ক্লেরমোঁ টুইটার অ্যাকাউন্ট থেকে টুইটটি করা হয়, ‘৮৭—মেসির অবিশ্বাস্য গোল! পারেদেসের পাস বুক নিয়ে নিয়ন্ত্রণে নিয়ে গোল করলেন। গোটা স্টেডিয়াম উঠে দাঁড়িয়ে অভিবাদন জানানোর জন্য তা যথেষ্ট। সেটাও এমন একজনের জন্য যিনি এখনো বিশ্বের অন্যতম সেরা খেলোয়াড়। স্লোগান উঠেছে মেসি! মেসি!’
লিগ আঁ—ক্লেরমোঁর জন্য হাতের তালুর মতো চেনা প্রতিযোগিতা নয়। নিজেদের ১১১ বছরের ইতিহাসে গত মৌসুমে প্রথমবারের মতো ফ্রান্সের শীর্ষ লিগে উঠে আসে ক্লাবটি। এ মৌসুমে লিগে প্রথমবার মাঠে নেমেছিল কাল রাতে। প্রতিপক্ষ গত মৌসুমের চ্যাম্পিয়ন পিএসজি।
স্বাভাবিকভাবেই, চ্যাম্পিয়নদের বিপক্ষে ভালো করতে গ্যালারিতে বসে গলা ফাটানোর কথা ক্লেরমোঁর সমর্থকদের। কিন্তু মেসি যেন কাল সব আওয়াজ কেড়ে নিয়েছিলেন! ঘরের মাঠে পিএসজির কাছে ৫-০ গোলে বিধ্বস্ত হয়েও ক্লেরমোঁর সমর্থকেরা সম্ভবত তৃপ্তি নিয়েই বাড়ি ফিরেছেন। এমন চোখ ধাঁধানো খেলা, এমন গোল যে প্রতিদিন দেখা যায় না!
অন্যদিকে পিএসজি নিজেদের সেরা দুই তারকার কাছ থেকে সে পারফরম্যান্সটাই দেখল লিগে নিজেদের প্রথম ম্যাচে। মেসি জোড়া গোল করেছেন, গোল পেয়েছেন নেইমারও। আশরাফ হাকিমি ও মারকিনিওসকে গোল বানিয়েও দিয়েছেন ব্রাজিল তারকা।
তবে ম্যাচের সেরা মুহূর্তটি নেইমারের ছটায় জন্ম নেয়নি।
৮৭ মিনিটে মাঝ মাঠ থেকে ক্লেরমোঁর বক্সে বাতাসে ভাসানো পাস দেন পিএসজির আর্জেন্টাইন ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডার লিয়ান্দ্রো পারেদেস। বলটা সামনে পড়বে বুঝতে পেরে ক্লেরমোঁর দুই ডিফেন্ডারের মাঝ দিয়ে এগিয়ে যান মেসি।
একদম জায়গামতো দাঁড়িয়ে বুক দিয়ে এমনভাবে রিসিভ করলেন যেন বলটা তাঁর বাধ্যগত দাস! পেছনেই ক্লেরমোঁর গোলপোস্ট, তার উল্টো দিকে মুখ করে দাঁড়িয়ে মেসি এবং বলটা ঠিক বুক সমান উচ্চতায়—এমন পরিস্থিতিতে ‘গ্রেট’রা যেমন হন, প্রতিভার ছটায় অসম্ভবকেও সম্ভব বানিয়ে ছাড়েন, মেসিও ঠিক তাই করলেন। বাইসাইকেল কিক এবং গোল!
ফুটবলপ্রেমীরা যদি এই গোল দেখে যদি তৃপ্ত হন, তাহলে নিশ্চিতভাবেই একজনের ঈর্ষা হবে। কিলিয়ান এমবাপ্পে। চোটের কারণে ম্যাচটি খেলতে পারেননি পিএসজি তারকা। মাঠে থাকলে পিএসজির গোল উৎসবে হয়তো তাঁরও অবদান থাকত, কে জানে বাইসাইকেল কিকে গোলটা হয়তো তিনিও করতে পারতেন! আসলে পৃথিবীর যেকোনো ফুটবলারই জীবনে অন্তত একবার এমন একটা গোল করতে চাইবেন।
তাহলে ওই পাসটা? সেটাও ওই গোলটার চেয়ে কম কিছু না। বরং প্রতিভার দীপ্তি পাসেই ফুটেছে বেশি। বিতর্কও হচ্ছে। মেসি কি ইচ্ছে করেই অমন পাস দিয়েছেন? নেইমার যে ঠিক পেছনেই আছেন তা কি মেসি আগেই বুঝতে পেরেছিলেন? এমন সব প্রশ্ন উঠছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে।
ম্যাচের তখন ৯ মিনিট। বাঁ প্রান্ত থেকে পাবলো সারাবিয়ার ক্রস ধরতে ক্লেরমোঁর বক্সের মধ্যে একটু এগিয়ে যান মেসি। পেছনেই প্রতিপক্ষ দলের ডিফেন্ডার এবং তাঁর পেছনে নেইমার, ডানে একটু সরে এসেছিলেন ব্রাজিল তারকা। সারাবিয়ার ক্রস মাটি কামড়ানো ছিল না। বলটা একটু উঠে এসেছিল। মেসি করলেন কী, পায়ের পাতা দিয়ে চলন্ত বলের নিচে একটু টোকা দিলেন।
ব্যস, বলটা বাধ্যগত ছাত্রের মতো সবাইকে চোয়াল ঝুলিয়ে দিয়ে পড়ল নেইমারের পায়ে। ব্রাজিল তারকা গোল করতে ভুল করেননি। তবে কেউ কেউ অনুযোগ করে বলতে পারেন, এই গোলটা নেইমারের নয়, মেসির হওয়া উচিত!
একে তো বন্ধু, তারওপর সতীর্থ—অমন পাসের কৃতজ্ঞতা স্বীকার হিসেবেই হয়তো ৮০ মিনিটে মেসিকে দিয়ে গোল করান নেইমার। ২৬ মিনিটে হাকিমির গোল বিদ্যুৎগতির প্রতি আক্রমণ থেকে। আর ৩৮ মিনিটে নেইমারের ফ্রি কিক থেকে হেডে করা গোলটি মারকিনিওসের।
পিএসজি কোচ হিসেবে লিগে এটাই প্রথম ম্যাচ ক্রিস্তোফ গালতিয়েরের। মৌসুম শুরুর আগে পার্ক দে প্রিন্সেসের ক্লাবটিতে যোগ দেওয়া ভিতিনহা, হুগো একিতেকে ও নর্দি মুকিয়েলেকে এ ম্যাচে মাঠে নামিয়েছেন গালতিয়ের। ১৬ বছর ৪ মাস ২৯ দিন বয়সী মিডফিল্ডার ওয়ারেন জায়ার-এমেরিকেও অভিষেকের সুযোগ করে দেন গালতিয়ের।
প্রতিযোগিতামূলক ম্যাচে পিএসজির হয়ে মাঠে নামা সবচেয়ে কম বয়সী খেলোয়াড় এখন ওয়ারেন জায়ার-এমেরিকে। জয়ের পর স্বাভাবিকভাবেই সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন গালতিয়ের, ‘সন্তুষ্টির প্রথম কারণ জয়। পাঁচ গোল করাও গুরুত্বপূর্ণ, কোনো সুযোগ হাতছাড়া হয়নি এবং সবাই উঁচুমানের ফুটবল খেলেছে।’
মেসি-নেইমারদের খেলার মান কেমন ছিল, তা সবচেয়ে ভালো টের পেয়েছেন ক্লেরমোঁর সমর্থকেরা। প্রতিপক্ষের খেলা থেকে আনন্দ নিয়ে বাড়ি ফেরার উপলক্ষ যে প্রতিদিন আসে না!
এ জাতীয় আরো খবর..