ নেই? বিদেশিদের কাছে গিয়ে কান্নাকাটি। সেখান (বিদেশিরা) থেকে এসে অনুরোধ করে, কোনোমতে তাদের একটু জায়গা দেওয়া যায় কি না? জায়গা দেবে কি দেবে না সেটা ভাববে জনগণ। সেই সিদ্ধান্ত নেবে বাংলাদেশের জনগণ। তারা আবার সেই সন্ত্রাসের যুগে ফেরত যাবে, নাকি আজকে বাংলাদেশের উন্নয়ন হচ্ছে, সেই উন্নয়নের যুগে থাকবে—এই সিদ্ধান্ত তো জনগণকে নিতে হবে। ’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা তো জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়েছি। যে দলের নেতাই নেই, সাজাপ্রাপ্ত অথবা পলাতক—তারা ইলেকশন করবে কী, আর কিভাবে ভোট পাবে? ভোট কাকে দেখে দেবে এটাই তো প্রশ্ন। এর পরও অনেক চক্রান্ত আছে। নির্বাচন সামনে এলেই শুরু হয়। কিন্তু এ দেশের মানুষের ওপর আমার আস্থা আছে, বিশ্বাস আছে। ’
এ জাতীয় আরো খবর..