×
  • প্রকাশিত : ২০২২-০৮-০২
  • ৬৪ বার পঠিত
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সংরক্ষণে সরকারের পদক্ষেপের বিরুদ্ধে হারিকেন নিয়ে আন্দোলন করায় বিএনপি নেতাদের কঠোর সমালোচনা করেছেন। তিনি বিদ্রুপাচ্ছলে বিএনপি নেতাদের ‘হাতে হারিকেন ধরিয়ে দেওয়া’ উচিত বলে মন্তব্য করেন। জানান, জনগণের নিরাপত্তার ব্যবস্থা তার সরকার করবে।

শেখ হাসিনা গতকাল শোকাবহ আগস্ট উপলক্ষে ধানমণ্ডিতে বঙ্গবন্ধু ভবনের সামনে কৃষক লীগের অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে এ কথা বলেন।

স্বাধীনতা-পরবর্তী বাংলাদেশে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সরকারকে বিব্রত করতে কুড়িগ্রামের আলোচিত বাসন্তীকে জাল পরিয়ে ছবি তুলে তা প্রচার করার সমালোচনা করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট নির্মমভাবে বঙ্গবন্ধুকে হত্যার প্রসঙ্গ তুলে বলেন, ‘আমার বাবার রক্ত নিয়েও তো বাসন্তীদের ভাগ্যের কোনো পরিবর্তন হয়নি। তাহলে কেন হত্যা করা হলো?’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমি দেখেছি, আমাদের বিএনপি নেতারা হারিকেন নিয়ে আন্দোলন করছে। তো তাদের হাতে হারিকেনই ধরিয়ে দিতে হবে, তাদের সবার হাতে হারিকেন ধরিয়ে দেন। আর দেশের মানুষকে আমরা নিরাপত্তা দেব এবং দেশের মানুষ যাতে ভালো থাকে, সেই ব্যবস্থা নেব। ’

বিএনপির আমলে দেশের মানুষের ভোট দেওয়ার ‘অধিকারটাই ছিল না’ মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘দুর্ভাগ্য হলো, একটা মিলিটারি ডিক্টেটর অবৈধভাবে সংবিধান লঙ্ঘন করে ক্ষমতায় থেকে যে দল গঠন করেছিল ক্ষমতার উচ্ছিষ্ট বিলিয়ে, তাদের কাছে এখন নানা রকম নীতির কথা শুনতে হয়। যারা এই বাংলাদেশটাকে বানিয়েছিল অস্ত্র চোরাকারবারির একটা জয়গা, সন্ত্রাসীর দেশ, জঙ্গিবাদের দেশ, বাংলা ভাই সৃষ্টির দেশ। ’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের কথা ছিল প্রতিটি ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছে দেওয়ার, আমরা দিয়েছি। আজকে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সাশ্রয়ে বিশ্বের প্রতিটি দেশই—আমেরিকা হোক, ইংল্যান্ড হোক বা আমাদের প্রতিবেশী ভারত হোক সবাই এদিকে নজর দিয়েছে। এ বিষয়টি সবার মাথায় রাখতে হবে। যখন উন্নত দেশগুলো হিমশিম খায় তখন আমরা আগাম ব্যবস্থা নিয়েছি যেন ভবিষ্যতে কোনো বিপদে না পড়ি, সাশ্রয়ী হয়েছি। আর সাশ্রয়ী হওয়ার অর্থ এই নয় যে এখান থেকে লুটপাট করে খেয়েছি। লুটপাট তো বিএনপিই করে গেছে। আমরা সেই লুটপাট বন্ধ করে উন্নতি করেছি, নইলে কিভাবে মাত্র তিন বা সাড়ে তিন হাজার মেগাওয়াট থেকে আজকে ২৪ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনে সক্ষমতা অর্জন করেছি। ’

করোনাভাইরাস এবং রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে বিশ্ব মন্দার চিত্র তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, শুধু বাংলাদেশ নয়, সমগ্র বিশ্বেই এমনকি অনেক উন্নত দেশে অর্থনৈতিক মন্দা চলছে। বিশ্বব্যাপী মন্দার প্রভাব মোকাবেলার প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমাদের আওয়ামী লীগের প্রতিটি নেতাকর্মীকে এই আহ্বান জানাব, দেশবাসীর কাছে যেতে হবে এবং আমাদের খাদ্য যে আমরা নিজেরা উৎপাদন করব, সে কথাটা জানাতে হবে। ’

১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের হত্যার পর ছয় বছর নির্বাসিত জীবন কাটান শেখ হাসিনা। ১৯৮১ সালে তিনি দেশে ফেরেন। সে সময়ের স্মৃতিচারণা করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘দেশে ফেরার পর আমি দেখি বিভিন্ন জায়গায় দুর্ভিক্ষ-মঙ্গা যেন নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। ’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘যে অপবাদ দিয়ে ১৫ আগস্ট ঘটানো হলো তার মাধ্যমে দেশের কী পরিবর্তন তারা আনল, সেটা দেখার ইচ্ছা ছিল বলেই আমি কুড়িগ্রামের চিলমারী গিয়ে তিন মাইল হেঁটে কাদাপানি মাড়িয়ে, মেঠোপথ ভেঙে সেই বাসন্তীর বাড়ি গিয়ে দেখেছি, ছিন্ন কাপড়ে বাসন্তীকে। তার মা অসুস্থ, একটি বেড়ার চালার নিচে কোনো মতে পড়ে আছে। তাঁকে ঘরও বলা যায় না। মাছি ভনভন করছে। ’

শেখ হাসিনা বলেন, ২০ টাকা যখন মোটা কাপড়ের দাম তখন প্রায় দেড় শ টাকা মূল্যের জাল পরিয়ে বাসন্তীর ছবি তুলে সে ছবি দিয়ে দেশে-বিদেশে ব্যাপক অপপ্রচার চালানো হয়। আন্তর্জাতিক চক্রান্তে ’৭৪-এর সেই দুর্ভিক্ষ হয়েছিল। জাতির পিতা সেই দুর্ভিক্ষ মোকাবেলা করে চালের কেজি ১০ টাকা থেকে তিন টাকায় নামিয়ে এনেছিলেন। আর দ্বিতীয় বিপ্লবের ডাক দিয়ে যখন দেশকে সমৃদ্ধির পথে নিয়ে যাচ্ছিলেন, তখনই তাঁকে হত্যার পথ বেছে নেয় ঘাতক চক্র।

শেখ হাসিনা বলেন, পঁচাত্তরে জাতির পিতাকে সপরিবারে নির্মমভাবে হত্যার পর এ দেশে খুনি ও যুদ্ধাপরাধীদের যে রাজত্ব গড়ে উঠেছিল, সেভাবে বাংলাদেশের মানুষের ভাগ্য নিয়ে আর কেউ যেন ছিনিমিনি খেলতে না পারে।

সাম্প্রতিক গণশুমারি প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা চাই প্রতিটি পরিবার যেন একটি সুখী পরিবার হয় এবং সবাই যেন সুন্দরভাবে বাঁচতে পারে, প্রতিটি ছেলেমেয়ে সুন্দরভাবে লেখাপড়া করতে পারে। ’

শোকের মাস আগস্টের কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে গতকাল কৃষক লীগের স্বেচ্ছায় রক্তদান কর্মসূচি ও আলোচনাসভার আয়োজন করা হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন কৃষক লীগের সভাপতি সমীর চন্দ। বক্তব্য দেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য বেগম মতিয়া চৌধুরী ও আব্দুর রাজ্জাক, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, কৃষিবিষয়ক সম্পাদক ফরিদুন্নাহার লাইলী, সাংগঠনিক সম্পাদক আফজাল হোসেন, দপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া, কৃষক লীগের সাধারণ সম্পাদক উম্মে কুলসুম স্মৃতি প্রমুখ। অনুষ্ঠানের শুরুতে জাতির পিতাসহ ১৫ আগস্টের শহীদদের স্মরণে দাঁড়িয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।

শোকাবহ আগস্টের প্রথম দিনে ধানমণ্ডিতে বঙ্গবন্ধু ভবনের সামনে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরসহ কয়েকজন কেন্দ্রীয় নেতা। বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে দলীয় কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে কোরআন খতমের আয়োজন করে যুবলীগ। এ ছাড়া আগস্টের প্রথম প্রহর রাত ১২টা এক মিনিটে বঙ্গবন্ধু ভবনের সামনে আলোর মিছিল করে স্বেচ্ছাসেবক লীগ।

নিউজটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর..
ফেসবুকে আমরা...
ক্যালেন্ডার...

Sun
Mon
Tue
Wed
Thu
Fri
Sat