×
  • প্রকাশিত : ২০২২-০৮-১২
  • ৫১ বার পঠিত
গত বুধবার দুপুরে রাজধানীর বনানীতে জাতীয় পার্টির (জাপা) চেয়ারম্যানের কার্যালয়ে যান কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র ও বিএনপি থেকে সদ্য বহিষ্কৃত নেত মো. মনিরুল হক সাক্কু। সূত্র জানায়, ওইদিন জাপা চেয়ারম্যান জি এম কাদেরের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে প্রায় আধা ঘণ্টা কথা বলেছেন তিনি। সেখান থেকে বের হয়ে জাপা চেয়ারম্যানের কার্যালয়ের নিচে কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে ফটোসেশনে অংশ নেন সাক্কু।

গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল থেকে ওই ফটোসেশনের একটি ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে।

এরপর থেকে কুমিল্লা নগরীজুড়েই আলোচনা চলছে সাক্কুকে নিয়ে। শুরু হয়ে রাজনৈতিক নানা সমীকরণও।
গত ১৫ জুন অনুষ্ঠিত কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগের আরফানুল হক রিফাতের কাছে হারার পর সাক্কু আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা দিয়েছেন, তিনি আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কুমিল্লা সদর আসন থেকে লড়বেন। এ আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য কুমিল্লা মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহার। জাপার কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে সাক্কুর ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেখার পর কুমিল্লা নগরীতে গুঞ্জন শুরু হয়েছে, সাক্কু কী তাহলে জাতীয় পার্টিতে যোগ দিচ্ছেন? অনেকে বলছেন, জাপায় গেলে বিএনপি থেকে বহিষ্কৃত সাক্কু খুব সহজেই এমপি পদে নাঙ্গলের টিকিট পাবেন। এজন্য দলের চেয়ারম্যানের সঙ্গে দেখা করেছেন। যদিও সাক্কু বিষয়টিকে উড়িয়ে দিয়ে বলেছেন, আমান মাথা খারাপ নাকি যে জাপায় যোগ দেবো! বিএনপি আমার রক্তে মিশে আছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বুধবার দুপুর ১২টা ৩০ মিনিটে সাক্কু বনানীতে জাপা চেয়ারম্যানের কার্যালয়ে যান। এ সময় জাপার চেয়ারম্যান জি এম কাদের ও মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু উপস্থিত ছিলেন। প্রায় আধা ঘণ্টার মতো তারা কথা বলেন।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে জাপার একজন নেতা বলেন, সাক্কুর জনপ্রিয়তা আছে। এজন্য তাকে দলে ভেড়াতে চায় জাপা। জাপায় আসলে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলটি আওয়ামী লীগ ও বিএনপি যার সঙ্গেই জোট করুক না কেন, সাক্কু কুমিল্লা সদর আসন থেকে এমপি প্রার্থী হতে পারবেন। সাক্কুকে কাজে লাগিয়ে কুমিল্লায় ঝিমিয়ে পড়া জাপাকে চাঙ্গা করার কাজে লাগতে চায় দলটি। যদি বিএনপি তার বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার না করে তাহলে তিনি জাপায় আসতেও পারেন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মনিরুল হক সাক্কু ২০০৫ সালের ২১ সেপ্টেম্বর কুমিল্লা পৌরসভার চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। তখন তিনি কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ও কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা যুবদলের সভাপতি ছিলেন। ২০০৯ সালের ২৪ নভেম্বর তিনি কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও পরবর্তী সময়ে বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য হন। ২০১২ সালের ৫ জানুয়ারি ও ২০১৭ সালের ৩০ মার্চ টানা দুই মেয়াদে কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের মেয়র নির্বাচিত হন। দলীয় কার্যক্রমে অনুপস্থিত থাকায় ২০২১ সালের অক্টোবর মাসে তাকে বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। তবে তার কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক পদ ছিল। দলের সিদ্ধান্তের বাইরে এবারের সিটি করপোরেশন নির্বাচনে অংশ নেওয়ায় তাকে আজীবনের জন্য দল থেকে বহিষ্কার করে বিএনপি।

বৃহস্পতিবার জাতীয় পার্টিতে যোগ দেওয়ার গুঞ্জন নিয়ে জানতে চাইলে মনিরুল হক সাক্কু বলেন, আমার মাথা খারাপ হয়েছে নাকি যে জাতীয় পার্টিতে যোগ দেবো! আমার চৌদ্দগুষ্ঠি বিএনপি করে। আমি বিএনপির তৃণমূলের নেতা। আমি কেন জাপায় যোগ দেব? আমি চার দশকের বেশি সময় ধরে বিএনপি করি। বিএনপিতে ছিলাম, আছি এবং থাকবো। কারণ বিএনপি আমার রক্তে মিশে আছে।

সাক্কু বলেন, গত কয়েকদিন ধরেই জাপার চেয়ারম্যান আমাকে তার সঙ্গে দেখা করার অনুরোধ করছিলেন। একজন সম্মানিত ব্যক্তি আমাকে এতবার ডাকছেন, তাই আমি দেখা করতে গিয়েছি। সেখানে আমি একাই ছিলাম। জাপার চেয়ারম্যান কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ইভিএমের ফল কারচুপির বিষয়ে জানতে চেয়েছেন। আমি তাকে বিস্তারিত বলেছি। এর বেশি কোনো কথা হয়নি।

এদিকে, বৃহস্পতিবার বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদের সাংবাদিকদের বলেন, সাক্কু একজন রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব। তিনি রাজনীতি করতে চান। আমার সঙ্গে রাজনৈতিক বিভিন্ন বিষয়ে তার আলোচনা হয়েছে। তার ইচ্ছা এবং আমাদের দলের রাজনৈতিক বিভিন্ন কর্মকাণ্ড নিয়ে কথা হয়েছে।

সাক্কু জাপায় যোগ দিলে দলের পক্ষ থেকে স্বাগত জানানো হবে জানিয়ে জিএম কাদের জানান, তার মতো নেতারা জাতীয় পার্টিতে আসলে কুমিল্লায় তাদের দল নতুন করে প্রাণ পাবে। কুমিল্লায় আমাদের শক্তিশালী প্রার্থী দরকার, যাদের জনপ্রতিনিধি হিসেবে কাজ করার অভিজ্ঞতা আছে। জনগণ পছন্দ করে বা গ্রহণযোগ্যতা আছে। এমন নেতা থাকলে জাপা সমৃদ্ধশালী হবে বলে মনে করেন তিনি।

নিউজটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর..
ফেসবুকে আমরা...
ক্যালেন্ডার...

Sun
Mon
Tue
Wed
Thu
Fri
Sat